Showing posts with label FACEBOOK. Show all posts
Showing posts with label FACEBOOK. Show all posts

Sunday, 31 December 2023

What to do if the Facebook Account is Hacked ?

 Facebook Account is Hacked

In the popular social media Facebook, personal information, personal interactions with different people are also stored. If the Facebook account is hacked for some reason, cyber criminals can collect this information. Sometimes unsolicited posts from hacked accounts can lead to embarrassing situations. Usually Facebook account is hacked due to use of weak password, clicking on harmful links.

How to understand whether Facebook account is hacked or not:


When a Facebook account is hacked, one can notice unwanted posts as well as unusual activities from the account.
If the Facebook account is hacked, most of the time it is not possible to enter the Facebook account. Apart from this, various Facebook information such as birth year, name, e-mail and password are changed. Unsolicited messages go viral and friend requests are sent to strangers.

what to do:


If you notice suspicious activity on your Facebook account, you need to take immediate action.
Let's take a look.


Change password:


If the Facebook account is hacked, the first thing to do is to change the password.
To change the password, go to the Facebook app and tap on the profile picture on the top right and go to Settings and Privacy. Then go to Privacy Shortcuts and change your password from Change Your Password under Account Security.

See which devices have Facebook accounts connected to them:

If there is a fear of Facebook account being hacked, you need to verify that the account is logged in on any device.
If the account is accessed from any connected device, account recovery must be attempted from that device.

Report to Facebook:


If you suspect your Facebook account has been hacked, report it immediately.
Report hacked Facebook account by entering this website.

Taking legal action:


Legal action should be taken if Facebook account is hacked.
Complaints should be made to concerned institutions to get legal protection. Source: Reader's Digest

Friday, 29 December 2023

বিদায় বটবৃক্ষ সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (বীর মুক্তিযোদ্ধা)

বিদায় বটবৃক্ষ অগাধ শ্রদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান
(বীর মুক্তিযোদ্ধা)




কিংবদন্তী সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এর মৃত্যুতে

আমরা শোকাহত !!!!


কলেজ শিক্ষক থেকে মন্ত্রী !

বিদায়! স্বাধীন বাংলাদেশের পাঁচ দশকের দাপুটে এক রাজনীতিবিদ। বুক ভরা সাহস, মননে তেজ আর আত্মা ভরা ছিলো কমিটমেন্ট!

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ অঞ্চলের রাজনীতির এক প্রাণপুরুষ ছিলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকালিন কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া এবং অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নাম ছিলো মানুষের মুখে মুখে। ইতিহাসে তারা থাকবেন স্বর্ণাক্ষরে।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয়ের তুরার ঢালুতে ইয়ুথ ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন এই টগবগে ছাত্রনেতা। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে ঐতিহাসিক মিছিলে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তি এই নেতা। শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।

১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর মিন্টু। তার স্মরণে ওই বছর প্রতিষ্ঠা করা হয় আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজ। মতিউর রহমান জামালপুরের নান্দিনা কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছর তিনি কলেজ থেকে কোনো ধরণে পারিশ্রমিক নেননি। উদ্দেশ্য ছিলো শহীদ মিন্টুর নামে কলেজটিকে প্রতিষ্ঠিত করা।

অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ পৌরসভার তিন বারের নির্বাচিত মেয়র।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মতিউর রহমানকে নিয়ে একটি দৈনিকে লিখেছিলেন, তার গায়ের রং তেমন উজ্জ্বল না হলেও মুক্তিযুদ্ধে মতিউরের বুকের রং ছিলো সমুজ্জ্বল।

স্বাধীরতার পরই দায়িত্ব পান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের। এরপর দুই বার সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে টানা ১৮ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে জঙ্গিরা বোমা হামলা করে। সেই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে নিমর্ম নির্যাতন করা হয়।

২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্যে গর্জে উঠেছিলেন এই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তিনি ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনকে ময়মনসিংহে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলেন।

শেখ হাসিনার মুক্তির ইস্যুতে ২০০৮ সালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি অনুষ্ঠানের প্রটোকল ভেঙে প্রথম দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মুক্তি ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন ছাড়া এই সভায় কোনো আলোচনা হবে না। আঙুল তুলেছিলেন তখনকার সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দিকে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বক্তব্যের পরই ঘুরে যায় সভার পরিবেশ। শেখ হাসিনার মুক্তির গতি দ্রুত ত্বরান্বিত হতে থাকে ওই সভা থেকেই।

মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বার বার গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন বহু বছর। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দুই বার ২৩ মাস জেল খাটেন৷

দীর্ঘ সময়ে বুকের উত্তাপে আগলে রেখেছেন ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ২০১৪ সালে দায়িত্ব পান ধর্ম মন্ত্রীর। তার মন্ত্রীত্ব লাভের মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহবাসী প্রথম পুর্ণ মন্ত্রীত্বের স্বাদ পেয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন।

৮১ বছর বয়সে নিভে গেলো লড়াকু ও পোড় খাওয়া বর্ণিল রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের জীবন প্রদীপ।


আমরা ময়মনসিংহবাসী শোকাহত।


আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ

Tuesday, 21 November 2023

PDF (Portable Document Format)

 Why PDF Submissions Are Important For SEO?

 

To get traffic from file submission websites, you’ll need to submit PDF, PPT, or DOC files. Not only that, but it also builds backlinks, which lets you climb the SERP rankings ladder. PDF submissions are critical for boosting the online business’s ranking.

It’s because of one of the content marketing tactics that SEO experts have used to promote their content and obtain do-follow backlinks from the related website.

 

PDF (Portable Document Format)


Use the following concept to submit a PDF:


1.  Use unique content
2.    Image/images can be used
3.    Don’t stuff keywords
4.    Use rich keywords (discussed above)
5.    You can also use fresh keywords in the description
 









Guidelines for a Successful PDF Submission:

 

·       A good title is needed for a PDF document. It can, however, properly protect the context of the content. It will, however, separate all the words, spaces, underbars, and other elements as desired.

·       Always ensure that your PDF file is a readable text file. Doing so will enable various search engines to attempt to read it.

·       PDF files will not only improve your online marketing but will also draw more potential customers to your website. You can conveniently connect to article directories, blogs, social media posts, and other websites.

·       In case your PDF carries graphics or images, you should add Alt Text to it. Or else, search engineers may fail to understand it.

·       Certain sites’ PDF submission lists enable you to add tags to improve visibility. If the platform where you’re posting still helps you to do so, take advantage of it.

·       If you need a laptop for digital marketing and you are a student, then you must check STARTECH and get the laptop at the best price.

 Report: Imon Pandit

Monday, 31 July 2023

বাংলাদেশ অগ্নিবীর কর্তৃক স্বাধ্যায় কোর্স |

 




বাংলাদেশ অগ্নিবীর কর্তৃক স্বাধ্যায় কোর্স এর কিছু নমুনা:


শুরুতে শান্তি মন্ত্র দিয়ে শুরু করছি -

 

ও৩ম্ সহনাববতু , সহনৌ ভুনক্তু , সহ বীর্যং করবাবহৈ। তেজস্বীনাবধীতমস্তু , মা বিদ্বিষাবহৈ ।।

 

ও৩ম্  শান্তিঃ , ও৩ম্ শান্তিঃ , ও৩ম্ শান্তিঃ।।

 

অর্থাৎ‌ ,

(পরমাত্মা) আমাদের উভয়কে (আচার্য ও বিদ্যার্থী) সমভাবে রক্ষা করুন এবং উভয়কে তুল্যভাবে বিদ্যাফল দান করুন; আমরা যেন সমভাবে সামর্থ্য অর্জন করতে পারি ; আমাদের উভয়েরই লব্ধবিদ্যা সফল হোক ; আমরা যেন পরস্পরকে বিদ্বেষ না করি । ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক ।

 

বেদ চারটি অংশে বিভক্ত ।

প্রথম অংশটি হল জ্ঞানকাণ্ড যাতে মহাবিশ্বের সকল কিছু সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করা হয়েছে যাতে আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারি আর এই প্রথম অংশটির নাম ঋগ্বেদ ।

দ্বিতীয় অংশটি কর্মকাণ্ড অর্থাৎ এতে আমরা প্রথম অংশে যে জ্ঞান অর্জন করেছি সেগুলোকে কিভাবে বাস্তব কর্মে রুপান্তরিত করা যায় তা আলোচিত হয়েছে আর এই দ্বিতীয় অংশের নাম যজুর্বেদ ।

তৃতীয় অংশ হল উপাসনাকাণ্ড যাতে আমরা কিভাবে ঈশ্বর এর উপাসনা করতে পারি এবং কিভাবে প্রথম দুইটি অংশকে সমন্বয় করে আনন্দে দিনযাপন করতে পারি তাই এই অংশের আলোচ্য বিষয় । এই তৃতীয় অংশের নাম সামবেদ ।

প্রথম তিনটি অংশের সমন্বয় করে যে অংশে সর্বপ্রকারের সংশয় নিবৃত্ত করা হয়েছে তাই হল অথর্ববেদ l

 

একনজরে চারবেদের কিছু তথ্য-

 

ঋগ্বেদ :-

প্রধান আলোচ্য বিষয়বস্তু - পরমাত্মা , আত্মা ও প্রকৃতি । এখানে বর্ণিত হয়েছে ঈশ্বরের হাজারো গুণাগুণ , বৈশিষ্ট্য ।

 

ইহলৌকিক ও পরলৌকিক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান ।

 

তাছাড়া আছে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, গ্রহ বিজ্ঞান, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব,অন্যান্য জ্ঞান ইত্যাদি । আবার বস্তুর (ক্ষেত্রবিশেষে ) ফিজিকাল , মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচুয়াল ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করে বেদের এই প্রথম অংশটি। ঋগ্বেদ এর মন্ত্র সংখ্যা ১০৫৫২ টি যেগুলোকে মণ্ডল নামক ১০ টি অধ্যায়ে এবং প্রতিটি মণ্ডল সূক্ত নামক অনেকগুলো উপ-অধ্যায় এ বিভক্ত ।

 

যজুর্বেদ :-

 

মানুষের মনোজাগতিক বিভিন্ন দিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক আচার-আচরণ ও কর্তব্য নিয়ে  ঈশ্বরের  গুনাগুন , উপাসনা প্রদ্ধতী আলোচনা করে যজুর্বেদ । মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করে তাকে জীবনের পরম উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভের জন্য করণীয় কার্যবিধি আলোচিত হয়েছে । যজুর্বেদ এর ৪০টি অধ্যায় ।

 

মোট মন্ত্রসংখ্যা ১৯৭৫ টি ।

 

সামবেদ :-

 

প্রধানত জীবন- মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং মোক্ষ লাভের জন্য আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্মের কথা বলা আছে । সৃষ্টির বর্ণনা , ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণের বর্ণনা এবং আধ্যাত্মিক গুণাবলী অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে । সামবেদের ৩ টি ভাগ-- পূর্বার্চিক , মহানাম্নিআর্চিক এবং উত্তরার্চিক ।

 

মোট মন্ত্রের সংখ্যা ১৮৭৫ ।

 

সামবেদের রেফারেন্স দেয়ার তিনটি উপায় আছে ।

 

এক, সরাসরি মন্ত্রের নম্বর ।

 

দুই , আর্চিক লিখে প্রপাঠক , অর্ধপ্রপাঠক , দশতি , মন্ত্র এই চার সংখ্যার রেফারেন্স ।

 

তিন , অধ্যায় খণ্ড মন্ত্র ভিত্তিক রেফারেন্স।


 

 

অথর্ববেদ :-

 

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান , পদার্থবিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র , গণিত , গাণিতিক জ্যোতিষ বিদ্যা, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব ,  চিকিৎসা বিদ্যা ( বিশেষ করে শল্য এবং ভেষজ চিকিৎসা ) কৃষি , কারিগরী , যুদ্ধ বিদ্যা , উড্ডয়নযান বিদ্যা , রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান , অর্থনীতি প্রধান আলোচ্য বিষয় ।

 

✅   অথর্ববেদকে ব্রহ্মবেদ ও বলা হয় । এটি ২০টি কাণ্ডে বিভক্ত । এর মন্ত্রসংখ্যা ৫৯৭৭ ।

 

️ অর্থাৎ চার বেদের মোট মন্ত্রসংখ্যা - দাঁড়ায়-১০৫৫২+১৯৭৫+১৮৭৫+৫৯৭৭=২০৩৭৯ টি ।

বেদ সংহিতা আর বেদ কি একই জিনিস ?

উত্তরঃ হ্যাঁ

 

✅    চারবেদ কেন ঐশ্বরিক পড়ে নিন - 👇

1)http://back2thevedas.blogspot.com/2017/12/blog-post_13.html?m=1

2) http://back2thevedas.blogspot.com/2017/04/blog-post.html?m=1#more

3)http://back2thevedas.blogspot.com/2017/03/blog-post_25.html?m=1#more

4) http://back2thevedas.blogspot.com/2017/02/blog-post_23.html?m=1#more

 

উপনিষদ এর সাথে বেদের সম্পর্ক কী ?

 

উপনিষদ হলো বৈদিক ঋষি গণের শিষ্যের সাথে বিভিন্ন আলোচনা ।

 

বেদের বিভিন্ন বিষয়কে ঋষিগণ আলোচনা করছেন উপনিষদে তাদের শিষ্যদের নিকট ।

আর ব্রাহ্মণ আরণ্যক এগুলা কী গ্রন্থ , এগুলার সাথেই বা বেদের সম্বন্ধ কী ?

 

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ :-

বেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দর্শন সম্পর্কে  ব্যাখ্যা প্রদানকারী গ্রন্থসমুহ । হিন্দু বিবাহের বিখ্যাত বাক্যটি এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকেই নেয়া ।

 

যদেতহৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম॥

যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব॥

 

মন্ত্র ব্রাহ্মণ [সামবেদীয়]

 

অনুবাদঃ তোমার হৃদয় আমার হোক ,আমার হৃদয় তোমার।

 

প্রধান ব্রাহ্মণ গ্রন্থসমূহ হল-

 

ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)

কৌষিতকি ব্রাহ্মণ( ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)

শতপথ ব্রাহ্মণ(যজুর্বেদ সম্বন্ধীয়)

 মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ (সামবেদ সম্বন্ধীয়)

ছান্দেগ্য ব্রাহ্মণ(সামবেদ সম্বন্ধীয়,যার একটি অংশ ছান্দেগ্য উপনিষদ নামে পরিচিত)

গোপথ ব্রাহ্মণ (অথর্ববেদ সম্বন্ধীয়)

 

আরণ্যক :-

 

প্রধানত বেদের কর্মকাণ্ড এবং কিছুটা ক্ষেত্রে বেদের জ্ঞানকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে যে গ্রন্থসমূহ তাই আরণ্যক । আরণ্যক শব্দটি অরণ্য হতে এসেছে । অনেকে মনে করেন অরণ্যে রচিত হয়েছে বলে এদের নাম আরণ্যক । আবার অনেকে মনে করেন বানপ্রস্থ(যে আশ্রম ব্যবস্থায় লোকে অরণ্যবাস করে) এর জীবনব্যাবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেই  এর নাম আরণ্যক । আরণ্যক সমূহ মূলত ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের ই নির্বাচিত অংশবিশেষ ।

 

বেদ কী এই দুই ভাগ অর্থাৎ জ্ঞান কাণ্ড ও কর্মকাণ্ডেই বিভক্ত ?

 

👉বেদ মাত্রেই জ্ঞান ও কর্ম উভয় কাণ্ডই ।

 

✅   উপনিষদ হল ব্রাহ্মণ ও আরণ্যকের কিছু নির্বাচিত অংশ বিশেষ ।

 

যেমন শতপথের ১৪ তম কাণ্ডের লাস্টের ৬ অধ্যায় হল বৃহদারণ্যক , ঐতরেয় আরণ্যকের অংশ ঐতরেয় উপনিষ, ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের লাস্টের ৮ প্রপাঠক ছান্দোগ্য উপনিষদ ।

একমাত্র ঈশোপনিষদ যজুর্বেদের ৪০ তম অধ্যায় যা কিনা সরাসরি বেদ তথা সংহিতার অংশ ৷

 

ব্রাহ্মণ গুলো তাহলে স্বতন্ত্র ? 

হ্যাঁ ।


📖' উপনিষদ '

বেদের অন্তে যে দর্শন পাওয়া যায় তাই বেদান্ত তথা উপনিষদ । উপনিষদ শব্দের অর্থ নিকটে এসে শোনা । প্রাচীন মহর্ষিদের তপোবনে গুরুগৃহে গুরুর নিকটে এসে শিষ্যদের প্রশ্ন ও গুরু কর্তৃক প্রদত্ত সেই প্রশ্নসমূহের উত্তর উপনিষদ এর আলোচ্য বিষয়বস্তু । বৈদিক দর্শনের মুকুটরুপ এই গ্রন্থসমূহকে শোপেনহাওয়ার , জোসেফ শেলিং ,এমারসন , থরো সহ অসংখ্য  পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ “মানবজ্ঞানের সর্বোচ্চ উৎকর্ষের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ।

 

উপ' তথা 'নি' উপসর্গপূর্বক 'ক্বিপ্' প্রত্যয়ান্ত 'সদ্' ধাতু দ্বারা উপনিষদ্ শব্দ নিষ্পন্ন হয়  'সদ্' ধাতুর তিনটি অর্থ হয় - বিশরণ (নাশ), গতি (প্রাপ্তি ) তথা অবসাদন (অন্ত) । এজন্য উপনিষদের অর্থ হচ্ছে - সেই জ্ঞান যার দ্বারা অবিদ্যার নাশ হয়ে আত্মজ্ঞানের প্রাপ্তি এবং দুঃখের অন্ত হয় । কিছু বিদ্বানদের মত অনুসার 'সদ্' ধাতুর সাথে 'নি' উপসর্গ যোগে 'নিষীদতি' আদি প্রয়োগের আধারে জিজ্ঞাসুদের ব্রহ্মবিৎ গুরুর নিকটে (উপ) বসে ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাও উপনিষদ্ শব্দ দ্বারা অভিপ্রেত ।

 

🔸 মূখ্য বা প্রধান বৈদিক উপনিষদ ১১ টি -

 

ঈশোপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক)

কেনোপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক)

প্রশ্নোপনিষদ ( অথর্ববেদ ভিত্তিক )

মাণ্ডুক্য উপনিষদ (অথর্ববেদ ভিত্তিক)

মুণ্ডক উপনিষদ ( অথর্ববেদ ভিত্তিক )

ঐতরেয় উপনিষদ ( ঋগ্বেদ ভিত্তিক )

তৈত্তিরীয় উপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক )

কঠোপনিষদ (যজুর্বেদ ভিত্তিক)

ছান্দোগ্য উপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক)

বৃহদারণ্যক উপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক)

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ( যজুর্বেদ  ভিত্তিক)

 

🔹 ব্রাহ্মণের রচয়িতা কারা ?  বিবিধ ঋষি । একক কোন রচয়িতা নেই । প্রগতিশীল ধর্মীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থ । এখানে যেমন জনকের কথাও আছে তেমনি পরিক্ষিতের পরের কথাও আছে ।  ঈশোপনিষদ বাদে বাকি ১০ টাই কি ব্রাহ্মণ গ্রন্থের অন্তর্গত ?  হ্যাঁ  । কিছু কিছু ব্রাহ্মণ পাওয়া যায় না কিন্তু আরণ্যক আছে , ওগুলোকে তাই আরণ্যকের অংশ বলা অধিকতর স্পেসিফিক ।  বৃহদারণ্যক, তৈত্তিরীয় আরণ্যক, কঠ আরণ্যক ইত্যাদি তৈত্তিরীয় উপনিষদ তৈত্তিরীয় আরণ্যকের অংশ ।

 

🔸 বেদাঙ্গ কি ?  উত্তর: বেদের অঙ্গ , অর্থাৎ বেদ সঠিক ভাবে জানতে হলে বা বুঝতে হলে যে এই বেদাঙ্গের জ্ঞান অপরিহার্য এবং বাধ্যতামূলক ।

 

বেদাঙ্গ কয়টি ও কি কি ?

উত্তর: বেদাঙ্গ ৬ টি । যথা: 

শিক্ষা (নীতিবিদ্যা) ।
কল্প (গৃহ্য(গার্হস্থ্য)-শ্রৌত (যজ্ঞের পরশোধণ)-শূল্ব্য (পরিমিতি ও জ্যামিতি)-সূত্রাদি) । ব্যাকরণ (ভাষার পদ বিশ্লেষণ-সংকলন) । 
নিরুক্ত (সূক্তের শব্দার্থ কোষ) ।
ছন্দ (পংক্তির পঠনছন্দ বিষয়ক) ।
জ্যোতিষ, (যজ্ঞাদির জ্যোতির্জ্ঞাননির্ভর কাল (সময়) পরিমাপন) ।

 

-- কল্প

--যেসকল গ্রন্থে বেদোক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহের যেমন যজ্ঞ,হোম,ষোড়শ সংস্কার ইত্যাদির প্রণালী আলোচিত হয় ।

 

ব্যাকরণ

-বৈদিক গ্রন্থসমূহের শব্দপ্রয়োগ এবং অর্থব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে।পাণিনির অষ্টাধ্যয়ী ব্যাকরণ গ্রন্থের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।

 

-- নিরুক্ত

--শব্দের উৎপত্তি ও এর ব্যাবহারবিধি আলোচিত হয় ।

 

ছন্দ-

সা রে গা মা পা ধা নি সা

সা নি ধা পা মা গা রে সা

 

এই সাতটি(কেননা সা ছন্দটি দুইবার উচ্চারিত) স্বরের কথা আমরা কে না জানি ? আমরা যারা গান শুনি বা শুনিনা,দেখি বা দেখিনা,গাইতে পারি বা পারিনা সবাই ই জানি যে যেকোন গানের সুর এই সাতটি স্বর দিয়েই গঠিত হয় ।

কিন্তু আমরা কি জানি যে এই সাতটি স্বর আসলে কি ?

 

🔸 আপনি যখন বেদ পাঠ করতে যাবেন তখন দেখবেন প্রতিটি মন্ত্রের আগে চারটি তথ্য দেয়া থাকে । ওই মন্ত্রের দেবতা তথা বিষয়বস্তু কি,মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি কে,মন্ত্রের ছন্দ কি এবং মন্ত্রের স্বর কি ?

বেদের মন্ত্রসমূহের স্বর মোট সাতটি । এগুলো হল যথাক্রমে ষদ্জ,ঋষভ,গান্ধার,মধ্যম,পঞ্চম,ধৈবত,নিষাদ ।

 

 

 

 

 

মূলত এই নামগুলোর সংক্ষিপ্ত রুপ ই হল আমাদের সা রে গা মা পা ধা নি সা!

 

ষদ্জ (সা)

ঋষভ (রে)

গান্ধার (গা)

মধ্যম (মা)

পঞ্চম (পা)

ধৈবত (ধা)

নিষাদ (নি)

ষদ্জ (সা)

 

মূলত সঙ্গীতশাস্ত্রের উদ্ভব ই হয়েছে পবিত্র সামবেদ থেকে । আর এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে যে বেদাঙ্গশাখা তার নাম ছন্দ ।

 

জ্যোতিষ

-গ্রহ-নক্ষত্রসমূহের গতিবিধি সংক্রান্ত বিজ্ঞান

-উপবেদ

-বৈদিক পরবর্তীযুগে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের বিভিন্ন রচনা এগুলো । মূলত চারভাগে ভাগ করা হয় এদের-

আয়ুর্বেদ-চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করে । যেমন-চরক সংহিতা,সুশ্রুত সংহিতা ।

ধনুর্বেদ - সমরবিদ্যা অথবা যুদ্ধ

বিদ্যা,রণকৌশল,আধ্যাত্মিকতা, কর্ম, কর্তব্য, নাগরিক,

কূটনীতিবিদ্যা ।

গন্ধর্ববেদ ---সঙ্গীত,

প্রাকৃতিক সুরসংক্রান্ত বিদ্যা ।

স্থাপত্যবেদ - স্থাপত্য

বিষয়ক বিদ্যা ।

 

🔸 সূত্র গ্রন্থ

সূত্রগ্রন্থ তিনপ্রকার । শ্রৌত সূত্র যাদের কাজ হল বেদোক্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান পদ্ধতি আলোচনা করা,ধর্মসূত্র,যাদের কাজ হল বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল অনুষ্ঠান ও বিধিবিধানসমূহের আলোচনা করা এবং গৃহ্যসূত্র যা বিভিন্ন সাংসারিক অনুষ্ঠানবিধি যেমন বিবাহ,নামকরণ,জন্ম,মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে । 

ঋগ্বেদ শ্রৌতসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন (৩) পরশুরাম।

গৃহ্যসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন।

ধর্মসূত্র : (১) বশিষ্ঠ সামবেদ

শ্রৌতসূত্র : (১) লাট্যায়ন বা আর্ষেয়কল্প (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয়।

গৃহ্যসূত্র : (১) গোভিল (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয় (৪) খাদির।

ধর্মসূত্র : (১) গৌতম । যজুর্বেদ শ্রৌতসূত্র

 

ধর্মস্মৃতি শাস্ত্র:

মূলত বেদভিন্ন সনাতন ধর্মের যত গ্রন্থ রয়েছে তার সব ই স্মৃতিশাস্ত্র । স্মৃতিশাস্ত্র তার অথোরিটির জন্য শ্রুতি বা বেদের উপর নির্ভরশীল।তবে ধর্মস্মৃতি নামে কিছু গ্রন্থ রয়েছে যাতে হিন্দু ধর্মের আইনকানুন বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে ।


 

সেগুলো হল-

মনুস্মৃতি -- মহর্ষি মনু কর্তৃক রচিত । ১২ টি অধ্যায় রয়েছে এতে ।

যাজ্ঞবাল্ক্য স্মৃতি -- ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য কর্তৃক রচিত । ৩ টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত

 

দর্শনশাস্ত্র

ষড়দর্শন  বেদভিত্তিক ছয়টি দর্শন । ভারতবর্ষে উদ্ভূত দর্শনসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়  আস্তিক ও নাস্তিক । যে দর্শনসমূহ  বেদকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে সেগুলোকে বলা হয় আস্তিক দর্শন । সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এই ছয়টি আস্তিক দর্শন এবং এগুলিকে একত্রে বলা হয় ষড়দর্শন ।

 

নীতিশাস্ত্র

নীতিশাস্ত্র  দর্শনের একটি শাখা যেখানে  নৈতিকতা, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনা করা হয় । তাত্ত্বিক দিকগুলো, যেমন - ভাল-মন্দের সংজ্ঞা এর সাথে প্রায়োগিক দিক, যেমন - মানুষের ভাল বা মন্দ ব্যবহারের সংজ্ঞা-ও এর আলোচ্য বিষয় । মানুষের ব্যবহারগত সম্পর্কের তাৎপর্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে নীতিশাস্ত্র বিকাশ লাভ করেছে । উল্ল্যেখযোগ্য বৈদিক নীতিশাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

 

* বিদুর নীতি

* চাণক্য নীতি

* ভর্তৃহরি

 

ইতিহাস গ্রন্থ   যেসকল গ্রন্থ প্রাচীন বৈদিক সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে তাদের ইতিহাস গ্রন্থ বলা হয় । প্রাচীন মনিষী এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের জীবন থেকে ভালোমন্দ শিক্ষা নেয়া ই এই ইতিহাস গ্রন্থের উদ্দ্যেশ্য ।   ইতিহাস গ্রন্থ দুইটি-  ১। রামায়ণ(মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামচন্দ্রের জীবনী)   এবং  ২। মহাভারত(প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত দুই রাজবংশ কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যকার ধর্মযুদ্ধের ইতিহাস । এছাড়া পরমযোগী যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনীর উল্লেখযোগ্য কথন পাওয়া যায় এতে)

এছাড়া মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অংশ ৭০০ শ্লোক ও ১৮ অধ্যায় বিশিষ্ট  শ্রীমদভগবদগীতা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন শাস্ত্রের এক অনন্য উদাহরণ ।

 

সংক্ষেপে আপনাদের জন্য উপস্থাপন করা হল বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ পরিচয় ।

 

বেদ বিভিন্ন "বিষ্ময়কর" গ্রন্থের ভিত্তি

বেদ বিভিন্ন ধরনের বিষ্ময়কর গ্রন্থ যেমন ভগবৎ গীতা, যোগ দর্শণ এবং উপনিষদ ইত্যাদির ভিত্তি  ৷ আমার এযাবৎ পাঠ করা কোনো গ্রন্থই প্রেরণা, অর্ন্তদৃষ্টি, উদ্দেশ্য ও মূল্য বর্ধন কোনো কিছুতেই এই মানসম্পন্ন বইগুলোর (ভগবৎ গীতা, যোগ দর্শণ এবং উপনিষদ) সমকক্ষ হয়নি ৷

🔸দুই ধরনের বৈদিক সাহিত্য আছে , একটি শ্রুতি অন্যটি স্মৃতি ৷ শ্রুতি শুধুমাত্র বেদ সংহিতাকে বুঝায় ৷ বেদ সংহিতায় আছে জ্ঞান, কর্ম ও উপাসনা আছে ৷ এছাড়া একমাত্র ঈশোপনিষদ হলো যজুর্বেদের ৪০ অধ্যায় তাই এটিও শ্রুতি ৷ কোনো গ্রন্থই শ্রুতি নয় ৷ সকল কিছুই স্মৃতি ৷ বেদ ছাড়া বাকী সকল গ্রন্থই হলো স্মৃতি ৷ তাই অন্যান্য উপনিষদ, রামায়ন, মহাভারত, গীতা, ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলো, মনুস্মৃতি ইত্যাদি সকল গ্রন্থই স্মৃতি ৷

প্রায় সকল স্মৃতি গ্রন্থই প্রক্ষিপ্ততার শিকার ৷ তাই যদি আমরা অন্য কোনো গ্রন্থ থেকে কোনোকিছু বুঝতে না পারি , বা অন্য গ্রন্থগুলোর মাঝে বিরোধ বা বিতর্ক দেখতে পাই , আমরা বেদ সংহিতার দিকে ফিরে যাব এবং বেদের মতামতকেই চুড়ান্ত হিসেবে বিবেচনা করব ৷ সংক্ষেপে, সকল স্মৃতি গ্রন্থকেই বেদের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে ৷

 

★★★ এটা সবার জানা অত্যাবশ্যক - https://www.agniveerbangla.org/2019/05/blog-post.html


১০ টা উপনিষদ কোনটা কোন ব্রাহ্মণ বা আরণ্যকের অংশ ।

 

১টা মূখ্য বা প্রধান বৈদিক উপনিষদ ১১ টি ।

 

১ ঈশোপনিষদ - যজুর্বেদ ৪০ তম অধ্যায়

২ কেনোপনিষদ - সামবেদ তবলকার ব্রাহ্মণ

৩ প্রশ্নোপনিষদ - অথর্ববেদীয় পৈপ্পলাদ শাখা

৪ মাণ্ডুক্য উপনিষদ - ঐ

৫ মুণ্ডক উপনিষদ - ঐ

৬ ঐতরেয় উপনিষদ - ঋগ্বেদ ঐতরেয় আরণ্যকের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪-৬ খণ্ড

৭ তৈত্তিরীয় উপনিষদ - তৈত্তিরীয় আরণ্যকের ৭-৯ প্রপাঠক

৮.কঠোপনিষদ - যজুর্বেদ কঠ শাখা

৯. ছান্দোগ্য উপনিষদ - সামবেদীয় ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের শেষের ৮ প্রপাঠক

১০. বৃহদারণ্যক উপনিষদ  - যজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের  ১৪ তম কাণ্ডের লাস্টের ৬ অধ্যায়

১১.শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ -যজুর্বেদ  তৈত্তিরীয় সংহিতা শাখা

 

আর এইগুলো আরো ব্যাপক প্রমাণ , উদ্ধৃতি ও ব্যাখ্যাসহ পাবেন মৎপ্রণীত ' বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র পরিচয় ' গ্রন্থে ।

 

অনেকেই বলেন, সংহিতা শুধুই অপরাবিদ্যা, আর উপনিষদ শুধুই পরাবিদ্যা । কিন্তু উপনিষদ যদি পরাবিদ্যা হয়, তবে বলা যায় সংহিতাতেও পরাবিদ্যা আছে । আবার সংহিতাকে যদি শুধুই অপরাবিদ্যা বলা হয়, তবে বলতে হবে উপনিষদেও অপরাবিদ্যা আছে । কেননা উপনিষদে সংহিতার অনেক মন্ত্র সরাসরি আছে । যেমনঃ

 

ঈশোপনিষদঃ

-১ নং থেকে ১৭ নং পদ (যজুর্বেদ ৪০তম অধ্যায় এর ১ থেকে ১৭ নং মন্ত্র),

---১৮ নং পদ (যজুর্বেদ ৫/৩৬, ঋগ্বেদ ১/১৮৯/১)

 

কঠোপনিষদঃ

২/১/৮ (ঋগ্বেদ ৩/২৯/২),

২/২/২ (যজুর্বেদ ১০/২৪, ১২/১৪, ঋগ্বেদ ৪/৪০/৫)

 

প্রশ্নোপনিষদঃ

১/১১ (ঋগ্বেদ ১/১৬৪/১২)

 

মুন্ডকোপনিষদঃ

২/২/১ (অথর্ববেদ ১০/৮/১৬),

৩/১/১ ( ঋগ্বেদ ১/১৬৪/২০)

 

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদঃ

২/১ (যজুর্বেদ ১১/১),

২/২ (যজুর্বেদ ১১/২),

২/৩ (যজুর্বেদ ১১/৩),

২/৪ (যজুর্বেদ ১১/৪),

২/৫ (যজুর্বেদ ১১/৫, ঋগ্বেদ ১০/১৩/১),

২/১৬(যজুর্বেদ ৩২/৪),

৩/৩ (যজুর্বেদ ১৭/১৯),

৩/৫ (যজুর্বেদ ১৬/২),

৩/৬ (যজুর্বেদ ১৬/৩),

৩/৮ (যজুর্বেদ ৩১/১৮),

৩/১৪ (যজুর্বেদ ৩১/১, ঋগ্বেদ ১০/৯০/১),

৩/১৫ (যজুর্বেদ ৩১/২, ঋগ্বেদ ১০/৯০/২, অথর্ববেদ ১৯/৬/৪),

৪/২ (যজুর্বেদ ৩২/১),

৪/৩ (অথর্ববেদ ১০/৮/২৭),

৪/৬ (ঋগ্বেদ ১/১৬৪/২০),

৪/৮ (ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৩৯),

৪/২২ (যজুর্বেদ ১৬/১৬)

 

ঐতেরীয়পনিষদঃ

শিক্ষাবল্লী প্রথম অনুবাক (ঋগবেদ ১।৯০।৯),

শিক্ষাবল্লী দ্বাদশ অনুবাক (যজুর্বেদ ৩৬।৯)

 

বৃহদারণ্যকোপনিষদঃ

২।৫।১৬ (ঋগবেদ ১।১১৬।১২),

২।৫।১৭ (ঋগবেদ ১।১১৭।২২),

২।৫।১৯ ( ঋগবেদ ৬।৪৭।১৮)

 





সুতরাং সংহিতা হলো, অপরা পরা দুই বিদ্যারই সমষ্টি ।

 

কৃষ্ণ যজুর্বেদ কী ? একে তৈত্তিরীয় সংহিতা কেন বলে

 

http://back2thevedas.blogspot.com/2017/09/blog-post_30.html?m=1#more


সমাপ্তম্ । নমস্কার সবাইকে ।

 

ও৩ম্ দ্যৌ শান্তিরন্তরিক্ষং শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিরােপঃ শান্তিরােষধয়ঃ শান্তি । বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বে দেবাঃ শান্তি শান্তিঃ সৰ্ব্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ সামা শান্তিরেধি ।

বঙ্গানুবাদ - দ্যুলােক , অন্তরিক্ষ লােক ও পৃথ্বীলােক শান্তিময় হউক । জল , ঔষধি ও বনস্পতি শান্তিময় হউক । সব বিদ্বান্ , বেদপাঠ এবং যাহা কিছু সবই শান্তিময় হউক ! সৰ্ব্বত্র শান্তিময় হউক । সেই শান্তি আমি যেন প্রাপ্ত হই ।

" ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান

একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ "

 

-------------ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্র---------

 

বঙ্গানুবাদ : "এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র , মিত্র , বরুণ , অগ্নি , দিব্য , সুপর্ণ , গরুৎমান , যম , মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন"। শুধু এগুলিই না , এই রকম আরো অনেক নাম আছে । যেমন - শিব , বিষ্ণু , মহাদেব , গণেশ , লক্ষী , ইন্দ্র , নারায়ণ  প্রভৃতি । ঈশ্বরের অনেক নামের মধ্যে থেকে  কয়েকটা নাম উল্লেখ করে জানাবো কোন নাম এবং কেন ঈশ্বরের জন্য সিদ্ধ হয়েছে ।

 

 

"শিব" - যিনি কল্যাণ স্বরূপ ও কল্যাণকারী এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "শিব"।

 

"বিষ্ণু" - যিনি চর এবং অচর রূপ জগতে ব্যাপক বলে পরমাত্মার নাম "বিষ্ণু"।

 

"মহাদেব" - যিনি মহান দেবগণেরও দেব , অর্থাৎ বিদ্বানদেরও বিদ্বান , সূর্য্যাদি পদার্থ সমূহের প্রকাশক , এই জন্য সেই পরমাত্মার নাম "মহাদেব"।

 

"ইন্দ্র" - যিনি নিখিল ঐশ্বর্য্যশালী , এজন্য পরমাত্মার নাম "ইন্দ্র"।

 

"নারায়ণ" -জল এবং জীবগণের নাম 'নারা' সেই অয়ন অর্থাৎ নিবাস স্থান যাহার । অতএব সর্ব জীবে ব্যাপক পরমাত্মার নাম "নারায়ণ"।

 

"ব্রহ্মা" - যিনি সম্পূর্ণ জগৎ রচনা করে বিস্তৃত করেন, এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ব্রহ্মা"।

 

"গণেশ" বা "গণপতি" - যিনি প্রকৃত্যাদি জড় এবং সর্ব জীবাখ্য-পদার্থ-সমূহের পালন কর্তা , এই কারণে পরমেশ্বরের নাম "গণেশ" বা "গণপতি"।

 

এই ভাবে পরমেশ্বরের আরোও বহু নামের উল্লেখ পাওয়া যায় পবিত্র বেদ থেকে ।

️ সংস্কার (সংস্কৃত: संस्कार) হিন্দুদের পালনীয় ষোলোটি প্রধান বৈদিক ধর্মীয় আচার। হিন্দুধর্মের বাইরেও জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের কোনো কোনো শাখাসম্প্রদায়ে এই সব আচার-অনুষ্ঠানের মান্যতা রয়েছে।

 

সনাতন ধর্মের রীতি নীতি অনুসারে জন্মের পর যেসব সংস্কারের মাধ্যমে একজন মানুষ তার জীবন পূর্ণ করে এবং সদা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থেকে জীবন অতিবাহিত করে সেগুলোর যথোপযুক্ত আলোচনা করবো।

সনাতন ধর্মে মোট ১৬ টি সংস্কার আছে। যেগুলো এখনো সকলেই করে আসছে তবে কালের বিবর্তনে এবং মানুষের অজ্ঞানতার প্রভাবে কিছু কিছু সংস্কার বিলুপ্তির পথে।

 

👉 চলুন জেনে নেওয়া যাক সংস্কার গুলো কী কীঃ

 

️ প্রথম সংস্কারঃ "গর্ভাধানম"

= গর্ভধারণ অর্থাৎ গর্ভাশয়ে বীর্যস্থাপন, স্থিরীকরণ যে ক্রিয়া দ্বারা হয় তাহাকে গর্ভাধান বলে।

 

️ দ্বিতীয় সংস্কারঃ "পুংসবনম"

=  গর্ভ স্থির হইয়াছে - জানিবার পর দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় মাসে পুংসবন করতে হয়। (সংস্কারবিধি গ্রন্থে বর্ণনা দেয়া আছে)

 

️ তৃতীয় সংস্কারঃ " সীমন্তোন্নয়নম্ "

= ইহা দ্বারা গর্ভিণী স্ত্রীর মন সন্তুষ্ট হয়, শরীর আরোগ্য লাভ করে, গর্ভ স্থির, উৎকৃষ্ট ও নিত্য বর্দ্ধনশীল হয়।

️ চতুর্থ সংস্কারঃ "জাতকর্ম"

জাতকর্মের বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে যেমনঃ

নাভিচ্ছেদন ও শিশুস্নানঃ যখন সন্তান জন্ম হইবে তখন প্রথমে ধাত্রী আদি স্ত্রীলোক সন্তানের শরীরকে জরায়ু হইতে পৃথক্ করিয়া মুখ, নাসিকা, কর্ণ ও চক্ষুরাদি হইতে শীঘ্র মালিন্য দূর করিবে এবং কোমল বস্ত্রে মুছিয়া শুদ্ধ করিয়া তাহাকে পিতার ক্রোড়ে দিবে। যেখানে বায়ু ও শৈত্য প্রবেশ না করে,এরূপ স্থানে উপবেশন করিয়া পিতা(সন্তানের নাভিদেশ হইতে) নাড়ীর এক বিঘৎ পরিমাণ বাদ দিয়া উর্দ্ধ দিকে সূত্রদ্বারা বন্ধন করিবে। বন্ধনের উপর হইতে নাড়ী ছেদন করিয়া ঈষদুষ্ণ জলে শিশুকে স্নান করাইয়া শুদ্ধ বস্ত্রে মুছিয়া নূতন শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করাইবে।

 

 এরপর,

ঋত্বিগ্বরণ ও হবন, সমিধাচয়ন, অগ্ন্যাধান ও সমিদাধান, নবজাত শিশুর মধুপ্রাশন,আশীর্বচন,প্রসূতাগারে গমন তথা প্রসূতার শরীর মার্জন, আশীর্বাদ, মস্তকাঘ্রাণ,  নারী-স্থুতি, স্তন্যদান, জলকুম্ভ স্থাপন, সূতিকাগারে দশদিন হবন, দশম দিনে সার্বজনীন আশীর্বাদ।  এসকল বিধি জাত কর্ম সংস্কারের অন্তর্গত।

 

️পঞ্চম সংস্কারঃ "নামকারণম"

=বিধিপূর্বক নবজাত শিশুর সুন্দর নাম রাখা।

️ ষষ্ঠ সংস্কারঃ "নিষ্ক্রমণপ্রকরণম্"(নিষ্ক্রমণসংস্কার)

= গৃহের বাহিরে যে স্থানে বায়ু শুদ্ধ, সেই স্থানে সন্তানকে ভমণ করাইতে হয়, এরূপ কার্যকে নিষ্ক্রমণ বলে।এই ব্যপারে পারস্কর গৃহ্যসুত্র, অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্রে (১/১৭/৫,৬) বচন( চতুর্থ মাসে নিষ্ক্রমণিকা। সূর্যমুদীক্ষয়তি তচ্চক্ষুরিতি)

 

গোভিল গৃহ্য-সূত্রে ও (২/৮/১-৫) লিখিত আছে।

ইহার অর্থঃ নিষ্ক্রমণ সংস্কারের কাল দ্বিবিধ।

১. সন্তান জন্ম হইবার পরে তৃতীয় শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অথবা

২. চতুর্থমাসে যে তিথিতে সন্তান জন্ম হইয়াছে, সেই তিথিতে এই সংস্কার করিবে। সেই সংস্কারের দিন প্রাতঃকালে সূর্যোদয়ের পরে সন্তানকে শুদ্ধ জলে স্নান করাইয়া শুদ্ধ ও সুন্দর বস্ত্র পরিধান করাইবে। তৎপরে সন্তানের মাতা তাহাকে যজ্ঞশালায় আনয়ন করিয়া পতির দক্ষিণ পার্শ্ব হইয়া পতির সম্মুখে আগমনপূর্বক সন্তানের মস্তিষ্ক উত্তর দিকে এবং বক্ষদেশ উপর দিকে রাখিয়া অর্থাৎ চিৎ করিয়া পতির হস্তে প্রদান করিবে।

এরপর বিধিপূর্বক উপাসনা,স্বস্তিবাচন, শান্তিপ্রকরণাদি,সামান্যপ্রকরণোক্ত ইত্যাদি করতে হবে।

 

️ সপ্তম সংস্কারঃ "অন্নপ্রাশনসংস্কার"

= যখন শিশু অন্ন পরিপাক করিবার উপযুক্ত শক্তি লাভ করিবে তখনই অন্নপ্রাশন সংস্কার করিবে।

️ অষ্টম সংস্কারঃ "চূড়াকর্মপ্রকরনম্"

= ইহাকে কেশচ্ছেদন সংস্কার ও বলে।  অর্থাৎ শিশুর জন্ম হইতে তৃতীয় বর্ষে বা প্রথম বর্ষে বিধিপূর্বক মুন্ডন(মস্তক) করিতে হয়। এটু চূড়াকর্মপ্রকরণম সংস্কার।

 

️ নবম সংস্কারঃ "কর্ণবেধসংস্কার"

=বিধিপূর্বক কর্ণ বা নাসিকা বিদ্ধ করাকে কর্ণবেধসংস্কার বলে। শিশুর জন্মের পরে তৃতীয় বা পঞ্চম বর্ষে কর্ণ বা নাসিকা বিদ্ধ করা উচিত।

️ দশম সংস্কারঃ "উপনয়নপ্রকরণম্" (উপনয়ন সংস্কার)

=আচার্য যে সংস্কার দ্বারা শিষ্যকে বিধিপূর্বক ব্রহ্মের সান্নিধ্যে লইয়া যান তাহাকে উপনয়নসংস্কার বলে।

 (এবিষয়ে বিস্তারিত করা অনেক কঠিন হবে। তাই সকলে কৃপাপূর্বক উপনয়ন সংস্কার বিষয়ে জানিয়া নিবেন

 

️একাদশ সংস্কারঃ " বেদারম্ভপ্রকরণম্ "

= গায়ত্রী মন্ত্র হইতে আরম্ভ করিয়া সাঙ্গোপাঙ্গ চারিবেদ অধ্যয়নের জন্য যে নিয়ম ধারণ করা হয় তাহাকে বেদারম্ভ সংস্কার বলে।

 

️ দ্বাদশ সংস্কারঃ " সমাবর্ত্তনপ্রকরণম্"

= পূর্ণরীত্যানুসারে ব্রহ্মচর্যব্রত, সাঙ্গোপাঙ্গ বেদবিদ্যা, উত্তম শিক্ষা ও পদার্থবিজ্ঞান প্রাপ্ত হইয়া বিবাহ বিধানপূর্বক গৃহাশ্রম গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় ত্যাগ করিয়া গৃহাভিমুখে প্রত্যাবর্তন করাকে সমাবর্তন সংস্কার বলে।

 

️ ত্রয়োদশ সংস্কারঃ "বিবাহপ্রকরণম্"

= পূর্ণ ব্রহ্মচর্য ব্রত ধারণপূর্বক বিদ্যা ও বল লাভ করিয়া এবং শুভগুণ কর্ম স্বভাবের দিক দিয়া সর্বপ্রকারে তুল্য ও পরস্পর প্রীতিযুক্ত হইয়া বিধিপুর্বক স্ব স্ব বর্ণাশ্রমের অনূকুল উত্তম কর্ম করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে যে সম্মন্ধ স্থাপিত হয়, তাহাকে বিবাহ বলে।

 

️চতুর্দশ সংস্কারঃ "গৃহাশ্রমপকরণম্"

= ঐহিক, পারলৌকিক সুখলাভের জন্য বিবাহ করিয়া নিজের সামর্থ্যানুসারে পরোপকার করা, নির্দিষ্টকালে যথাবিধি ঈশ্বরোপাসনা ও গৃহকৃত্য করা, সত্যধর্মেই তন, মন, ধন নিয়োগ করা এবং ধর্মানুসারে সন্তানোৎপাদন করাকে গৃহাশ্রমসংস্কার বলে।

 

️পঞ্চদশ সংস্কারঃ "বানপ্রস্থপ্রকরণম্"

= বিবাহের পর সমস্ত কর্মানুশীলন সম্পন্ন হইলে যখন নিজ পুত্রেরও (ছেলে+মেয়ে) বিবাহ তথা সন্তান সন্ততি হইবে তখন বনে গিয়া আশ্রয়া লইবে এবং বিধিপূর্বক কর্ম করিবে।  ইহকে বানপ্রস্থ সংস্কার বলে।

 

️ষষ্ঠদশ সংস্কারঃ "সন্ন্যাসপ্রকরণম"

= মোহাদি আবরণ ও পক্ষপাত পরিত্যাগ করিয়া এবং বৈরাগ্যবান হইয়া ভুমন্ডলের সর্বত্র পরোপকারার্থ পরিভ্রমণ করিবে। ইহাকে সন্ন্যাস সংস্কার বলে।

 

 

 

 

️শেষযজ্ঞ সম্পর্কে সবাই জানি।

অন্ত্যেষ্টিকর্মঃ

এ পর্যন্ত সমগ্র সংস্কার মানুষ নিজের জীবনে ধারণ করার পর যখন মৃত্যুলাভ হয় তখন বিধিপূর্বক যে কার্য করা হয় তাহাকে অন্ত্যেষ্টি কর্ম বলে ইহার পর আর কোনো সংস্কার ঐ শরীরের জন্য নাই।

 

️** {অন্ত্যেষ্টি শেষ সংস্কার। ইহার পর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না। ইহার নাম নরমেধ, পুরুষমেধ, নর যাগ ও পুরুষ যাগ। শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবৰ্দ্ধক ওষধি এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তাহার কৃত কর্ম্মের ফল নিজেই ভোগ করে। বংশধরদের কোন কার্যই তাহাকে সাহায্য করিতে পারে না।}


বাংলাদেশ অগ্নিবীর কর্তৃক লিখিত বই সমূহ :


সামবেদ - ১ম খন্ড

বেদসার

বেদামৃতবিন্দু

আহ্বান

যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ

ঋগ্বেদ সরল পরিচয়

যজুর্বেদ সরল পরিচয়

দয়ানন্দ - ভারত ভাগ্য বিধাতা

বৈদিক বর্ষপঞ্জিকা ও ঘড়ি।

 



নমস্কার সকলকে 🙏

 

গত পর্বে আমরা ১৬ সংস্কার সম্পর্কে ধারণা নিয়েছিলাম৷ আজকে আবার সংক্ষেপে আরেকবার দেখে নিব ১৬ সংস্কারের ব্যাখ্যা।

 

সনাতনীদের গর্ভধারণ থেকে শ্মশান পর্যন্ত বৈদিক সংস্কার ১৬ টি। এগুলোকে একত্রে ষোড়শ সংস্কার বলা হয়।  নিম্নে বর্ণিত হলো প্রতিটি সংস্কার সম্পর্কে👇

 

১) গর্ভাধান :  গর্ভধারণ অর্থাৎ গর্ভাশয়ে বীর্য্যস্থাপন স্থিরীকরণ যে ক্রিয়া দ্বারা হয় তাহাকে গর্ভাধান বলে। যার বীজ ও ক্ষেত্র উত্তম তাহার যেমন উত্তম শস্যাদি উৎপন্ন হয়, তেমনই বলবান স্ত্রী - পুরুষের সন্তানও উত্তম হইয়া থাকে। এই জন্য পূর্ণ যৌবন অবধি বহ্মচর্য পালনের পর সমাবর্তন এর মাধ্যমে গৃহস্থে প্রবেশের বিধান রয়েছে।

 

২) পুংসবন : গর্ভ স্থির হয়েছে জানার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাসে সুস্থ সন্তান কামনায় পুংসবন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যজ্ঞ করা হয়।

 

৩) সীমান্তোন্নয়ন : এই সংস্কার দ্বারা গর্ভধারিণী স্ত্রীর মন আনন্দিত হয় এবং শরীর আরোগ্য লাভ করে। গর্ভমাস হতে চতুর্থ মাসে এ সংস্কার করতে হয়।

 

৪) জাতকর্ম : সন্তান প্রসবের সময় মন্ত্র জপ; মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক নাভিচ্ছেদন, শিশুর যত্ন বিষয়ক কর্ম সমূহকে জাতকর্ম সংস্কার বলা হয়।

 

৫)নামকরণ : সন্তান জন্ম হওয়ার একাদশ তম দিনে আত্মীয় পরিজন ও পরিবারের ব্যাক্তিদের সঙ্গে করে সন্তানের নাম রাখার সংস্কারকে নামকরণ সংস্কার বলে।

 

৬)নিষ্ক্রমণ : ঘরের বাইরে শুদ্ধ বায়ুপূর্ণ স্থানে সন্তানকে ভ্রমণ করানোর সংস্কারকে  নিষ্ক্রমণ বলে। যে সময় ভাল মনে হবে, সে সময়ই ভ্রমণ করানো যাবে। অথবা চতুর্থ মাসে বা এর পরে ভ্রমণ করাতে হবে।

 

৭) অন্নপ্রাশন : যখন শিশু অন্ন জাতীয় খাদ্যাদি হজম করার উপযুক্ত শক্তি লাভ করবে, তখন মুখে অন্ন দেওয়াই অন্নপ্রাশন সংস্কার।

 

৮) চূড়াকর্ম : শিশুর মস্তক মুন্ডন অর্থাৎ মাথার কেশ ফেলে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে চূড়াকর্ম সংস্কার। ১ বছর বা ৩ বছর বয়সে এই সংস্কার পালন করতে হয়।

 

৯) কর্ণবেধ : শিশুর জন্মের তৃতীয় বা পঞ্চম বর্ষে নাক ও কান ছিদ্র করাকে কর্ণবেধ বলা হয়।  এই সংস্কার এখন প্রায় বিলুপ্ত বলা যায়।আমাদের এই সংস্কার গুলোর রক্ষা করা ও পালন করা উচিৎ।

 

১০) উপনয়ন :  সংস্কার দ্বারা শিষ্যকে গুরুর সাহচর্যে শিক্ষাগ্রহণ করে বিদ্বান ব্যক্তিতে পরিণত হতে নিয়ে যাওয়া হয় তার নাম "উপনয়ন"। এই সংস্কারের মাধ্যমে গুরু তার শিষ্যকে যজ্ঞোপবীত দিয়ে দীক্ষিত করেন।

 

১১) বেদারম্ভ : গায়ত্রী মন্ত্র থেকে শুরু করে চারবেদ অধ্যয়নের জন্য যে নিয়ম-ধার করতে হয়, তাকে বেদারম্ভ সংস্কার বলে। যেদিন উপনয়ন হয় সেদিনই এই সংস্কার করতে পারে। অথবা ১ বছরের মধ্য করতে হয়।

 

১২) সমাবর্তন: শাস্ত্র অধ্যায়ন ও শিক্ষা সমাপ্ত হলে গুরুগৃহ থেকে গৃহাশ্রম গ্রহণের জন্য  সমাবর্তন সংস্কার পালন করা হয়।

 

১৩) বিবাহ : সমাবর্তনের পর গৃহাশ্রমের জন্য শুভ গুণ কর্ম ও স্বভাবের দিক দিয়ে সকলদিক দিয়ে তুল্য ও প্রীতিযুক্ত হয়ে স্ত্রী পুরুষের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপনই বিবাহ সংস্কার। বিয়ের পর গৃহাশ্রমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ লাভের জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পরোপকার করা, ঈশ্বর উপাসনা ও গৃহকর্ম কর, সত্যধর্মে একনিষ্ঠ হওয়া এবং ধর্মানুসারে চলা কর্তব্য।

 

১৪) বাণপ্রস্থ : বিবাহের পরে ধর্মানুসারে সন্তান প্রাপ্তি সহ সংসারের কাজ করা, মহাত্মাগণের সহিত যোগাভ্যাস শাস্ত্র আলোচনা ও পরমাত্মার সাক্ষাৎ লাভের প্রযত্ন করাকে বাণপ্রস্থ সংস্কার বা গৃহাশ্রমসংস্কার বলে।

 

১৫) সন্ন্যাস : সংসারের মায়া মোহত্যাগ ও পক্ষপাত ত্যাগ করে, বৈরাগ্যবান হয়ে পরোপকারের জন্য ও সমাজের কল্ল্যাণের জন্য পরিভ্রমণ করা সন্ন্যাস সংস্কার।

 

১৬) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া : মৃত্যুর পর দাহকার্য সম্পাদন করা অর্থাৎ অন্তিম সংস্কারকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বলে। এর পর মানবের এই শরীরের জন্য আর কোন সংস্কার নেই।

 

**{অন্ত্যেষ্টি শেষ সংস্কার। ইহার পর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না। ইহার নাম নরমেধ, পুরুষমেধ, নর যাগ ও পুরুষ যাগ। শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবৰ্দ্ধক ওষধি এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তাহার কৃত কর্ম্মের ফল নিজেই ভোগ করে। বংশধরদের কোন কার্যই তাহাকে সাহায্য করিতে পারে না।}

 

এই ১৬ সংস্কারের পালন ও রক্ষণ প্রত্যেক সনাতনীর জন্য একান্ত কর্তব্য।
এখন আমরা বেদ থেকে ষোড়শ সংস্কার সম্পর্কিত কিছু মন্ত্র দেখব৷

 

ও৩ম্ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব।

 

যদ্ভদ্রং ন্তন্নऽআ সুব।

 

[যজুর্বেদ ৩০/৩] 

 

অর্থাৎ হে সকল জগতের উৎপত্তিকর্ত্তা, সমগ্র ঐশ্বর্য যুক্ত শুদ্ধস্বরূপ সর্বসুখদাতা পরমেশ্বর। আপনি দয়া করিয়া আমাদের সম্পূর্ণ দুর্গুণ,দুর্ব্যসন ও দুঃখ দূর করিয়া দিন। যাহা কল্যাণকারক গুণ,কর্ম,স্বভাব ও পদার্থ সেই আমাদিগকে দিন।

১। গর্ভধানঃ

হে শক্তিধর পুরুষ! গর্ভের পুষ্টির জন্য স্ত্রী যোনীকে বিশেষরূপে রক্ষা কর। হে মর্যাদা ময়ী পত্নী! গর্ভস্থ সন্তানকে বিশেষভাবে পুষ্ট কর। তুমি সে সন্তানকে উপযুক্ত সময়ে প্রসব কর।

[অথর্ব্ববেদ ৬/৮১/২]

 

২। পুংসবনঃ-

হে স্ত্রী! যে ওষধি সমূহের দ্যুলোক পিতা,পৃথ্বীলোক মাতা এবং সমুদ্র লোক মূল আধার সেই ওষধি সমূহ তোমাকে সন্তান লাভের জন্য দান করেতেছি। দিব্য গুণযুক্ত ওষধি সমূহ তোমাকে রক্ষা করুক।

[অথর্ব্ববেদ ৩/২৩/৬]

 

৩) সীমান্তোন্নয়নঃ-

আমি দানশীলা আবাহনযোগ্য স্ত্রীকে স্তুতি দ্বারা আবাহন করিতেছি। সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আমার আবাহন শ্রবণ করিয়া আমাকে বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করুক। সূক্ষ্ম সূচি দ্বারা সেলাই করিবার ন্যায় অতি সাবধনে সে প্রজনন কর্ম্ম সম্পন্ন করুক। সে আমাকে দানবীর বলবান যশস্বী পুত্র দান করুক।

 

[ঋগ্বেদ ২/৩২/৪]

 

 

৪। জাতকর্মঃ-

হে পরমাত্মন্ ! দশমাস পর্যন্ত মাতৃগর্ভে সুকুমার জীব সুপ্ত থাকিয়া যেন প্রাণ ধারণ করে এবং জীবিত মাতার গর্ভ হইতে যেন বিনা কষ্টে ভূমিষ্ঠ হয়।

 

[ঋগ্বেদ ৫/৭৮/৯]

 

৫। নামকরণঃ-

হে সন্তান! তুমি যে জ্যোতিঃ স্বরূপ, পরম জ্যোতিঃ স্বরূপ, পরমাত্মার পুত্র, তোমার নাম আত্মা, ইহা আমরা ভাল ভাবে জানি। শান্তিদায়ক পদার্থ দ্বারা তোমাকে আমরা তৃপ্ত করিতেছি। প্রাণ স্বরূপ, দুঃখনাশক, সুখময় পরমাত্মার কৃপায় আমার সন্তানেরা সুসন্তান হউক, বীর সন্তান হউক। আমি বীরবৃন্দ দ্বারা পরিবেষ্টিত হইব। পুষ্টিকর পদার্থের দ্বারা আমি সুপুষ্ট হইব।

[যজুর্ব্বেদ ৭/২৯]

 

৬) নিস্ত্রমণঃ-

হে বালক! তোমার নিষ্ক্রমণ কালে দ্যুলোক ও ভূলোক কল্যাণকারী, সন্তাপ হীন, শোভা ও ঐশ্বর্য দাতা হউক। সুর্য তোমার নিকট কল্যাণপ্রদ এবং বায়ু তোমার হৃদয়ের অনুকুল মঙ্গলদায়ক হউক। দিব্য গুণযুক্ত স্বাদু জল তোমার জন্য কল্যাণকারী হইয়া প্রবাহিত হউক।

[অথর্ব্ববেদ ৮/২/১৪]

 

৭। অন্নপ্রাশনঃ-

হে বালক! কৃষি দ্বারা উৎপন্ন যে অন্ন তুমি ভক্ষণ করিতেছ, যাহা ভক্ষ্য এবং যাহা পুরাতন হওয়ায় অভক্ষ্য, সে সবই তোমার জন্য রোগ রহিত অমৃতময় হউক।

[অথর্ব্ববেদ ৮/২/১৯]

 

৮। মুণ্ডনঃ-

অভিজ্ঞ বিদ্বান্ যেরূপ ক্ষুর দ্বারা শান্তস্বভাব রাজা ও শ্রেষ্ঠ পুরুষকে মুন্ডন করেন সেইরূপ ক্ষুর দ্বারা হে ব্রাহ্মণগণ! এই বালকের কেশ কর্ত্তন কর । এই বালক গো, অশ্ব ও সন্তান লাভ করুক।

[অথর্ব্ববেদ ৬/৬৮/৩]

 

৯। কর্ণবেধঃ-

ধাতু নির্ম্মিত অস্ত্র দ্বারা দুই কর্ণের ছেদ করা- বৈদ্য এই শোভা বর্ধ্বক কার্য করুক। সে প্রজার কল্যাণকারী হউক।

[অথর্ব্ববেদ ৬/১৪/২]

 

১০) উপনয়নঃ-

আচার্য ব্রহ্মচারীকে উপনয়ন দিয়া নিজের সাহচর্যে রাখেন। আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক এই তিন অবিদ্যা অন্ধকার দূর করিতে নিজের বিদ্যার বেষ্টনীর মধ্যে তাহাকে ধারণ করেন। যখন ব্রহ্মচারী বিদ্যালাভ করিয়া দ্বিতীয় জন্ম লাভ করে তখন তাহাকে দেখিবার জন্য সব দিক হইতে বিদ্বানেরা আসিয়া সমবেত হন।

[অথর্ব্ববেদ ১১/৫/৩]

 

১১। বেদারম্ভঃ-

ব্রহ্মচারী জ্যোতির্ম্ময় বৈদিক জ্ঞানকে ধারণ করে। এজন্য তাহার মধ্যে সব দিব্য গুণ অবস্থান করে। সে প্রাণ অপান, ব্যান বাক্য, মন, হৃদয়, জ্ঞান ও মেধাকে উৎকর্ষ দান করে।

[অথর্ব্ববেদ ১১/৫/২৪]

 

 

 

১২। সমাবর্ত্তনঃ-

ব্রহ্মচর্য পূর্ব্বক বিদ্যালাভ করিয়া, উত্তমবস্ত্র পরিধান করিয়া যৌবন কালে যিনি গার্হস্থ্য আশ্রমে উপনীত হন তিনিই দ্বিজত্ব লাভে খ্যাতি অর্জ্জন করিয়া মহৎ হন। ধ্যান পরায়ণ, মননশীল, জ্ঞান প্রচারক, ধৈর্যবান্ বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতি লাভে সহায়তা প্রদান করেন।

[ঋগ্বেদ ৩/৮/৪]

 

১৩) বিবাহঃ-

ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করিবার পর কুমারী কন্যা যুবা পতিকে লাভ করিবে। বলবান্ ও বুদ্ধিমান্ ব্যক্তিই ভোগ্য পদার্থকে সম্যক ভোগ করিতে পারে।

[অথর্ব্ববেদ ১১/৫/১৮]

 

১৪। বানপ্রস্থঃ-

বান প্রস্থ গ্রহণকারীকে বন্য পশু হনন করে না অন্যান্য প্রাণীও ইহাদিগকে হনন করে না। ইহারা সুমিষ্ট ফল ভক্ষণ করিয়া শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করেন।

[ঋগ্বেদ ১০/১৪১/৫]

 

১৫। সন্ন্যাসঃ-

হে সত্যকীৰ্ত্তি, সত্যকৰ্ম্মা, জ্ঞানময়, আনন্দ দাতা সন্ন্যাসী । সত্য বাণী ন্যায় বাক্য বলিয়া সত্য ধারণের উপদেশ করিয়া এবং পরমাত্মার উপাসনা দ্বারা শুদ্ধ হইয়া যোগ দ্বারা সিদ্ধি প্রাপ্তির জন্য প্রযত্ন কর।

[ঋগ্বেদ ৯/১১৩/৪]

 

 

 

১৬। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াঃ-

হে কর্মশীল জীব! শরীর ত্যাগের সময় পরমাত্মার নাম ওঙ্কার স্মরন কর, আধ্যাত্মিক প্রাণ, আধিদৈবিক প্রাণ এবং পুনরায় সেই প্রাণস্বরূপ পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হও। তৎপর ভৌতিক শরীর ভস্মে পরিণত হউক।

[যজুর্ব্বেদ ৪০/৫]

 

🔸বেদ অনুসারে শিব কে ? 🔸

 

শিব অর্থ কল্যাণকর বা মঙ্গলময় । সেই এক, অনন্ত, নিরাকার, সর্বব্যাপী পরমেশ্বর কল্যাণস্বরূপ অর্থাৎ তিনি নিখিল ব্রহ্মান্ডের কল্যাণকর্তা হওয়ায় পবিত্র বেদে তার একটি নাম হলো শিব। বেদে উল্লেখিত পরমেশ্বরের শঙ্কর নামটিরও একই অর্থ।

এভাবে পরমেশ্বর মহান দেবগণেরও দেব অর্থাৎ সমস্ত মহান বিদ্বানদেরও বিদ্বান, সমস্ত সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রাদি দেবতাদেরও প্রকাশকর্তা পরমদেব হওয়ায় বেদে তার একটি নাম মহাদেব। পরমেশ্বর দুষ্কর্মকারীদের রোদন করান বলে বেদে তার একটি নাম রুদ্র।

 

सोर्य॒मा स वरु॑णः॒ स रु॒द्रः स म॑हादे॒वः।।

 

সোর্যমা স বরুণঃ স রুদ্রঃ স মহাদেবঃ।।

[অথর্ববেদ ১৩|৪|৪]

 

(সঃ) তিনি (অর্যমা) সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভু, (সঃ) তিনি (বরুণঃ) সকলের কাছে বরণীয়, (সঃ) তিনি (রুদ্র) পাপীদের বিনাশকর্তা রুদ্র, (সঃ) তিনি (মহাদেবঃ) মহান দেবগণেরও দেব মহাদেব।

 

नमः॑ शम्भ॒वाय॑ च मयोभ॒वाय॑ च॒ नमः॑ शङ्क॒राय॑ च मयस्क॒राय॑ च॒ नमः॑ शि॒वाय॑ च शि॒वत॑राय च॥

 

নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ॥

[যজুর্বেদ ১৬|৪১]

 

(শম্ভবায় চ) আনন্দস্বরূপ ও (ময়োভবায় চ) সুখস্বরূপ পরমেশ্বরকে (নমঃ) নমস্কার। (শঙ্করায় চ) কল্যাণকর্তা ও (ময়স্করায় চ) সুখদাতা পরমেশ্বরকে (নমঃ) নমস্কার। (নমঃ শিবায় চ) মঙ্গলময় পরমেশ্বরকে নমস্কার, (শিবতরায় চ) কল্যাণময় পরমেশ্বরকে নমস্কার।

 

©মনুর্ভব – Manurbhava



নমস্কার । সুপ্রভাত । আজ শুক্রবার । আজকের বেদবাণী -

 

" রমন্তাং পুণ্যা লক্ষ্মীর্যা পাপীস্তা অনীনশম্‌ । "

(অথর্ববেদ ৭/১১৫/৪)

 

👉 সদুপায়ে অর্জিত সম্পদে আমি তুষ্ট থাকি, অসৎ উপায়ে উপার্জন পরিত্যাগ করি ।

 

সহ যজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্টা পুরা উবাচ প্রজাপতিঃ । অনেন প্রসবিধ্বম এষঃ বঃ অস্তু ইষ্ট কামাধূক ।।

=|| গীতা ৩/১০ ||=

 

পদার্থ:- (পুরা) পূর্বে, সৃষ্টির প্রারম্ভে ( প্রজাপতিঃ) ব্রহ্মা  (সহযজ্ঞা) যজ্ঞের সহিত ( প্রজা সৃষ্টা)  প্রজাসকল সৃষ্টি করিয়া (উবাচ)  বলিয়াছিলেন ( অনেন) এই যজ্ঞ দ্বারা ( প্রসবিষ্যধ্বম্) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হও (এষঃ) এই যজ্ঞ (বঃ) তোমদিগের (ইষ্টকামধুক্) অভিষ্ট ভোগপ্রদ (অস্তু)  হউক।

 

অর্থ-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান যজ্ঞ সহ প্রজা সৃষ্টি করে বলেছিলেন এই যজ্ঞের দ্বারা তোমরা সর্বদা সমৃদ্ধ হও এই যজ্ঞ তোমাদের সমস্ত অভীষ্ট পূরণ করবে।

 

[ মন্তব্য:- এখানে মূল শ্লোকে বহু শব্দ নেই তবে হ্যা (বঃ) অর্থ তোমাদের মানে প্রজা এক নয় বহু এইজন্যই (বঃ) এসেছে মূল শ্লোকে- অতএব গীতা দ্বারাও প্রমানিত যে সৃষ্টির প্রারম্ভে কোন ২ ব্যাক্তির সৃষ্টি নয় বহু মানুষের সৃষ্টি হয়েছিলো ]

তং য়জ্ঞং বর্হিষি প্রৌক্ষন্ পুরুষং জাতমগ্রতঃ। তেন দেবাহঅয়জন্ত সাধ্যাহঋষয়শ্চ য়ে।।

=|| যজু০ ৩১/৯ ||=

 

পদার্থঃ (তং) সেই (য়জ্ঞং) পূজনীয়, (অগ্রতঃ জাতম্) সর্ব প্রথমে, প্রাদুর্ভূত জগতের কর্তা, (পুরুষম্) পূর্ণ পরমেশ্বরকে (অগ্রতঃ) সৃষ্টির পূর্বে (বর্হিষি) বিদ্যমান মহান ব্রহ্ম-রূপ যজ্ঞে (প্র ঐক্ষন্) উত্তম অভিষিক্ত করিয়ে। (তেন) ওই জ্ঞানময় পরম পুরুষ থেকে (সাধ্যাঃ) যোগাভ্যাস আদির সাধনাকারী জ্ঞানী আর (ঋষয়ঃ চ) ঋষিগণ (য়েচ) আর যদিও তাহারা (অয়জন্ত) পরমেশ্বরের উপাসনা করেন।। ৯।।

 

ভাবার্থঃ পরমাত্মা সৃষ্টিতে যোগাভ্যাস আদি সাধনার জন্য অনেক জ্ঞানী ঋষিগণ [নর-নারী] উৎপন্ন করেছিলেন।। ৯।।

 

(ভাষ্যঃ পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার)

( এর অর্থ এই যে সৃষ্টির শুরুতে পরমাত্মা বহু মানব সৃষ্টি করেছিলেন )

 

অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং সরূপাঃ।

=|| শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৪/৫ ||=

 

পদার্থ:- (অজমেকাং) সৃষ্টির শুরুতে অজন্মা পরমাত্মা(শুক্লা) সাদা / সত্বঃ (কৃষ্ণা)  কালো/ রজঃ ( লোহিত) লাল / তমঃ গুণ সম্পন্ন (  বহ্বী) বহু ( প্রজাঃ ) প্রজা /মানব ( সৃজমানাং) সৃষ্টি / সৃজন  (সরুপা) করিলেন।

 

অর্থ:- সৃষ্টির শুরুতে অজন্মা পরমাত্মা সত্বঃ রজঃ ও তমোগুণবিশিষ্ট বহু প্রজা তথা মানব সৃষ্টি করিলেন।

আজকের আলোচ্য বিষয় :- বৈদিক বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম।

 

 বর্ণাশ্রম:  

বর্ণ' অর্থ হচ্ছে তা, যা বরণ করে নেওয়া যায় পছন্দের দ্বারা। 'বর্ণপ্রথা' বলে ধর্মগ্রন্থসমূহে কোনো শব্দ নেই। আছে ‘বর্ণাশ্রম বা 'বর্ণব্যবস্থা'। শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘বর্ণ শব্দটির ধাতুগত অর্থ ‘বৃণোতে, যার অর্থ ‘To Choose’ বা পছন্দ করা। অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারণ করা।

নিরুক্ত ২।৩ এ তাই বলা হয়েছে 'বর্ণো বৃণোতেঃ' অর্থাৎ বর্ণ বরণ করে নেয়া হয় বা যে ব্রত নিজ ইচ্ছায় পছন্দ করে নির্বাচন করা হয় তাই বর্ণ।।।।

 কালের পরিবর্তনে যোগ্যতাগুণে নির্ধারিত বর্ণাশ্রম আজ হয়ে গেছে জন্মভিত্তিক বর্ণ প্রথা ! অথচ 'জাতি' ঈশ্বর দ্বারা পূর্বজন্মের কর্মফলের ভিত্তিতে প্রদত্ত হলেও 'বর্ণ' হচ্ছে আমাদের নিজস্ব পছন্দগত এবং গুণ ও কর্মানুসারে গৃহীত।

জাতি' শব্দটির দ্বারা শ্রেণিভুক্তকরণ বোঝায়। প্রাণিদের যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্যের দ্বারা তারা এক প্রজাতি অন্য প্রজাতি থেকে ভিন্ন এবং যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে একই প্রজাতির প্রাণীদের বুদ্ধি দ্বারা চিহ্নিত করা যাত তাকে জাতি বলে।।।

ন্যায়দর্শনে [২।২।৭১] বলছে, "সমানপ্রসবাত্মিকা জাতিঃ"

 

অর্থাৎ যারা সমান বুদ্ধি উৎপন্ন করে, এরূপ পদার্থ হলো জাতি৷ পাণিনীয় ধাতুপাঠের স্বাদিগণে 'বৃ' ধাতুর অর্থ দেওয়া সংবরণ [বৃ সংবরণে]। অর্থাৎ বৃ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন বর্ণ শব্দটির ধাত্বার্থক ব্যূৎপত্তিগত অর্থ দেখলেই বোঝা যায় বর্ণ শব্দটি বরণ করে নেওয়া অর্থাৎ নিজে বেছে নেওয়া অর্থ প্রকাশ করে৷ অর্থাৎ নিজের ইচ্ছায় যে ব্রত পছন্দ করে বেছে নেয়া হয় তাই বর্ণ।

 

এই ব্রত বেছে নেয়াই কর্ম তা পুনরায় উক্ত হয়েছে- ব্রতমিতি কর্ম্মনাম বৃণোতীতি সতঃ [নি০২।১৩] ব্রতম্' শব্দটি কর্মের নাম৷ যেহেতু 'বৃ' ধাতু দ্বারা আবৃত করা অর্থ প্রকাশ করে৷আর তা বেছে নেয়াই বর্ণ।

 

এই কারণেই বৈদিক ধর্মকে বলা হয় 'বর্ণাশ্রম ধর্ম'। বর্ণ শব্দটি ইঙ্গিত করে যে এটির ভিত্তি হচ্ছে নিজ পছন্দকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ও নিজ যোগ্যতা অনুসারে পরিচালিত ব্যবস্থাকে অনুমোদন দেয়া। অর্থাৎ নিজ পছন্দ অনুসারে কর্ম বা ব্রতকে বেছে নেয়াই বর্ণ।

 

 ব্রাহ্মণ কে ?

 ঋ০ ৭।১০৩।৭-৯ , শত০ ব্রা০ ৫।১।১।১১ , মনু০ ১।৮৭ , গীতা ১৮।৪২ = যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী , নিয়মিত বেদোক্ত অনুসারে ধ্যান যজ্ঞাদি কর্মে লিপ্ত সে ব্রাহ্মণ। যিনি ব্রহ্মজ্ঞান সম্পন্ন,উত্তম কর্ম সম্পাদনকারী তিনি-ই ব্রাহ্মণ ।

 

অধ্যাপন,অধ্যায়ন,যজন,যাজন,দান ও প্রতিগ্রহ যারা করেন তারাই ব্রাহ্মণ। শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য-এগুলি ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত কর্ম।

 

 ক্ষত্রিয় কে ?

ঋ০ ১০।৬৬।৮ , মনু০ ১।৮৯  = দৃঢ়়ভাবে আচার পালনকারী, সৎকর্মের দ্বারা শুদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস,ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক, ন্যায়পরায়ণ, বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা, অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়। শৌর্য, তেজ, ধৃতি, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন, দান ও শাসন ক্ষমতা-এগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম।

 

 

 বৈশ্য কে ?

 অথর্ব০ ৩।১৫।১ , গীতা ১৮।৪৪ = দক্ষ ব্যবসায়ী, দানশীল,লোভহীন, চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী ব্যক্তি সে বৈশ্য। কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য এগুলি হলো বৈশ্যদের স্বাভাবিক কর্ম।

 

 শূদ্র কে ?

ঋ০ ১০।৯৪।১১ , গীতা ১৮।৪৪ = যে অদম্য, পরিশ্রমী, অক্লান্ত, জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা, লোভমুক্ত, কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র। পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত।

স্বভাব – গুণ – কর্ম অনুযায়ী বর্ণ

 

ঋ০ ৯।১১২।১ = একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেক রকম আর সে অনুসারে কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য এবং কেউ শূদ্র।

 

গীতা ৪।১৩ = আমি গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে চারিবর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) সৃষ্টি করেছি।

 

গীতা ১৮।৪১ = মানুষের স্বভাবজাত গুণ ও কর্ম অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্ম সমূহ বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, স্বভাবজাত গুণ অনুসারে কর্ম সমূহ বিভক্ত করা হয়েছে, জন্ম অনুসারে মানুষকে বিভক্ত করা হয় নি।

 

যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত, অধ্যাপনা, গবেষণা পছন্দ করেন, তারা 'ব্রাহ্মণ বর্ণ'। যারা প্রতিরক্ষা, প্রশাসন যুদ্ধ-বিগ্রহ পছন্দ করেন এবং পেশা হিসেবে বেছে নেন কর্মগুণে  তারা হন 'ক্ষত্রিয় বর্ণ'। যারা অর্থনীতি ও পশুপালনাদি পছন্দ করেন তারা হন 'বৈশ্য বর্ণ' এবং যারা নিয়োজিত আছেন অন্যান্য সেবামূলক কাজ-কর্মে, তারা হন 'শূদ্র বর্ণ'।

 

এসব শুধু বোঝায় নানা ধরনের পছন্দ যেসব মানুষজন তাদের কর্মের জন্য নির্বাচন করেন এবং এর সাথে 'জাতি' বা জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই।

 

 চতুরাশ্রম:

বেদে মানুষের সাধারণ আয়ু একশো বছর বলা হয়েছে যার জন্য সন্ধ্যায় প্রতিদিন প্রার্থনা করা হয় “জীবেম শরদঃ শতম্ অর্থাৎ আমরা যেন ঈশ্বরের কৃপায় কমপক্ষে একশো বছর পর্যন্ত বাঁচি।

আমাদের মানবজীবনের মোট চারটি ধাপ, বাল্যকাল, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্য। শাস্ত্রে এই চার বয়সের নির্দিষ্ট কর্তব্যকর্ম বর্ণিত রয়েছে এবং তা পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই চারটি আশ্রমে জীবনকে ভাগ করার উদ্দেশ্য হলো যাতে মানুষ নিজে নিজেকে উচ্চস্তরে নিয়ে যায় এবং সমস্ত প্রকারের উন্নতি করে যা ধীরে ধীরে হয়।

যখন কোনো বড় কাজ সম্পন্ন করতে হয়, তখন আমরা লেখতে পাই যে ধাপে ধাপে কাজ করলে ব্যক্তি সহজেই নিজের অভীষ্ট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এইভাবে জীবনের অন্তিম উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য এই চারটি আশ্রমকে জীবনের চারটি উদ্দেশ্য বোঝা উচিত।

মানবজীবনের অন্তিম উদ্দেশ্য সমস্ত দুঃখ, অজ্ঞান এবং অশান্তি থেকে বিচ্যুত হয়ে পরম আনন্দরূপী মুক্তি প্রাপ্ত করা, যার মধ্যে সর্বদা সুখ, শান্তি এবং আনন্দ থাকে এবং সমস্ত বন্ধন কেটে যায়।

 

১. ব্রহ্মচর্য:

ব্রহ্মচর্য শব্দের অর্থ ঈশ্বর ও বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত করা এবং নিজের ইন্দ্রিয়কে নিজের বশে রাখা ইত্যাদি। [ অথর্ব০ ১১।৫।৩-২৪]। কমপক্ষে ২৫ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক যুবককে ও ১৬ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক যুবতীর ব্রহ্মচর্যাশ্রমে থাকা উচিত। ব্রহ্মচর্য জীবনের প্রাথমিক আশ্রম।  ব্রহ্মচারীর প্রধান কর্তব্য হল বিদ্যালাভ।

এছাড়া ব্রহ্মচারী সকল প্রকার কুপ্রবৃত্তি, অশ্লীলতা আদি বর্জন করবে এবং সকল প্রকার সদ্গুণ ধারণ করবে। [ মনু০ ২।১২১,১৫৩-১৬৮,২১৮,২৩৮, ২৪০] সুশীল, স্বল্পভাষী, মিতভাষী হয়ে জীবনধারণ করবে। মদ্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য কখনো গ্রহণ করবে না। প্রতিদিন প্রাতকালে উঠে সন্ধ্যোপাসনাপূ্র্বক ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে দিন আরম্ভ করবে এবং সায়াহ্নেও যথাবিধি সন্ধ্যা উপাসনা করে ঈশ্বরকে স্মরণ করবে। বেদ শাস্ত্রাদি স্বাধ্যায় করবে। আচার্য গুরুজনদের ধর্মানুসার আজ্ঞার নম্রতার সহিত পালন করে বেদশাস্ত্র এবং সমস্ত বিদ্যার জ্ঞান প্রাপ্ত করা উচিত। সমস্ত নারীকে মাতা ও বোনের দৃষ্টিতে দেখবে।

ব্রহ্মচারীর জীবন তপস্বী, অর্থাৎ ঠাণ্ডাগরম ইত্যাদি সহ্য করা উচিত। গুরুকুলে থেকে আচার্যকে পিতা ও বিদ্যাকে মাতা বোঝা উচিত। কাম, ক্রোধ, লোভ, ভয়, শোক, ঈর্ষা, আলস্য, দ্বেষ ইত্যাদি দুর্গুণ ত্যাগ [ তৈ০ আ০ ৭।৯,১১ ;১০।৮ ] করে তাঁহাকে সত্যনিষ্ঠ, ত্যাগী, তপস্বী, বিদ্বান, ধর্মাত্মা, ঈশ্বর ভক্ত, জিতেন্দ্রিয় হওয়ার জন্য সদা চেষ্টা করা [ মনু০ ২।৯০-১০০]। ব্রহ্মচর্যের দ্বারা শরীর, মন এবং আত্মশক্তি বৃদ্ধি পায় । ব্রহ্মচর্যেণ তপসা দেবা মৃত্যুমপাঘ্নত।। [অথর্ববেদ ১১।৫।১৬] অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য এবং তপস্যার প্রতাপে সত্যনিষ্ঠ বিদ্বানগণ মৃত্যুর কারণভূত রোগশোক থেকে বিজয় প্রাপ্ত করে। নির্ধারিত বয়সকাল [ ঋ০ ৫।৪১।৭, ঋ০ ২।৩৫।৪-৬, ঋ০ ৫।৩৭।৩] অতিক্রান্ত হলে বিবাহ সংস্কারের মাধ্যমে ব্রহ্মচারী গার্হস্থ্যে পদার্পণ করবে।

 

২. গার্হস্থ্য:

গৃহস্থাশ্রম চার আশ্রমের ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আশ্রম। বিবাহের মধ্য দিয়ে পতি পত্নী সংসার জীবন আরম্ভ করে যার মাধ্যমে বংশধারা চলমান থাকে।  গৃহস্থ্যাশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের মুখ্য কর্তব্য হলো সকলের সঙ্গে প্রেমপূর্বক ব্যবহার করা, সকলে মিলে উত্তম কার্যক্রমে তৎপর থাকা, পতি একপত্নী ব্রতে এবং পত্নী পতিব্রত ধর্মের পালন করা, মর্যাদা নিয়ম এবং সংযমে থেকে নিজের সমস্ত কর্তব্যের পালন করা [ অথর্ব০ ১৪।২।৩২-৭৫]। পতিপত্নী একে অপরকে একই শরীরের অংশ মনে করে [ ম০ ব্রা০ ১।৩।৮-১০] সর্বদা প্রেমের সঙ্গে থাকবে ।

সমস্ত ধর্মকার্য করার ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য করা। পুত্র এবং কন্যাকে উত্তম বিদ্যা দিয়ে তাদেরকে সদাচারী, ধর্মাত্মা এবং পরোপকারী বানানোর জন্য সর্বদা চেষ্টা করা ও স্বার্থ ত্যাগ করে দানশীল হওয়া উচিত [ অথর্ব০ ৩।৩০।১-৭]। গার্হস্থ্যাশ্রমে গৃহস্থ নিত্য উপাসনা, অগ্নিহোত্র ও পঞ্চ মহাযজ্ঞ যথাবিধি পালন করবে।

 

৩. বানপ্রস্থ:

বানপ্রস্থ আশ্রমে প্রবেশের সময় সাধারণত পঞ্চাশ বছরের পর, যখন সন্তানের সন্তান হয়ে যায় [ মনু০ ৬।১-৩, ২৭-২৯]। গৃহস্থাশ্রম উপভোগের পর প্রত্যেক পুরুষ ও নারীকে বানপ্রস্থ আশ্রমে প্রবেশ করে নিজের মানসিক ও আত্মিক শক্তি এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করা, গুরুকুলে থেকে পড়ানো এবং অপরের সেবা কার্যে নিজেকে নিয়োজিত করা উচিত [ অথর্ব ১৯।৫।১, ১৯।৪১।১, ১৯।৪০।৩]। ঈশ্বরভক্তি, ধ্যানযোগ এবং বেদাদি শাস্ত্রের মননে নিজের সময়কে বিশেষ রূপে লাগানোই এই সময়ের মূল প্রতিপাদ্য।‌

পাশাপাশি এইসময়ে অহিংসা, সত্য, ব্রহ্মচর্য, তপস্যা, শান্তি, ইন্দ্রিয়নিগ্ৰহ ইত্যাদি ধারণ করা উচিত। নিজের জ্ঞান ও অনুভব দ্বারা অপরকে যথাশক্তি লাভ পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করা উচিত। যদি আগের দিনের মতো সকলে পঞ্চাশ বছর বয়সের পর বানপ্রস্থী হওয়ার নিয়ম মেনে নেয়, তাহলে গুরুকুল এবং উত্তম অপর সংস্থা চালোনো সহজ হবে। আজকালকার মতো বিদ্বান, অনুভব, ত্যাগী কার্যকর্তার অভাব এই সংস্থায় অনুভব হবে না। এভাবে শিক্ষা, সমাজের কাজ ভালোভাবে এবং সহজে চলতে থাকবে।

 

৪. সন্ন্যাস:

সন্ন্যাস শব্দের অর্থ সমস্ত মোহাদি আবরণ ও পক্ষপাতত্যাগ করা। সন্ন্যাসী তাঁকেই বলে যিনি সমস্ত কুকর্ম ও নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে ঈশ্বরের ধ্যান এবং বৈরাগ্যবান হয়ে পরোপকারে জীবন অতিবাহিত করেন [ ঋ০ ৯।১১৩।১-১১, মনু০ ৬।৩৩-৮৫] । যিনি ধন, পুত্র এবং যশের ইচ্ছা থেকে ওপরে উঠে গেছেন, তিনি নির্ভয় হয়ে সমস্ত জায়গায় ধর্মের প্রচার করেন।

অধর্ম, অন্যায়, অত্যাচারের ঘোর বিরোধিতা করেন। যিনি সমস্ত প্রাণীর প্রতি প্রেমদৃষ্টি রাখেন। এমন সত্যিকারের সন্ন্যাসীর সংখ্যা যত অধিক হবে তত তাড়াতাড়ি সংসারের ভালো এবং উদ্ধার হবে।

 

নমস্কার, সুপ্রভাত।

আজকের বেদমন্ত্র :~

ভোজন মন্ত্র:-

 "ॐ অন্নপতে অন্নস্য নো দেহ্যনমীবস্য শুষ্মিনঃ ।

প্রপ্র দাতারং তারিষঊর্জং নো ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে ॥"

 

[যজুর্বেদ ১১/৮৩]

 

অর্থঃ হে অন্নের স্বামিন্ ! তুমি আমাদের পুষ্টিযুক্ত ও বলকারী অন্ন প্রদান কর। দীন-দুঃখী ও অভাবে পীড়িতদের অন্ন প্রদান করর তাদের প্রতি কৃপা দৃষ্টি দান কর। দ্বিপদী মানুষ, পরিবার ও চতুষ্পদী প্রানী ইত্যাদিদের জন্য অন্ন,বল ও পরাক্রম প্রদান কর।

 

ॐ শান্তিঃ ॐ শান্তিঃ ॐ শান্তিঃ


নমস্কার । আজকের বেদবাণী -

 

"ত্বং হি নঃ পিতা বসো ত্বং মাতা শতত্ৰুতো

বহুবিধ। অধা তে সুন্মমীমহে:"

( ঋগ্বেদ ৮/৯৮/১১)

 

বঙ্গানুবাদ :- হে সকলের আশ্রয়স্থল, অগণিত শুভকার্যের সম্পাদক পরমাত্মন্ ! তুমিই আমাদের সকলের পিতা, তুমিই মাতা, এজন্য তোমাকে আমরা উত্তমরূপে মনন করি।

নমস্কার । আজকের বেদমন্ত্র -

 

"য়া তে রুদ্র শিবা তনূরঘোরাঽপাপকাশিনী।তয়া নস্তনুবা শন্তময়া গিরিশন্তাভি চাকশীহি॥"

(যজুর্বেদ ১৬।২)

 

পদার্থঃ (রুদ্র) হে দুষ্টদের রোদনকারক পরমাত্মা! তুমি (গিরিশন্ত) সত্যোপদেশের বাণী দ্বারা সুখের বিস্তারকারী  (তে) তোমার (য়া) যে (অঘোরা) ঘোর উপদ্রব রহিত অর্থাৎ প্রসন্ন (অপাপকাশিনী) সত্য ধর্ম প্রকাশকারী (শিবা) কল্যাণময় তনূঃ) বিস্তৃত স্বরূপ (তয়া) সেই (শন্তময়া) অত্যন্ত শান্তিপ্রদ (তনুবা) বিস্তৃত স্বরূপ দ্বারা (নঃ) আমাদের (অভি চাকশীহি) অবলোকন করো অর্থাৎ আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি প্রদান করো॥

আজকের বিষয়: সনাতন ধর্ম কি? ধর্মের স্বরুপ ও লক্ষণ।

 

🔰  সনাতন ধর্ম কী?

সনাতন শব্দে শাশ্বত, চিরন্তন অর্থাৎ অপরিবর্তনশীল বুঝায়। সনাতন কোনো জাতিবাচক শব্দ নয়, বরং প্রাণিমাত্রের ধর্মই হচ্ছে সনাতন। সনাতনকে বুঝতে গেলে প্রথমে তিনটি বিষয়ে জানা দরকার, [১] নতুন, [২] পুরাতন ও [৩] সনাতন।

 

যেমনঃ

[১] নতুন= যা পূর্বে ছিল না কিন্তু বর্তমানে প্রাপ্ত, তাই নতুন।

[২] পুরাতন= নতুনের বিপরীত শব্দ পুরাতন অর্থাৎ যা বর্তমানে নতুন কিন্তু কিছুদিন পর জীর্ণ হয়, তাই পুরাতন।

[৩] সনাতন= যা নতুন আবার পুরনোও নয়, বরং শাশ্বত ও চিরন্তন, তাই সনাতন।

 

যেমনঃ মূল প্রকৃতি, আত্মা ও পরমাত্মা, আবার এভাবেও বুঝতে পারেন যদিও মূল প্রকৃতি থেকে দৃশ্যমান সমস্ত কিছুর সৃষ্টি। যেমনঃ চম্বুকের ধর্ম আকর্ষণ করা, তা পূর্বে যেমন ছিল, বর্তমানেও তাই আছে, আর প্রলয়ের পূর্ব পর্যন্ত তাই থাকবে, এমন নয় যে পূর্বে আকর্ষণ করতো আর এখন করে না । সূর্য আলো প্রদান করে, বর্তমানেও তাই, আর প্রলয়ের পূর্ব পর্যন্ত একই থাকবে, এমন নয় যে পূর্বে আলো প্রদান করতো আর এখন করে না ইত্যাদি। যে ধর্মের কখনো বিনাশ বা পরিবর্তন হয় না, তাই সনাতন ধর্ম।

 

সনাতন মানবতার ধর্ম, তাই পবিত্র বেদ বলছে, “কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্" অর্থাৎ বিশ্বের সকলকে আর্য অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ করো। “মনুর্ভব জনয়া দৈবম্ জনম্" [ঋ০ ১০।৫৩।৬]

অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ= মননশীল হও, অন্যকেও মানুষ হিসেবে গড়ে তোলো। এখন ধর্মের বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

 

🔰  ধর্মের স্বরূপ ও লক্ষণ:

 

ব্যাকরণের পরিভাষায় “ধৃঞ্-ধারণে ধাতুর দ্বারা “অর্তিস্তু সুহুস্টধৃ" [উণাদি ১।১৪০] সূত্র হতে প্রাপ্ত 'মন্' প্রত্যয় যোগে ধর্ম শব্দ সিদ্ধ হয়। “ধারণাৎ ধর্মম্ ইত্যাহুঃ" “ধ্রিয়তে অনেন লোকঃ" আদি ব্যুৎপত্তি অনুসারে, 'যা আত্মোন্নতি এবং উত্তম সুখের জন্য ধারণ করা হয়' অথবা যার দ্বারা লোকসকল ধারণ করে অর্থাৎ ব্যবস্থা বা মর্যাদায় স্থিত করা হয়, তাকেই ধর্ম বলে। এই প্রকারে আত্মার উন্নতি করে এমন, মোক্ষ বা উত্তম ব্যবহারিক সুখ প্রদানকারী সদাচরণ, কর্তব্য অথবা শ্রেষ্ঠ নিয়ম-কানুন বিধানই ধর্ম ।

 

মনুস্মৃতি শাস্ত্রে ধর্মকে ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থূলভাবে তা দুই অর্থে গ্রহণ করা যায়।

[১] মুখ্য অর্থ [আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য সাধক]

[২] গৌণ অর্থ [লৌকিক ব্যবহার সাধক]

 

[১] আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে আত্মার উপকারক নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য কৃত আচরণকেই ধর্ম বলে। এটিই ধর্মের মুখ্য উদ্দেশ্য। এটি সর্বভৌমিক, সর্বকালিক ও সর্বজনীন, যা কখনোই ত্যাজ্য নয়। এর প্রতিপাদন করাই ধর্মশাস্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য ।

 

মহর্ষি মনুর ধর্মের বর্ণন বেদাভ্যাসস্তপোজ্ঞানমিন্দ্রিয়াণাং চ সংয়মঃ । ধর্মক্রিয়াহত্মচিন্তা চ নিঃশ্রেয়সকরং পরম্ ॥ মনু০ ১২।৮৩ = বেদাধ্যয়ন [১২।৯৪-১০৩], তপ= ব্রত সাধনা [১২।১০৪], জ্ঞান= সত্যবিদ্যার প্রাপ্তি [১২।১০৪], ইন্দ্রিয় সংযম [১২।৯২], ধর্মক্রিয়া= ধর্মপালন ও যজ্ঞাদি ক্রিয়ার অনুষ্ঠান এবং আত্মচিন্তা= পরমাত্মার জ্ঞান এবং ধ্যান, এই ছয় মোক্ষ প্রদানকারী সর্বোত্তম কর্ম ।


ধৃতিঃ ক্ষমা দমোঽস্তেয়ং শৌচং ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ ।

ধীর্বিদ্যা সত্যং অক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥
(মনু০ ৬।৯২)

 

অনুবাদঃ ১। [ধৃতিঃ] কষ্ট বা বিপদে ধৈর্য রাখা এবং দুঃখী ও বিচলিত না হওয়া তথা ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কষ্ট আসা সত্ত্বেও ধৈর্য রেখে পালন করতে থাকা, ২। [ক্ষমা] ধর্ম পালনের জন্য নিন্দা, মান অপমান প্রভৃতি সহ্য করা , ৩। [দমঃ] ঈর্ষা, লোভ, মোহ, বৈরিতা প্রভৃতি অধর্ম গুলোকে সংকল্প ও বিচারের দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা, ৪। [অস্তেয়ম্] চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা, ছল-কপটতা, অসদাচরণ, অন্যায়, অধর্মাচরণ হয় এরকম কোনো বস্তু, ধন ইত্যাদি না নেওয়া, ৫। [শৌচম্] শরীর আর মন পবিত্র রাখা, ৬। [ইন্দ্রিয়নিগ্ৰহঃ] ইন্দ্রিয়ের নিজের নিজের বিষয়ের অধর্ম এবং আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা, ৭। [ধীঃ] বুদ্ধির উন্নতি করা, মননশীল হয়ে বুদ্ধিবর্ধক উপায় বের করা এবং বুদ্ধিনাশক ধ্বংস ইত্যাদি না করা, ৮। [বিদ্যা] সত্যবিদ্যা এর প্রাপ্তির জন্য অধিক যত্নবান হয়ে বিদ্যা এবং জ্ঞানের উন্নতি করা, ৯। [সত্যম্] মন, বচন, কর্মকে সত্য মানা, সত্যভাষণ, সত্যাচরণ করা, আত্মবিরুদ্ধ মিথ্যাচার না করা, ১০। [অক্রোধঃ ] ক্রোধপূর্ণ ব্যবহার এবং প্রতিশোধের ভাবনা ত্যাগ করে শান্তির ইত্যাদি গুণ গ্ৰহণ করা- [দশকং ধর্মলক্ষণম্] এই দশটি হল ধর্মের লক্ষণ। এই গুণগুলো হল ধর্মপালনের পরিচয় এবং যে মানুষ ধার্মিক, তিনি এই লক্ষণগুলো সিদ্ধ করেন। এটিই হল ধর্মের সর্বপ্রামাণ্য দশ লক্ষণ ।

 

ধৃতিঃ ক্ষমা দমোঽস্তেয়ং শৌচং ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ ।

ধীর্বিদ্যা সত্যং অক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥

মনু০ ৬।৯২

 

অনুবাদঃ ১। [ধৃতিঃ] কষ্ট বা বিপদে ধৈর্য রাখা এবং দুঃখী ও বিচলিত না হওয়া তথা ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কষ্ট আসা সত্ত্বেও ধৈর্য রেখে পালন করতে থাকা, ২। [ক্ষমা] ধর্ম পালনের জন্য নিন্দা, মান অপমান প্রভৃতি সহ্য করা , ৩। [দমঃ] ঈর্ষা, লোভ, মোহ, বৈরিতা প্রভৃতি অধর্ম গুলোকে সংকল্প ও বিচারের দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা, ৪। [অস্তেয়ম্] চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা, ছল-কপটতা, অসদাচরণ, অন্যায়, অধর্মাচরণ হয় এরকম কোনো বস্তু, ধন ইত্যাদি না নেওয়া, ৫। [শৌচম্] শরীর আর মন পবিত্র রাখা, ৬। [ইন্দ্রিয়নিগ্ৰহঃ] ইন্দ্রিয়ের নিজের নিজের বিষয়ের অধর্ম এবং আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা, ৭। [ধীঃ] বুদ্ধির উন্নতি করা, মননশীল হয়ে বুদ্ধিবর্ধক উপায় বের করা এবং বুদ্ধিনাশক ধ্বংস ইত্যাদি না করা, ৮। [বিদ্যা] সত্যবিদ্যা এর প্রাপ্তির জন্য অধিক যত্নবান হয়ে বিদ্যা এবং জ্ঞানের উন্নতি করা, ৯। [সত্যম্] মন, বচন, কর্মকে সত্য মানা, সত্যভাষণ, সত্যাচরণ করা, আত্মবিরুদ্ধ মিথ্যাচার না করা, ১০। [অক্রোধঃ ] ক্রোধপূর্ণ ব্যবহার এবং প্রতিশোধের ভাবনা ত্যাগ করে শান্তির ইত্যাদি গুণ গ্ৰহণ করা- [দশকং ধর্মলক্ষণম্] এই দশটি হল ধর্মের লক্ষণ। এই গুণগুলো হল ধর্মপালনের পরিচয় এবং যে মানুষ ধার্মিক, তিনি এই লক্ষণগুলো সিদ্ধ করেন। এটিই হল ধর্মের সর্বপ্রামাণ্য দশ লক্ষণ ।

 

[২] ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, ত্রিবিধ= আধ্যাত্মিক, মানসিক ও শারীরিক উন্নতি ঘটায়, মানবতা এবং দেবত্বের বিকাশ ঘটায়, উত্তম সুখকারী শ্রেষ্ঠ ব্যবহারিক কর্তব্য, মর্যাদা এবং বিধানই [নিয়ম-কানুন] ধর্ম। ব্যবহারিক ক্ষেত্র হওয়ার কারণে কর্ম, দেশ-কাল পরিস্থিতিবশত কিছু পরিবর্তনও এসে যায়।

নিম্নে সংক্ষিপ্ত প্রমাণ দ্রষ্টব্য -

 

সত্য তথা প্রিয়ভাষণ

সত্যং ব্রূয়াৎপ্রিয়ং ব্রূয়ান্ন ব্রূয়াৎসত্যং অপ্রিয়ম্ । প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রূয়াদেষ ধর্মঃ সনাতনঃ ॥ মনু০৪।।১৩৮ =

 মনুষ্য সদা সত্য বলবে ও তা প্রিয় অর্থাৎ মধুর, শিষ্ট এবং হিতকর রূপে বলবে সত্যকথনও অপ্রিয় ও অহিতকর ভাবে যেন না বলে [ যেমন অন্ধকে অন্ধ , পঙ্গুকে পঙ্গু না বলে ]এবং প্রিয় বা হিতকর মিথ্যাও যদি হয় তবে তা বলবে না অর্থাৎ অপরের চাটুকারিতা ও প্রসন্নতার জন্য মিথ্যা বলবে না ,এটিই সনাতন ধর্ম ।

পতি-পত্নী আমরণ একসাথে থাকবে অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ । এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ ॥ মনু০৯।১০১ =

মরণ পর্যন্ত পতি-পত্নী পরস্পর কোনো প্রকারের ধর্ম উল্লঙ্ঘন এবং বিচ্ছেদ না হয়, সংক্ষেপে স্ত্রী পুরুষের এই সাররূপ মুখ্য ধর্ম।

 

দর্শনশাস্ত্রে ধর্মের স্বরূপকে উত্তম প্রকারে সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সেই অনুসারে ধর্মের পরিভাষা নিম্নরূপ

যতোঽভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্মঃ॥

 

বৈশেষিক দর্শন ১।১।২ = যা দ্বারা অভ্যুদয় - নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি হয়, তা-ই ধর্ম। অর্থাৎ যা দ্বারা পদার্থ সমূহের যথাযথ জ্ঞান ও তার প্রয়োগ দ্বারা উন্নতি সিদ্ধ হয়, তাই ধর্ম । মনুবাক্যে আমরা দেখেছি বেদমাতা পদার্থসহ সকল বিদ্যার মূলস্রোত ও প্রেরণাদানকারিণী ।

 

চোদনালক্ষণোঽর্থো ধর্মঃ।

পূর্ব০ দ০১।১।২ = প্রেরণা, যার লক্ষণ - সাধন এবং অর্থ = বেদ শাস্ত্র প্রতিপাদিত বা বোধিত বিষয়, তাই ধর্ম।

এই যে ধর্ম সবসময় সনাতন হয়, এই জ্ঞানটি ঈশ্বর আমাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন যে আদি গ্রন্থের মাধ্যমে তার নাম হলো বেদ। বেদ জ্ঞান হল অনাদি এবং দেশ, কালের বন্ধনের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। সবার জন্য এবং সব যুগের জন্য। আর তাই বেদে যে ধর্মের বিবৃতি করা হয়েছে, তাকেই সনাতন ধর্ম বলে।

পবিত্র অর্থববেদের মন্ত্রে এই কথাটিই বলা হয়েছে -

 

ভোগ্য ভবদথো অন্নমদদ্বহু ।

যে দেবমুতরাবন্তমুপাসতৈ সনাতনম্ ।।

[অথর্ববেদ ১০।৮।২২]

 

অনুবাদঃ সেই মানব [সুখ দ্বারা ] অনুভবযোগ্য হবে এবং আরো বিবিধ অন্ন [জীবনসাধন] ভোগ করবে ; যে অতি উত্তম গুণযুক্ত সনাতন [নিত্য স্থায়ী] দেব আছেন, [স্তুতিযোগ্য পরমেশ্বর] তাঁকে উপাসনা করবে ।

অর্থাৎ, সেই সনাতন পরমেশ্বরকে স্মরণকারী ব্যক্তি উত্তম ভোক্তা ও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্নাদিকে প্রাপ্ত করে পুষ্ট হয়ে থাকে।

 

সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাপ্তুনর্ণবঃ ।

অহোরাত্রো প্রজায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো ।।

[অথর্ববেদ ১০।৮।২৩]

 

অনুবাদঃ এই [সর্বব্যাপক] সনাতন [নিত্য স্থায়ী পরমাত্মা] এবং তিনি আজ [প্রতিদিন] নিত্য নব হয়ে থাকেন । দিন ও রাত্রি উভয়ে একে অপরের দ্বিবিধ রূপ দ্বারা উৎপন্ন হয়ে থাকে।

অর্থাৎ রাত দিনের এই চক্র সেই সৃষ্টির আদি হতেই চলছে। তারপরেও প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত আমাদের কাছে নতুনের মতো লাগে। ঠিক তেমনি অনাদি অনন্ত সনাতন হয়েও ঈশ্বর সবসময় নবীন।

 

আর তাই সনাতন পরমব্রহ্ম প্রেরিত সনাতন বেদবাণীর দ্বারা বিধৃত ও দৃষ্ট যে ধর্ম, তাই সনাতন ধর্ম। ধর্ম মানেই সনাতন কারণ সৃষ্টির আদি থেকেই ধর্ম বিদ্যমান। আর তাই কোনো মানুষ ধর্মের প্রবর্তক হতে পারে না। কারণ মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই ধর্ম মহাজগতে উপস্থিত। সনাতন ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং ঈশ্বরই যিনি বেদের মাধ্যমে মনুষ্যকে এই সনাতন ধর্মের প্রবচন দিয়েছেন।


আজকে আলোচ্য বিষয়: বৈদিক শাস্ত্রে নারী।

 

সনাতন ধর্ম এক এবং এককভাবে নির্ভর করে পবিত্র বেদ এর ওপর ।

আমাদের এই সংস্কৃতিতে এমন বিভিন্ন গ্রন্থ আছে যেখানে নারীদের ছোট করে দেখানো হয়েছে।, কিন্তু যখন বেদ কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়, তখন সমস্ত সিদ্ধান্তই অগ্রাহ্য হয় ।‌

কারণ মনু, মনু স্মৃতি ১২/৯৫-এ বলেছেন বেদ বিরুদ্ধ স্মৃতি হলে তা পরিত্যাজ্য৷

মহর্ষি গৌতম তাঁর ন্যায় দর্শনের ২/১/৬৯ সূত্রে বলেছে বেদ সর্বোচ্চ প্রমাণ।

 

মীমাংসা সূত্রে ঋর্ষি জৈমিনি বলেছে,

"স্মৃতিশাস্ত্র সমূহ ততক্ষণ পর্যন্ত ই গ্রহণীয় যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বেদের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়৷" (মী. সূ.২/৩/৩)

আমি আশা করি আপনারা সকলেই জানেন , বেদ অধ্যায়ন করার অধিকার সকলের‌ই আছে, জাতি, বর্ন, ও লিঙ্গ নির্বিশেষে ।

যথেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ।

ব্রহ্ম রাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্য্যায় চ স্বায় চারণায় চ।।

প্রিয়ো দেবা নাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ।

ভূয়াসময়ং মে কাম সমৃধ্যতামুপ।। যজুর্বেদ ২৬/২

অর্থাৎ - আমি যেমন করে এই ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সমস্ত জনগণকে এই কল্যাণদায়িনী পবিত্র বেদমন্ত্র বলছি, তোমরা তেমনি কাজ কর। বেদবাণীর উপদেশ পালন করে আমি বিদ্বানের প্রিয় হয়েছি, বেদবিদ্যা দানের জন্য দানশীল পুরুষের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও এমনই কর। বেদবিদ্যার প্রচার হোক, বেদবিদ্যা গ্রহণ ও প্রচার দ্বারা মোক্ষ লাভ কর।

এবার দেখা যাক বেদ কিভাবে নারীদের সম্বোধন করছেন

 

ঋগ্বেদ ১০/১৫৯/২  - এই মন্ত্রে লেখা আছে স্পষ্টভাবে যে

* -  নারী হলেন জ্ঞানবতী ,

*-নারী হলেন ধৈর্য শালিনী ,

*- নারী হলেন শত্রু নাশিনী ,

যার অর্থ, এই যে একজন নারী ততটাই যোগ্য, যতটা একজন পুরুষ ।

ইসলামে একজন নারী কখনোই Leader হতে পারবে না - কিন্তু সনাতন ধর্মে একজন নারী যোদ্ধা হয়ে শত্রু নাশকরা ক্ষমতা রাখেন

 

ব্যাখা ১ - যখন একজন নারী জ্ঞানবতী ,তখন তিনি অবশ্যই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সাইন্টিস্ট ইত্যাদি হতে পারেন

ব্যাখা ২- যখন একজন নারী ধৈর্য শালিনী ,অর্থাৎ উনি নিশ্চয়ই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবেন , অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন।

ব্যাখা ৩- যখন একজন নারী শত্রু নাশিনী , অর্থাৎ উনি একজন যোদ্ধাও হতে পারেন । অতএব উনি একজন আর্মি হতেই পারেন । ( ভারত বর্ষে বিমান বাহিনীতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের থেকে সবথেকে বেশি নারী সৈন আছে )  তাছাড়া পবিত্র বেদ বলছেন  -

, আমাদের সমাজে এমন অনেক জায়গাতে মেয়েদের বিভিন্ন কুৎসিৎ নামে ডাকা হয়ে থাকে কিন্তু পবিত্র বেদ অথর্ববেদে ১৪/২/২৮ -এ , মঙ্গলময়ী বলে সম্মোধন করেছেন নারী দের ।

তাছাড়া অথর্ববেদের ১৪/২/২ - স্পষ্ট লেখা আছে

এই নারী হলো তেজস্বিনী ,কারন - মহা তেজস্বী পরমাত্মা (ঈশ্বর ) স্বয়ং নারীকে তেজ প্রদান করেছেন ।

 

অথর্ববেদ ১৪/২/২৬ - এই মন্ত্রে নারীকে বলা হয়েছে

১- নারী হলো কল্যাণ কারিণী

২- নারী হলো শাশুড়ির আনন্দ দায়িনি

৩-শশুরের শান্তি দায়িনী

৪- গৃহের শোভাবর্ধনকারীনি

সমাজ সর্বদাই পুরুষকে নারীর থেকে বেশি গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে এসেছে,

কিন্তু আসলেই কি তাই ?

না, পবিত্র বেদ বলেন:

হে দম্পতি (স্বামী ও স্ত্রী ) , তোমরা একসাথে থাকো , তোমরা পৃথক হইও না , -অথর্ববেদ ১৪/১/২২

 

স্বামী আর স্ত্রী এক , তারা একে অপরের পরিপূরক , তাঁরা দ্বিতীয় নয় ,

এইজন্যই বেদ বলছেন -  স্বামী যেমন জ্ঞানী  , স্ত্রী ও তেমন জ্ঞানী । স্বামী ঋগবেদ মন্ত্র ,তো স্ত্রী সাম বেদ মন্ত্র ।  স্বামী পৃথিবী লোক ,তো স্ত্রী দ্যুলোক ।  অথর্ববেদ -১৪/২/৭১

অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট হয়, পবিত্র বেদ স্ত্রীকে ততটাই মর্যাদা দেয় যতটা একজন পুরুষকে দেওয়া হয় ।

উপাসনা অর্থাৎ যজ্ঞের ক্ষেত্রে আমাদের বেদমাতা বলছেন --  যে পতি পত্নী একসঙ্গে যেন যজ্ঞ করে , উপাসনার দ্বারা তাদের মন পরমাত্মার দিকে ধাবিত হয় এবং পরমাত্মার আশ্রয়ে সব কাজ করে  - ঋগ্বেদ ৮/৩১/৫

 

অথচ, ইসলাম ধর্মে, নারীর মসজিদে প্রবেশ‌ই নিষেধ।

 

বহু প্রাচীন সময়ে বিধবা বিবাহ কে সমর্থন না করা হলেও,,,

বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে পবিত্র বেদ বলেন

- হে মনুষ্য , এই নারী পুনরায় বিবাহ করার আকাঙ্ক্ষাই মৃত পতি কে ছেড়ে তোমার কাছে এসেছে , এই নারী সনাতন ধর্ম পালনকারী , একে তুমি গ্রহণ করো -- অথর্ববেদ ১৮/৩/১

তাছাড়া আরো বিভিন্ন মন্ত্রে বিধবা বিবাহের কথা লেখা আছে , যেমন - অথর্ববেদ ১৮/৩/২

যখন আমি অধ্যায়ন করি নারীর বিষয়ে পবিত্র বেদের অভিমত !

তখন, বেদের একটি মন্ত্র আমাকে নিশ্চিত করে দেয়, পবিত্র বেদ, পুরুষের থেকে নারীকেই সবথেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন

মন্ত্রটি নিচে উল্লেখ করা হলো -

নারী এতটাই পবিত্র যে ,

আমাদের প্রাণের মাতৃভূমি , মাতৃভাষা  ও মাতৃ সভ্যতা  -এই তিনটি জিনিসের জন্য প্রতিটি জাতি প্রাণ দিয়েছে , এই মহান অমূল্য এবং সবথেকে প্রিয় "মাতৃভাষা , মাতৃভূমি এবং মাতৃ সভ্যতাকে" নারীর মতো হতে বলেছেন আমাদের বেদমাতা - যজুর্বেদ ২০/৪৩ -এ ।

সর্বশেষ এটাই বলবো,  পবিত্র বেদের দৃষ্টি কোণে, নারী-পুরুষ - এই বিষয়গুলি খুবই নগণ্য ।

আমাদের জীবনে সবথেকে বড় উপলব্ধি এটাই যে আমরা, আত্মা ।

এবং আমাদের লক্ষ্যই মোক্ষ লাভ করা ।

 

ওঁ-কারই ধনু, জীবাত্মাই বাণ এবং ব্রহ্ম উক্ত বানের লক্ষ্য বলিয়া কথিত হন। অপ্রমত্ত হইয়া সেই লক্ষ্যকে ভেদ করিতে হইবে। লক্ষ্যভেদের পর ব্রহ্মের সহিত একীভূত হইবে।

(মুণ্ডক উপনিষদ: ২/২/৪)

এবং, ব্রহ্মকে লাভ করিবার যত উপায় আছে তার মধ্য

ওঁ-কারই শ্রেষ্ঠ, এটিই ব্রহ্মের প্রকৃষ্ট জ্ঞাপক। ইহাই ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায়।

(কঠ উপনিষদ: ১/২/১৭)

 

আজকের মত এটুকুই ছিলো এই বিষয়ে ক্লাস ।

আপনাদের সকলের প্রতি আমার পরামর্শ এই, জ্ঞান অর্জনে সময়কে ব্যবহার করুন । বৈদিক ধর্মকে জানুন আরো গভীরভাবে।

 

  নমস্কার 🙏🏼

 

জীবাত্মাঃ

 

ছান্দোগ্য উপনিষদে জীবাত্মাকে বোঝাতে বলা হয়েছে 'তত্ত্বমসি' অর্থাৎ তুমিই সেই। ছান্দোগ্য উপনিষদ্ ষষ্ঠ অধ্যায় একাদশ খণ্ডে বৃক্ষের জীবন মৃত্যুর দৃষ্টান্ত দিয়ে জীবাত্মার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে, "হে সৌম্য! এই বিশাল বৃক্ষের মূলে, মাঝখানে বা মাথার দিকে যদি কেউ আঘাত করে, তবে এই বৃক্ষ কেবল রস ক্ষরণ করে বেঁচে থাকে। এই বৃক্ষ জীবাত্মা কর্তৃক অনুব্যাপ্ত হয়ে অবিরাম রসপান করে সানন্দে অবস্থান করে। তবে যদি জীবাত্মা এই বৃক্ষের এক শাখা পরিত্যাগ করে, তবে সেই শাখা শুকিয়ে যায়, যদি দ্বিতীয় শাখা পরিত্যাগ করে, সেটিও শুকিয়ে যায়, এবং যদি সমস্তই পরিত্যাগ করে, তাহলে সমস্ত বৃক্ষই শুকিয়ে যায়। তুমি সেই জীব।"

 

জীবাত্মা শরীর থেকে ভিন্ন। কারণ আমরা নিজেকে বোঝাতে কখনো নিজের দেহকে নির্দেশ করি না৷ আমরা বলি 'আমার দেহ', 'আমার হাত', 'আমার পা'। ফলে এই দেহ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আমি নই।

 

আমি কে? এই আমিই হলো আত্মা [সাংখ্য ৬।৩]।

 

"ইচ্ছাদ্বেষপ্রযত্নসুখদুঃখজ্ঞানান্যাত্মনো লিঙ্গানি।" [ন্যায়০ ১।১।১০]

 

অর্থাৎ; ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন [কর্ম ও চেষ্টা], সুখ-দুঃখ, জ্ঞান এগুলি জীবাত্মার চিহ্ন।

কিশোর [কুমিল্লা]

কিশোর দাশ অনিক

জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার প্রথম পার্থক্য হল জীবাত্মা ভোক্তা, আর পরমাত্মা অভোক্তা।

 

আত্মার আমাদের দেহে অবস্থানঃ শাস্ত্রে বলা আছে এই আত্মা আমাদের হৃদয় গুহাতে থাকে। তবে আমরা হৃদয় বলতে হৃৎপিণ্ড বললেও বৈদিক শাস্ত্রে হৃদয় শব্দ দ্বারা মস্তিষ্ক ও হার্ট উভয়কেই নির্দেশ করে [প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে]। কিন্তু আত্মার বাসস্থান সেই হৃদয় গুহা এক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক [ছান্দোগ্য ৮।৩।৩, বৃহদারণ্যক ৪।৩।৭]। এই ক্ষুদ্র আত্মা প্রাণীর মস্তিষ্কে অবস্থান করে সমগ্র দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইন্দ্রিয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের, স্মৃতির, জ্ঞানের প্রভৃতির সংযোগ ঘটায়, সমন্বয় করে, নিয়ন্ত্রণ করে৷

 

অর্থাৎ আত্মা মস্তিষ্কেরও মস্তিষ্ক [ন্যায় ৩।১।১, ৭, ১২]।

 

২য় পার্থক্যঃ ব্রহ্ম সচ্চিদানন্দ। তৈত্তিরীয় উপনিষদে [২।১।১]‌ বলা হচ্ছে, "সত্যম্‌ জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম।"  এই বাক্যে ব্রহ্মের তিনটি বিশেষণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য, জ্ঞানস্বরূপ এবং অনন্ত।  যদি বলা হয় যে, "সত্যং ব্রহ্ম" অর্থাৎ সত্যই ব্রহ্ম, তাহলে এই অর্থের ব্যাপ্তি জীব এবং প্রকৃতি পর্যন্ত যায়, কেননা তারাও সত্য। যদি "জ্ঞানং ব্রহ্ম" অর্থাৎ ব্রহ্মকে জ্ঞানস্বরূপ বলা হয়, তাহলে এই অর্থ জীব পক্ষেও হতে পারে কারণ জীবও জ্ঞানবান। এজন্য এর নিবৃত্তির জন্য বলা হয়েছে "অনন্তম্ ব্রহ্ম" অর্থাৎ ব্রহ্ম জীবের ন্যায় পরিচ্ছিন্ন নন।

 

জীবাত্মা আনন্দময় নয়। জীবাত্মা আনন্দময় নয় বলেই সে মোক্ষ বা পরমাত্মাকে লাভ করতে চায়। আনন্দময় পরমাত্মাকে জেনে সে পরমানন্দ ভোগ করতে চায়, কারণ পরমাত্মাই হলেন একমাত্র আনন্দের উৎস। জাগতিক আনন্দ ক্ষীণ, কিন্তু পরমাত্মাকে প্রাপ্তির আনন্দ অসীম।

 

"রসো বৈ সঃ৷ রসং হ্যেবায়ং লব্ধ্বা-আনন্দী ভবতি।"

[তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২।৭]

অর্থাৎ; তিনি [পরমাত্মা] আনন্দময়। তাঁকে লাভ করে জীবাত্মা আনন্দবান হয় ।

কিশোর [কুমিল্লা]

কিশোর দাশ অনিক

প্রকৃতিঃ

 

প্রকৃতির স্বরূপঃ প্রকৃতি সত্ত্ব, রজঃ, তমো এই ত্রিগুণাত্মক। "সত্ত্বরজস্তমসাং সাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ" [সাংখ্যদর্শন ১।৬১]

 

পূর্বোল্লিখিত শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের উদাহরণেও [৪।৬]‌ প্রকৃতিকে বলা হয়েছে "লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং"। অনাদি প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক হওয়ার কারণে এই শ্লোকে প্রকৃতিকে লোহিত, শুক্ল এবং কৃষ্ণ এই ত্রিবর্ণযুক্তা বলা হয়েছেসত্ত্বগুণ শুক্লবর্ণ, রজোগুণ লোহিত বর্ণ এবং তমোগুণ কৃষ্ণবর্ণ।

 

Science এর দৃষ্টিতে আমরা শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি শুনেছি ও অনাদি অবিনশ্বর শক্তি সম্বন্ধে জানি। এই শক্তিই শাস্ত্রানুযায়ী প্রকৃতি।

প্রকৃতির উপাদান কারণত্বঃ

 

"প্রকৃতের্মহান্ মহতোহঙ্কারঃ অহঙ্কারাৎ পঞ্চতন্মাত্রণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ং তন্মাত্রেভ্যঃ স্থুলভূতানিপুরুষঃ ইতি পঞ্চবিংশতির্গণঃ।" [সাংখ্যদর্শন ১।৬১]

অর্থাৎ; সত্ত্ব, রজঃ, তমো সাম্যাবস্থা যাকে প্রকৃতি বলা যায়, সেই প্রকৃতি থেকে মহত্তত্ত্ব, মহত্তত্ত্ব থেকে অহংকার নামের প্রকৃতির দ্বিতীয় বিকার, অহংকার থেকে বাহ্য জগতের পাঁচ তন্মাত্র অর্থাৎ সূক্ষ্ম ভূত তথা দেহে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় উভয়ই উৎপন্ন হয় এবং তন্মাত্র অর্থাৎ সূক্ষ্মভূত থেকে পৃথিব্যাদি স্থূল ভূত ব্যক্ত হয়।

 

ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত বস্তুসমূহ-

 

[১]  কারণরূপ প্রকৃতি

 

[২-৬] সূক্ষ্ম ভূত

 

[২] মহত্তত্ত্ব

 

[৩] অহংকার

 

[৪] ৫ তন্মাত্রা [শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ]

 

[৫] মন

 

[৬] দশ ইন্দ্রিয়

 

[৭] পঞ্চ স্থূল ভূত [আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী]

কিশোর [কুমিল্লা]

কিশোর দাশ অনিক

শরীরের তাদের নাম-

 

[১] কারণ শরীর

 

[২-৭] সূক্ষ্ম শরীর

 

[২] বুদ্ধি

 

[৩] অহংকার

 

[৪] ইন্দ্রিয় বিষয় [শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ]

 

[৫] মন

 

[৬] দশ ইন্দ্রিয়

 

[৭] স্থূল শরীর

 

তিন কারণ তত্ত্বঃ এই জগতের প্রতিটি বস্তুর কারণ তিন প্রকার- নিমিত্ত কারণ, উপাদান কারণ ও সাধারণ কারণ।

 

উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সামনে একটি কলস আছে। কলসটির উপাদান কারণ হল মাটি, যার দ্বারা পাত্রটি তৈরি করা হয়েছে। নিমিত্ত কারণ হলো কুমার, যিনি কলসটি তৈরি করেছেন। সাধারণ কারণ হলো চাকা ইত্যাদি, যার সাহায্যে কুমার কলসটি তৈরি করেছেন। ইংরেজিতে উপাদান কারণকে Material cause, নিমিত্ত কারণকে Efficient cause এবং সাধারণ কারণকে Formal cause বলা হয়।

 

প্রশ্ন হলো, কলসের মতো সৃষ্টির এই তিনটি কারণ কী কী?

 

[ক] সৃষ্টির উপাদান কারণ  [Material cause] - সৃষ্টির উপাদান কারণ, আমাদের দর্শন অনুসারে, পাঁচটি মহাভূত - পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু, আকাশ। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি মূল কারণ নাকি এগুলোরও কোন কারণ আছে? পৃথিবীকে মূল কারণ বলা যায় না কারণ এতে অনেক জিনিস আছে - মাটি, সোনা, রূপা, তামা ইত্যাদি। এগুলিও মূল কারণ নয়, এগুলি পরমাণু দিয়ে তৈরি। এই ভৌত পদার্থগুলো বিশ্লেষণ করে বর্তমান বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, এরকম ১১৮ টি মৌলিক ভৌতিক তত্ত্ব আছে, যাদের সংযোগ-বিয়োগ থেকে সমস্ত ভৌতিক পদার্থ তৈরি হয়।

 

এই থেকে ১১৮ টি মৌলিক তত্ত্ব বিশ্লেষণ করার সময় বিজ্ঞান এই সিদ্ধান্তে এসেছিল যে তারাও নিজেরা মূলতত্ত্ব নয়  - এগুলি তিন ধরণের অতিপারমাণবিক কণার বিভিন্ন ধরণের সমন্বয় দ্বারা তৈরি, যাদের নাম তারা ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, বিজ্ঞান এই ফলাফলে পৌঁছেছে যে পদার্থ [Matter] এর কোন স্বাধীন সত্তা নেই, এটি কেবল পদার্থ, পদার্থ ও শক্তি [Energy] একে অপরের রূপান্তর। ফলাফলটি হলো যে পার্থিব, জলীয়, তেজীয়, বায়বীয় বস্তুর মূল কারণ অনুসন্ধান করতে করতে শেষমেশ আমরা তাদের মূল উপাদান কারণ হিসেবে শক্তিতে পৌঁছেছি।

 

এখন আবার একই প্রশ্ন থেকে যায় যে, তার মূল উপাদান কারণ কী? এর আদিতে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম শূন্যতার [False Vacuum] অনুকল্প প্রদান করছেন, যা প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়। কিন্তু সেই অনাদি ও অবিনশ্বর শক্তির কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চুপ। বিজ্ঞানীরা শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতিতে বলেন, শক্তির কোনো আদি বা ধ্বংস নেই। কেবল রূপান্তর রয়েছে।

এমন অবস্থায় আমরা কী বলব? আমরা অনাদি তত্ত্বকে যা বলব, তা হচ্ছে 'স্বয়ম্ভূ' - এর অন্য কোনো কারণ নেই। সেই আদি কারণ নিত্য, এটি কোনো উপাদান কারণের দ্বারা সৃষ্টি হয় না, এটি নিজে থেকেই আছে। বিজ্ঞান যে ভৌতিক বস্তুর জন্য কোয়ান্টাম শূন্যতা শব্দটি ব্যবহার করে - সাংখ্যবাদীগণ এর জন্য 'প্রকৃতি' শব্দটি ব্যবহার করেন। তারা বলে যে 'প্রকৃতি' চিরন্তন, 'স্বয়ম্ভূ', এটি স্বয়ং আছে, এটি কেউ সৃষ্টি করেনি। ভারতীয় দার্শনিক চিন্তা মতাদর্শ সাংখ্যের চেয়েও এগিয়ে যায়।

 

[খ] সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ [Efficient cause] - মূল উপাদান কারণের অনুসন্ধান করতে করতে যেমন 'স্বয়ম্ভূ' - এই উপাদান কারণের কাছে পৌঁছে যাত্রা থেমে যায়, একইভাবে নিমিত্ত কারণের অনুসন্ধান করতে করতেও 'স্বয়ম্ভূ' এই নিমিত্ত কারণে পৌঁছে অনুসন্ধান সমাপ্ত হয়ে যায়। কলসের নিমিত্ত কারণ হলো কুমার, কুমারের কারণ তার পিতা-মাতা, তার কারণের কারণ তার পিতা-মাতা, এই অনুসন্ধান চলতেই থাকবে।

 

সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ কে? শাস্ত্রে সৃষ্টির কারণ বলা হয় ঈশ্বরকে। প্রশ্ন জাগে যে ঈশ্বরের কারণ কে, কে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন? যদি আমরা এই অনুসন্ধানে আরও এবং আরও এগিয়ে যাই, তাহলে আমাদের কোথাও থামতে হবে, যেখানে আমাদের বলতে হবে যে তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তিনি নিজে থেকেই আছেন, তিনি 'স্বয়ম্ভূ'।

 

[গ] সৃষ্টির সাধারণ কারণ [Formal cause] - উপাদান, নিমিত্ত তথা সাধারণ কারণের সংযোগ ছাড়া সৃষ্টির রচনা হতে পারে না। যদি একটি পাত্র তৈরি করা হয়, তার জন্য মাটির প্রয়োজন, একজন কুমারের থাকা আবশ্যক, পাশাপাশি অন্যান্য সরঞ্জাম এবং উদ্দেশ্যও প্রয়োজনীয়। কাদামাটি, চাকা ইত্যাদি ছাড়াও সহায়ক কারণ এবং পাত্রের ব্যবহার কী হবে, কার জন্য এটি উপযোগী হবে, তাদের উদ্দেশ্য কী হবে - এই সবগুলিও গুরুত্বপূর্ণ।

 

সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত এই কারণগুলি অনুসন্ধান করার সময়, প্রশ্ন ওঠে যে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? কার উদ্দেশ্যে এই সৃষ্টি রচিত হয়েছে? স্পষ্ট উত্তর হলো যে, যিনি সৃষ্টিকে উপভোগ করবেন তার উদ্দেশ্যে।

 

আজকের আলোচনা এখানেই সমাপ্ত।

 

🔸নমস্কার  আজকের বেদবাণী-

 

🌼অদব্ধানি বরুণস্য ব্রতানি🌼

️ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮

 

পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়।

 

বেদ ও কুসংস্কার।

 

🔰 অস্পৃশ্যতা

গত কয়েকশত বছরে যখন বেদজ্ঞানের অভাবকে কাজে লাগিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী, ধর্মব্যবসায়ী ও তথাকথিত জন্মগত ব্রাহ্মণ পরিচয়ধারী, যারা কিনা দস্যু থেকেও অধম, তারা তৈরি করেছিল অস্পৃশ্যতা নামক জঘন্য প্রথা। অপর বর্ণের রান্না খাবার খেতো না। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া তো দূরের কথা, অনেকেই একে অপরকে নিজেদের বানানো ছোট জাত বিবেচনা করে স্পর্শ ও করত না।

 

অথচ পবিত্র বেদ বলেছে-

 

 "সমানী প্রপা সহ আবোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি।" [অথর্ববেদ ৩।৩০।৬]

 

সরলার্থঃ তোমাদের পান একসঙ্গে হোক, ভোজনও একসঙ্গে হোক।  তোমাদের এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করেছি।

 

প্রাচীনকালে রাজসূয়াদি যজ্ঞে চার বর্ণ একসঙ্গে এক পংক্তিতে বসেই আহার করত।

 

মহর্ষি আপস্তম্ব বলেছেন  “আর্যধিষ্ঠীতা বা শূদ্রা সংস্কর্ত্তার স্যুঃ [আ০ ধ০ ২।২।৩।৪] 

 

বিদ্বানদের অধ্যক্ষতায় শূদ্রেরাই রন্ধন করবে। তখন শূদ্র অর্থে নিরেট মূর্খ বুঝাত ।

 

মহর্ষি মনু নিজেও বিধান দিয়েছেন যে, শূদ্রগণ পরিচারক কর্মদ্বারা জীবিকা অর্জনে অক্ষম হলে সূপকার কর্ম্ম অর্থাৎ পাচকগিরি করে পরিবার প্রতিপালন করবে  [১০।৯৯] ।

 

মহর্ষি আপস্তম্ব নিজ ধর্মসূত্রে ভক্ষ্যাভক্ষ্যের বর্ণনায় প্রশ্নোত্তর রূপে লিখেছেন  “কার অন্ন গ্রহণ করা যাবে ?"

 

কম্ব ঋষি উত্তর করলেন"যে খাওয়াতে চায়।”‌ কৌৎস ঋষি উত্তর করলেন-  "যিনি পবিত্র শুদ্ধাচারী, তাঁর অন্ন খেতে হবে।" বার্যায়ণি ঋষি উত্তর করলেন- “যে কেউ দিলেই তার অন্ন খেতে হবে।"  তখন আপস্তম্ব ঋষি বললেন- "স্বধর্মে স্থির সর্ববর্ণের অন্নই গ্রহণ করা যায়।" [আপ০ ধ০ সূ০ ৪।১।৬-১৯]

 

🔰 রাশি, হস্তরেখা ও ভাগ্যগণনা।

 

আমাদের সমাজে ভাগ্য নির্ধারণের জন্য রাশিফল, হস্তরেখা দেখা ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। রাশি বা হস্তরেখার সাথে সাথে ভাগ্যের কোনো সম্পর্কই নেই বা তাবিজকবচ, মারণ-উচাটন, বশীকরণ, পাথর ও আংটির মাধ্যমে ভাগ্য পাল্টানো সম্ভব নয়।

 

[অথর্ব০৭।৫০।৮] এ বলা আছে, আমার ডানহাতে কর্ম আর বামহাতে বিজয়।

 

এছাড়া [ঋ০ ১০।৬০।১২]  বলা হয়েছে-

দুটো হাত দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোলো।

 

যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণও গীতায় কর্মের ওপর জোর দিয়েছেন। ফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে নিষ্কার কর্ম করতে বলেছেন।

 

অর্থাৎ, কর্ম আমাদের ফল নির্ধারণ করে, রাশি বা হস্তরেখা নয়। রাশি বর্তমান তারিখের মতো সময় নির্ধারণের একটি মাধ্যম। আর হস্তরেখা আঙ্গিক গঠন বা বৈশিষ্ট্য মাত্র। বেদাঙ্গ জ্যোতিষ গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথ সংক্রান্ত বিজ্ঞান, হাতের রেখা দিয়ে ভাগ্য বিচারের অপবিজ্ঞান না।

 

ঈশ্বর কখনো রাশি বা হস্তরেখা অনুযায়ী একেকজনের ভাগ্য একেকরকম করে পক্ষপাতিত্ব করেন না। ফল।ভাগ্য তো আমাদের কর্মের ওপরেই নির্ভরশীল। আজও সমাজে কিছু লোক আছে যারা সহজসরল মানুষদের ঠকিয়ে ছলচাতুরি করে অর্থ আদায় করছে।

 

এই বিষয়ে মনুস্মৃতি কী বলছে দেখে নেই-

 

উৎকোচ [ঘুষ গ্রহণ করে কাজ সম্পাদন করে দেবে বলে যারা আশ্বাস দেয়],

ঔপধিক [ভয়ভীতি দেখিয়ে যারা প্রতারণা করে],

মঙ্গলাদেশবৃত্তি [জ্যোতিষ যারা মঙ্গল বা অমঙ্গল ভবিষ্যৎবাণী করে জীবিকা নির্বাহ করে],

বঞ্চক [যারা পরের প্রতারণার মাধ্যমে গ্রহণ করে, ভদ্র [যারা ভেতরের পাপ গোপন করে বাইরে অন্যরূপ আচরণ করে],

ঈক্ষণিক [যারা মানুষের হাতের রেখা দেখা শুভ অশুভ ফল নির্ধারণ করে জীবিকা নির্বাহ করে] এই প্রকারের লোককে প্রকাশ্য প্রতারক বলে জানবে।

[মনুস্মৃতি ৯।২৫৮]

 

তাই আসুন সত্যকে জানি। কুসংস্কার মুক্ত হই।

 

🔰 জাদুটোনা ও তাবিজ কবচ।

 

অনেকে মনে করে, বেদে জাদুটোনা, তাবিজ-কবচ রয়েছে। কিন্তু তা কদাপি সত্য নয় ৷ বাস্তবতা হলো অথর্ববেদে অনেক ঔষধি বৃক্ষ ও ভেষজ উপাদানের কথা উল্লেখ আছে, যেমন পৃষ্ণা, পার্ণি, অপমার্গ, অঞ্জনা, অরুন্ধতি, পিপ্পলী, কেশ দৃংহিনী ইত্যাদি ৷ এগুলো বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ৷

যেগুলোকে তাবিজ কবচ ও কালো জাদুর দ্রব্য বলে মনে করা হয়, এগুলো আসলে উপরে উল্লেখিত ভেষজ বা চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু না ৷ 'ঔষধি', 'বনস্পতি', 'ভেষজম্' ইত্যাদি শব্দের ঘন ঘন ব্যবহারই এটা প্রমাণ করে দেয়৷ বর্ণমাদি, দ্রপামণি ইত্যাদি ভেষজের উল্লেখ নিচের মন্ত্রে দেয়া হলোঃ

 

অযং মণির্বরনো বিশ্বভেষজঃ ॥ [অথর্ব ১০।৩।৩]

 

ততো নো বারযিষ্যতে যং দেবো বনস্পতিঃ ॥  [অথর্ব ১০।৩।৮]

 

দর্ভৌয় উগ্র ঔষধীঃ ॥ [অথর্ব ১৯।৩৮।১]

 

বেদ যৌক্তিক বিশ্বাসে প্রাধান্য দেয় এবং কোনো প্রকার অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারকে সমর্থন করে না। জাদু টোনা ইত্যাদি ধূর্ত কপটদের দ্বারা প্রচলিত এবং আমাদের ধর্মের সাধারণ মানুষের বেদ জ্ঞান না থাকার দরুণ তাদের এই ব্যবসাকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বেদের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়।

 

🔰 পিরিয়ড ও অশৌচ

 

নারীদের ঋতুস্রাবকালীন সময়ে কি তারা অশুচি ও অপবিত্র হয়ে যায়- তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন!

 

ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন বর্বর ধর্মমতসমূহ এই সময়ে স্রষ্টার উপাসনা করা বা ধর্মীয় কাজকর্ম নিষিদ্ধ করেছে নারীকে অপবিত্র ভেবে।

 

সর্বোৎকৃষ্ট মানবতাবাদী বৈদিক ধর্য এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আর সনাতন ধর্মশাস্ত্র বিশেষ করে বেদে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা দান করা হয়েছে। বেদে নারীদের সর্বদা শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে।

 

পবিত্র বেদে সরাসরি ঋতুকালীন বিধিবিধান বিস্তারিত নেই। ঋতুকালীন বিধিনিষেধ ও নারীদের শুদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত আছে ধর্মসূত্র (বেদাঙ্গ কল্পের অন্তর্গত বিধানসমগ্র) ও স্মৃতিতে।

 

নারীজাতি সোম থেকে শুদ্ধতাপ্রাপ্ত, গন্ধর্বদের থেকে সুমিষ্ট বাক্য প্রাপ্ত, অগ্নির কাছ থেকে শুদ্ধতাপ্রাপ্ত তাই নারীরা সর্বদা শুদ্ধ। (যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি ৭১)

 

নারীদের অনন্য পবিত্রতা রয়েছে। তারা কখনোই পুরোপুরি অপবিত্র হন না। মাসে মাসে কিছুদিনের অস্থায়ী রজোচক্র তাদের মনের পাপ ধুয়েমুছে দেয়। নারীরা তিন ধরনের দেবসত্তার সাথে সম্পর্কিত। প্রথমে সোম (চন্দ্রের ন্যায় মাধুর্যময় ঈশ্বরের রূপ), গন্ধর্ব ও অগ্নি। এরপরে তারা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী। তাই আইন শাস্ত্রমতে তারা কখনোই অশুদ্ধ হতে পারে না।

 

নারীজাতি সোম থেকে শুদ্ধতাপ্রাপ্ত, গন্ধর্বদের থেকে সুমিষ্ট বাক্য প্রাপ্ত, অগ্নির কাছ থেকে শুদ্ধতাপ্রাপ্ত (সর্বাঙ্গে)। তাই নারীরা সবসময় কলুষতা থেকে মুক্ত। (বশিষ্ট ধর্মসূত্র ২৮।৪-৬)

 

ছাগ ও অশ্বের মুখাবয়ব শুদ্ধ, গো জাতির পৃষ্ঠদেশ শুদ্ধ, ব্রাহ্মণের পাদদেশ শুদ্ধ, কিন্তু নারী জাতির সবই শুদ্ধ (সকল অঙ্গ)। (বশিষ্ট ধর্মসূত্র ২৮।৯)

এ থেকে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে নারীরা কখনোই অপবিত্র নন। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে সাময়িক অসুবিধা তাদের সমস্ত মনের পাপ ধুয়েমুছে সাফ করে পবিত্রতা আরো বৃদ্ধি করে। ঋতুস্রাব চলাকালীন মেয়েদের দুর্বলতা, জ্বর, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। যদি তাদের শারীরিক সমস্যা না হয় তাহলে তারা ঈশ্বর উপাসনা অবশ্যই করতে পারবে।

 

আজকের স্বাধ্যায় আলোচনা এখানে সমাপ্ত।

 

আজকের স্বাধ্যায় টপিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবিক।

সকলে মনোযোগ দিয়ে আজকের স্বাধ্যায় টপিক টি পড়বেন।

 

আজকের আলোচ্য বিষয় :- সন্ধ্যা উপাসনা (শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামচন্দ্রের দ্বিসন্ধ্যা উপাসনা)

 

সন্ধ্যা শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘সন্ধ্যায়ন্তি সন্ধ্যায়তে বা পরব্রহ্ম য়স্যাং সা সন্ধ্যা 

 

অর্থাৎ যার মাধ্যমে পরমেশ্বরের ধ্যান করা হয়, সেটিই মূলতঃ ‘সন্ধ্যা । এজন্য রাত এবং দিনের সংযোগকালে দুই সন্ধ্যাবেলায় [সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পর] প্রত্যেক মানবেরই পরমেশ্বরের স্তুতি, প্রার্থনা এবং উপাসনা করা উচিত। বেদে বলা হয়েছে -

 

সায়ং সায়ং গৃহপতির্নো অগ্নিঃ প্রাতঃ প্রাতঃ সৌমনসস্য দাতা। বসোর্বসোর্বসুদান এধিবয়ংত্বেন্ধানাস্তন্বং পুষেম।।

 

 [অথর্ব০ ১৯।৫৫।৩]

 

অর্থাৎ প্রতিনিয়ত সায়াহ্নে [দিনের শেষে] এবং প্রাতঃকালে [ভোরবেলায় ব্রাহ্মমুহূর্তে] আমাদের গৃহের রক্ষক তেজস্বী ঈশ্বর! তুমি উত্তম ধন এবং সুখের দাতা হও। তোমাকে প্রকাশিত করে আমরা আমাদের শরীরকে পুষ্ট করি।

 

দুই বেলা সন্ধ্যা উপাসনার শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ

 

সকল শাস্ত্রেই দিনে দুই বেলা উপাসনা ও বিশেষ করে গায়ত্রী মন্ত্র জপের মাহাত্ম্য ধ্বনিত হয়েছে, এক হল প্রাতঃকালে সূর্য উদয়ের পূর্বে, আর দুই হল দিনের শেষে সায়াহ্নে দিন ও রাতের সন্ধিকালে। সূর্য উদয়ের পূর্বে দণ্ডায়মান হয়ে [ঘুম থেকে উঠে] গায়ত্রী মন্ত্র জপ সহ উপাসনা কর্ম করতে হবে এবং দিনের শেষে সূর্যাস্তের পরেও গায়ত্রী মন্ত্র জপ সহ উপাসনা করতে হবে।

 

বেদে বলা হয়েছে " দোষাবস্তর্ধিয়া বয়ম্" [ ঋ০ ১।১।৭ এবং সাম০ ১৪ ] অর্থাৎ আমরা প্রাত-সায়ংকালে সন্ধ্যোপাসনা করি।

 

এই ব্যাপারে মনুস্মৃতির ২।১০১-১০২ খুবই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে- "প্রাতঃসন্ধ্যাকালে সূর্যোদয়দর্শন পর্যন্ত সাবিত্রী [গায়ত্রী] জপ করতে করতে আসনে একস্থানে দণ্ডায়মান থাকবে এবং যে পর্যন্ত সম্যকরূপে নক্ষত্রমণ্ডলের দর্শন না হয়, ততক্ষণ আসনে সমাসীন হয়ে সায়ংসন্ধ্যার উপাসনা করবে

 

প্রাতঃসন্ধ্যাকালে দণ্ডায়মান হয়ে গায়ত্রী জপ করলে [ভুল বা অবহেলায় করা] রাত্রিকালীন সব পাপ বিনষ্ট হয়ে যায় এবং আসনে সমাসীন হয়ে সায়ংকালে গায়ত্রী জপ করলে দিবাকৃত সব [অজ্ঞানকৃত] পাপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।"

 

সন্ধ্যার প্রস্তুতিঃ  প্রথমে জল দ্বারা শরীর পরিষ্কার করে শরীরের বাহ্য শুদ্ধি এবং রাগ-দ্বেষ ইত্যাদিকে ত্যাগ পূর্বক শান্ত হয়ে অন্তরের শুদ্ধি করা প্রয়োজন। উপাসনার শুরুর পূর্বে প্রথমে হাত দিয়ে মার্জন করতে হবে অর্থাৎ, পরমেশ্বরের ধ্যান বা উপাসনার সময় কোন প্রকার আলস্য যেন না আসে, সেজন্য মাথা এবং চোখের ওপর জলের ছিটা দিতে হবে।

 

যদি আলস্য না আসে, তাহলে এসবের প্রয়োজন নেই। তারপর কমপক্ষে তিনবার প্রাণায়াম করতে হবে এবং প্রাণায়াম করার সময় ও৩ম্ জপ করতে হবে । ডান হাতের তালুতে একটু জল নিয়ে নিম্নবর্ণিত মন্ত্রে তিনবার আচমন করতে হবে। আচমনে আলস্য দূর ও কণ্ঠনালির শ্লেষ্মা নিবারণ হয়। জলের অভাবে শুধু মন্ত্রপাঠ করলেও চলবে।

 

 

" ও৩ম্ শং নো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে। শংয়োরভিস্রবন্তু নঃ। "

 

[ঋ০ ১০।৯।৪]

 

অর্থঃ হে সর্বব্যাপক পরমাত্মা! আমাদের আকাঙ্ক্ষিত আনন্দ লাভের জন্য এবং পূর্ণানন্দ প্রাপ্তির জন্য কল্যাণকারী হও। আমাদের ওপর সর্বদা সুখের বর্ষণ করো।

 

✅আচমনের পরে ইন্দ্রিয়স্পর্শ, মার্জন, প্রাণায়াম অঘমর্ষণ, উপস্থান মন্ত্র পাঠের পরবর্তীতে উপাসনার বাধ্যতামূলক ধাপ গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ। 

 

ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ। তৎ সবিতুর্বরেণ্যং। ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।  [যজু০ ৩৬।৩]

 

অর্থঃ পরমাত্মা প্রাণস্বরূপ, দুঃখনাশক এবং সুখস্বরূপ। জগৎ উৎপাদক দিব্যগুণযুক্ত পরমাত্মার সেই বরণীয় শুদ্ধ বিজ্ঞানময় স্বরূপকে আমরা সদা প্রেম ও ভক্তিপূর্বক ধ্যান করে নিজেদের আত্মাতে ধারণ করি, যিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে সকল মন্দকর্ম থেকে পৃথক করে সদা উত্তম কর্মে প্রবৃত্ত করেন।

শেষে সকল কর্ম ঈশ্বরের নিকট সমর্পণ করে নমস্কার মন্ত্রের মধ্য দিয়ে উপাসনা সমাপ্ত।

 

ধাপসমূহ বিস্তারিত জানতে পারেন, স্বাধ্যায় প্রকাশনী প্রকাশিত

 

বৈদিক সন্ধ্যোপাসনা বিধি বই‌ হতে।

 

বইয়ের Pdf:-

 

 

https://drive.google.com/file/d/1z-Ym-kP5JDjGpeUQ0YfdiXd3ZEF6HVMm/view?usp=drivesdk

 

 

ভিডিও:-

 

 

https://youtu.be/MS5IqLXtbh4

বৈদিক সন্ধ্যোপাসনাবিধি (স্বাধ্যায় প্রকাশনী).pdf

 

🔰 আমাদের আদর্শ শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণের নিত্য দ্বিসন্ধ্যা গায়ত্রী জপ ও উপাসনা 🙏

 

যারা সুমহান আর্য সভ্যতার অবিচল অনুসরণকারী এবং বেদবিহিতভাবে উপাসনা, নিত্যকর্ম করে, তারা বেদমন্ত্র উচ্চারণে সন্ধ্যা-উপাসনা করেন। কিন্তু সনাতন সমাজে উপাসনা পদ্ধতির বিভিন্ন তারতম্য দেখা যায়। একেক জন একেক ভাবে, একেক মন্ত্রে সকালে এবং সন্ধ্যায় উপাসনা করে। যেখানে অন্যান্য সকল ধর্মে সব মানুষ একসাথে প্রার্থনা করে একই নিয়মে সেখানে সনাতনদের মধ্যে এরকম তারতম্য কেন

 

শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হিসেবে পরিচিত বৈষ্ণব ভাইবোনরা মালা জপ করেন এবং কীর্তন করে থাকেন, অথচ শ্রীকৃষ্ণ নিজে কীভাবে উপাসনা করতেন❓

 

সকল সনাতন ধর্মালম্বীদের সেভাবেই উপাসনা করা সম্মত যেভাবে একদম আদিকাল থেকেই সকল সনাতনীরা উপাসনা করতেন। এই উপাসনা পদ্ধতি পবিত্র বেদেই লিপিবদ্ধ “ দ্বিসন্ধ্যা ” উপাসনা। বৈদিক সভ্যতার প্রাণপুরুষ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বা মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।

এরপর তিনি সকাল হতে রথে উপবেশন করে রওনা হলেন হস্তিনাপুরের দিকে। এভাবে চলতে চলতে - সূর্য রশ্মি আস্তে আস্তে অনুজ্জ্বল হয়ে এল,লোহিত হয়ে উঠল আদিত্য [সন্ধ্যা হয়ে এল],‌ রথ বৃকস্থল গ্রামে [পাণ্ডবরা যে ৫ টি গ্রাম দুর্যোধন থেকে চেয়েছিলেন তার একটি, বর্তমানে হরিয়ানার গুরগাঁও] এসে পৌঁছাল। তখন তিনি সন্ধ্যাপোসনার জন্য রথ থামালেন এবং যথাবিধি সন্ধ্যাপোসনা সম্পন্ন করলেন।

  [মহাভারত ৫।৮৪।২০-২২]

 

 

 

একইভাবে মহাভারত শান্তিপর্বের ১৫২।৭ এ আমরা দেখতে পাই শ্রীকৃষ্ণ ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে গায়ত্রী জপ করছেন, বৈদিক পদ্ধতিতে সন্ধ্যা করে হোমযজ্ঞ করছেন - মহাবাহু কৃষ্ণ শয্যা থেকে উঠে স্নান করে হস্তযুগল সংযোজন করে [নমস্কার ভঙ্গিতে] গায়ত্রী জপ করলেন [প্রাতঃসন্ধ্যা], হোমাগ্নি করলেন।

 

✅ঠিক একইভাবে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামকেও রামায়ণে বেশ কয়েকটি স্থানে বৈদিক সন্ধ্যাপোসনা, যজ্ঞ, মহামন্ত্র গায়ত্রী জপ এবং ধ্যান করতে দেখা যায়।

 

 

যেমন আদিকাণ্ড ২৩।১-৩ এ ঋষি বিশ্বামিত্র ভোর বেলায় ঘাসের উপর ঘুমন্ত শ্রী রাম ও শ্রী লক্ষণকে ডেকে দিচ্ছেন সান্ধ্যবন্দনা করার জন্য।বলছেন, অর্থাৎ মুনি বিশ্বামিত্র ঘাসের উপর ঘুমিয়ে থাকা দুই ভাইকে ডেকে তুললেন এই বলে,  হে কাকুৎস্থ [সূর্য বংশীয় প্রাচীন রাজা] এর বংশধর ! ওঠো। কৌশল্যা সৌভাগ্যিনী তোমার মত পুত্র পেয়ে, ওঠো। কর্তব্যং দৈবমাহ্নিকম্ -  প্রাতঃকালীন কর্তব্যকর্ম সন্ধ্যা উপাসনা করতে হবে।

 

তখন কী হলো ❓

" স্নাত্বা কৃতোদকৌ বীরৌ জেপতুঃ পরমং জপম্ "

 

- ঋষির স্নেহপূর্বক কথা শুনে মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব, নৃপতি রাম উঠলেন, আচমন করলেন এবং গায়ত্রী মন্ত্রে জপ ও ধ্যান করলেন।

 

তাই আসুন আমাদের মহান পথ প্রদর্শক শ্রী রাম ও শ্রী কৃষ্ণের আদর্শে জীবন গড়ে তুলি, বৈদিক সন্ধ্যা পদ্ধতিতে নিজেদের সুশৃঙ্খল করে তুলে মহামন্ত্র গায়ত্রী জপ, যজ্ঞ, ধ্যানাদি করি।

 

আজকের আলোচ্য বিষয় :-

বেদ ও আহারব্যবস্থা

 

আহার

 

অসাবি দেবং গোঋজীকমন্ধো ন্যস্মিন্নিন্দ্রো জনুষেমুবোচ।

 

বোধামসি ত্বা হয়র্শ্ব য়জ্ঞৈবোধা ন স্তোমমন্ধসো মদেষু॥

 

সামবেদ ৩১৩

 

সরলার্থঃ আহার সেটিই উত্তম যা কিনা উৎপাদন করা হয়েছে। আহার ভূমিমাতা থেকে উৎপন্ন শস্যাদিরই করা উচিত, সাথে গোদুগ্ধ। এই আহারই সাত্ত্বিক ও দৈবী সম্পত্তির জন্মদাতা। এই সাত্ত্বিক ভোজনে নিশ্চিতভাবেই, স্বভাবতই ইন্দ্রিয়সমূহের শাসক হওয়া যায়, দাস নয়। অর্থাৎ সাত্ত্বিক ভোজন দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করা যায়। পক্ষান্তরে রাজসিক ও তামসিক আহার ইন্দ্রিয়ের দাসত্বের কারণ। প্রভু উপদেশ দিচ্ছেন শীঘ্রতাযুক্ত ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বযুক্ত মানব! তোমাকে যজ্ঞসমূহ দ্বারা জ্ঞানযুক্ত করি। ভক্ত বলছেন, সাত্ত্বিক আহারের আনন্দে বিহ্বলিত আমাদের স্তুতি সমূহকেও জ্ঞাত হও। অর্থাৎ, সাত্ত্বিক আহারী মানব প্রভুকে বিস্মৃত হয় না। বরং সর্বদা স্মরণ করে।

 

ব্রীহিমত্তং যবমত্তমথো মাষমথো তিলম্। এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্টং পিতরং মাতরং চ ॥

অথর্ব০ ৬।১৪০।২

অর্থাৎ  চাউল, যব, মাষ এবং তিল ভক্ষণ কর। রমণীয়তার জন্য ইহাই তােমাদের জন্য বিহিত হয়েছে! পালক ও রক্ষককে ভক্ষণ কোরো না ,

 

পূরুষঘ্নং ক্ষয়দ্বীর সুম্নমস্মে তে অস্তু ঋ০ ১।১১৪।১০

 

অর্থাৎ মনুষ্যগণকে হত্যা এবং গো আদি উপকারী পশুসমূহের বিনাশকারী প্রাণীগণকে নির্মূল করে আপনার এবং আমাদের জন্য সুখ হোক ,

 

শর্ম যচ্ছত দ্বিপদে চতুষ্পদে ঋ০ ১০।৩৭।১১

 

অর্থাৎ দ্বিপদী-মনুষ্য এবং চতুষ্পদী-পশুগণের জন্য সুখ প্রদান করো ।

 

অগ্নি বা জল দ্বারা রন্ধনের নির্দেশ এবং কুতর্ক দ্বারাও মাংসাহার নিষিদ্ধকরণ -

 

যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্বং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি । যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উতো তেষামভিগূর্তির্ন ইন্বতু ॥ ঋ০ ১।১৬২।১২ অর্থাৎ যে মনুষ্যগণযাতে বিবিধ অন্নাদি পদার্থ বিদ্যমান সেই ভোজনকে রন্ধন করার ফলে উত্তম হওয়া খাদ্যকে সর্বদিক থেকে দর্শন করে বা যে জল দ্বারা রন্ধনকৃত বলা হয়ে থাকে  এবং যারা প্রাপ্ত হওয়া প্রাণীর  মাংস না প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তর্ক-বিতর্ক দ্বারা সেবন করে তাদের উদ্যম এবং সুগন্ধ আমাদের ব্যাপ্ত বা প্রাপ্ত হোক। হে বিদ্বান! তুমি এই রকমের অর্থাৎ মাংসাদি অভক্ষ্যসমূহকে ত্যাগ করার মাধ্যমে রোগসমূহকে নিরন্তর দূর করো।

 

বেদে মাংসাহারের নিষেধে অনেক নির্দেশনা রয়েছে যেমন-

 

যঃ পৌরুষেয়েণ ক্রবিষা সমঙ্ক্তে যো অশ্ব্যেন পশুনা যাতুধানঃ “

 

ঋ০ ১০।৮৭।১৬

 

অর্থাৎ যে যাতনা দানকারী দুষ্ট প্রাণী রয়েছে, যারা মানুষের অভ্যন্তরের মাংস দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করে; যে কিনা পশুসমূহের মধ্যে নিরপরাধ পশু দ্বারা নিজেকে উত্তমভাবে পরিপুষ্ট করে; যে  হত্যার অযোগ্য গোরুর দুগ্ধকে হরণ করে-নষ্ট করে-দূষিত করে;

 

ক্রব্যাদো মা তে হেত্যা মুক্ষত দৈব্যায়াঃ  অথর্ববেদ  ৮।৩।১৮ ,  ৫।২৯।১১ , “য আমং মাংসমদন্তি পৌরুষেয়ং চ যে ক্রবিঃ “

 

অথর্ব০ ৮।৬।২৩

 

অর্থাৎ যে কাঁচা মাংস খায় ও যে মনুষ্যের মাংস খায় এবং ক্লেশ প্রদানকারী গর্ভকেও  খেয়ে ফেলে; সেই দুষ্ট প্রাণীদের এখান থেকে বিনষ্ট করা হোক। মাংস ভক্ষকগণ ঈশ্বরের দিব্য গুণযুক্ত বজ্র তথা ন্যায়বিচার ও শৌর্যবীর্য দ্বারা রক্ষা পায় না৷

 

ব্রহ্মসূত্রে বলা আছে- আপৎকাল ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে বিচার বিবেচনা করতে হবে। "সর্ব অন্ন অনুমতিঃ প্রাণাত্যয়ে চ তদ্দর্শনাৎ।"

 

ব্রহ্মসূত্র ৩।৪।২৮

 

অর্থাৎ সর্বপ্রকার খাদ্য গ্রহণ করার অনুমতি কেবল জীবন বিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ স্মৃতিতে এরূপ নির্দেশ আছে।

 

বেদে যেকোনো প্রকারের মাংস আদি উৎসর্গ নিষিদ্ধ রয়েছে। কারণ ঈশ্বর রক্ত পিপাসু নন। তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কোন পশু হত্যার প্রয়োজন নেই। তাঁর উপাসনা আমরা করি কেবল আত্মশুদ্ধির জন্য। বৈদিক যজ্ঞ সর্বদাই পবিত্র সেখানে কোনোরূপ হত্যা সম্ভব নয়। সে জন্যই বেদ যজ্ঞকে অধ্বর সংজ্ঞা দিয়েছে।

 

নিরুক্তে [ ২।৭ ] অধ্বর শব্দের অর্থ বলা হয়েছে "অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতিহিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধ " অধ্বর = হিংসারহিত কর্ম অর্থাৎ যাতে কোনো রূপ হত্যা হয় না।

সজীব (চাঁদপুর)

 

রাজসূয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। অর্কাশ্বমেধাবুচ্ছিষ্ট জীবর্বহিভমদিন্তম।।

 

[অথর্ব০ ১১।৭।৭]

 

রাজসূয়, বাজপেয়, অগ্নিষ্টোম এইসব যজ্ঞ অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত। অর্ক এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রভুর মধ্যে স্থিত, যা জীবের বৃদ্ধিকারী এবং অত্যন্ত হর্ষদায়ক।

Write to স্বাধ্যায় - অগ্নিবীর ,‌ মেঘনা বিভাগ

 

অগ্নে যঃ যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বত বিশ্বতঃ পরিভূরসি। স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।।

[ঋ০ ১।১।৪]

 

হে পরমেশ্বর! তুমি অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত যজ্ঞকে সর্বত্র ব্যাপক হয়ে সব প্রকারে পালনকারী। এই হিংসারহিত যজ্ঞে বিদ্বান লোক সুখ প্রাপ্ত করে। যজ্ঞের জন্য অধ্বর [হিংসারহিত] শব্দের প্রয়োগ ঋগ্বেদ ১।১।৮, ১।১৪।২১, ১।১৯।১, ১।২৮।১, ৩।২১।১ এরূপ বহু স্থলে এসেছে।



🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏 🙏🙏🙏🙏🙏


 

 

 

 

 

ও৩ম্

নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়।

চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো,

জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।

[যজুর্বেদ ১৬।৩২]

 

নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।

নমস্কার। আজকের বেদমন্ত্র।

 

ত্বং চ সোম নো বশো জীবাতুং ন মরামহে।

প্রিয়স্তোত্রো বনস্পতিঃ।।৬৭।।

(ঋগ্বেদ ১।৯১।৬)

 

পদার্থঃ হে (সোম) সৎকর্মে প্রেরক প্রভো ! আপনি (নঃ) আমাদের (জীবাতুম্) জীবনের (বশঃ) কামনাকারী (প্রিয়স্তোত্রঃ) এবং যাঁর গুণের কথন প্রেম উৎপন্ন কারক এভাবে (বনস্পতিঃ) আপনি আপনার ভক্ত ও সেবনীয় পদার্থের পালনকারী। আপনাকে জেনে (ন মরামহে) আমার মৃত্যুকে প্রাপ্ত হই না তথাপি মোক্ষরূপী অমর অবস্থাকে প্রাপ্ত হই।

 

ভাবার্থঃ যে মনুষ্য পরমেশ্বরকে ভক্তি করেন এবং তাঁর বৈদিক আজ্ঞা অনুযায়ী নিজের জীবন গড়েন, তাঁর নিয়মানুকূলে চলেন, তিনি সম্পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত হন এবং এই ভৌতিক দেহকে ত্যাগ করে মুক্তিধাম প্রাপ্ত হন।

 

 

“নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায় ।

চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো, জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ ।”

—॥ যজুর্বেদ ১৬/৩২ ॥—

- নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে! 🙏

 

🔰  বৈদিক শাস্ত্রমতে ঈশ্বর কে?

 

যার গুণ, কর্ম ও স্বরূপ একমাত্র সত্য, যিনি চেতন মাত্র বস্তু তথা যিনি অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপক, অনাদি এবং অনন্ত,অপরাজেয় মৃত্যুহীন, আদি সত্য গুণ যুক্ত, যিনি স্বভাবত অবিনাশী, জ্ঞানী, আনন্দময়, শুদ্ধ, ন্যায়কারী, দয়ালু এবং জন্মরহিত, যিনি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, দুঃখ, আনন্দ, অজ্ঞতা, নশ্বর কর্ম, কর্মফল, জীবন, মৃত্যু এই সকলের উর্দ্ধে ; জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও প্রলয় তথা সর্ব জীবের পাপ পুণ্যের যথাযথ ফল দান করা যাহার স্বাভাবিক কর্ম,

যাকে বিদ্বানরা বহু নামে স্মরণ করেন, ওঁ যার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম — সেই পরমব্রহ্ম, পরমাত্মাই পরমেশ্বর ।

 

[ প্রমান স্বরূপ যজুর্বেদ - ৪০/৮ মন্ত্র , অথৰ্ববেদ – ১৩কান্ড,৪র্থ বর্গ, ২ মন্ত্র, ঋগবেদ ১০ম মন্ডল ৪৮ সুক্ত ৫ম মন্ত্র:  যোগ দর্শন ১.২৪। ]

 

প্রশ্নঃ বেদে কতজন ঈশ্বরের উল্লেখ আছে?

 

উত্তরঃ  বেদে সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। এবং বেদে এমন কোন মন্ত্র নেই যা বহু ঈশ্বরবাদকে সমর্থন করে।

 

•যজুর্বেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।

•ঋগবেদ ১০.৪৮.১: ঈশ্বর সর্বত্রই বিদ্যমান এবং বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে পরিচালিত করেন। পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই জয় ও শ্বাশত কারন প্রদান কারী। প্রতিটি আত্মা অবশ্যই তাঁকেই সন্ধান করবে যেমন করে একটি শিশু তারা বাবাকে খোঁজে। শুধুমাত্র তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও স্বর্গীয় সুখ প্রদান করেন।

 

•ঋগ্বেদ ১০ম,৪৯মন্ডল,১ম মন্ত্র : ঈশ্বরই সত্যের সন্ধানীদের সত্যজ্ঞান দিয়ে থাকেন। তিনিই শুধু জ্ঞানের প্রর্বতক এবং ধার্মিক ব্যাক্তিদের পরম সুখ লাভের জন্য পবিত্র কর্ম করতে উৎসাহী করেন। তিনিই একমাত্র জগতের সৃষ্টিকারী এবং এর পরিচালক।

 

• যজুর্বেদ ১৩অধ্যায়,৪র্থ মন্ত্র: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যন্যা দৈব সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।

বেদে এই রকম আরও অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে যেখানে এক মাত্র ঈশ্বরকেই ব্যাখ্যা করেছে।

 

বেদে উল্লিখিত রুদ্র বিষ্ণু, সরস্বতী, বিশ্বকর্মা দেবতারা তাহলে কি?

 

উত্তর :-  বেদের প্রত্যেকটি মন্ত্রেরই এক বা একাধিক দেবতা রয়েছে।পবিত্র বেদ সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব থাকায় আমরা অধিকাংশ মানুষ মনে করে এগুলো হল মানুষ আকৃতির বিভিন্ন দেবতা যাদেরকে ওই মন্ত্রটিতে স্তুতি করা হয়েছে। অথচ এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের ঘোষনা দেয়া পবিত্র বেদে এরকম কোন দেবতা ই নেই।

তাহলে প্রত্যেকটি মন্ত্রের সাথে উল্লেখিত এই দেবতাগুলো কি?

 

• সর্বানুক্রমনিতে ঋষি কাত্যায়ন মন্ত্রের দেবতা কি তার ব্যখ্যায় বলেছেন- "যা তেন উচ্চতে সা দেবতা" অর্থাৎ মন্ত্রের যে বিষয়বস্তু অর্থাৎ যা নিয়ে মন্ত্রে কথা বলা হয়েছে তাই ওই মন্ত্রের দেবতা।

• মহর্ষি যাস্কাযার্চ লিখিত বৈদিক শব্দকোষ ও ব্যকরন গ্রন্থ নিরুক্ত সাংহিতায় বলা হয়েছে- "যৎকাম ঋষির্যেস্যাং দেবতাযামার্থপত্যম্ ইচ্ছত্ স্তুতিং প্রযুক্তেতম্ দেবতঃ স মন্ত্রো ভবতি।।"

অর্থাৎ যখন ঈশ্বর কোন একটি বিষয়ের সম্বন্ধে আমাদের মন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষা দেন তখন মন্ত্রের সেই বিষয়টিকে দেবতা বলা হয়।

 

উদাহরনস্বরুপ ঋগ্বেদ ১০ম মন্ডল ১৫১ সুক্তের  দেবতা হল 'শ্রদ্ধা' এবং এই সুক্তের আলোচ্য বিষয় হল ঈশ্বর ও গুরুজনে শ্রদ্ধা বা সম্মান।

 

• ঋগ্বেদ ১০ম মন্ডল,১১৭নং সুক্তের দেবতা হল 'ধনদানপ্রশাংসা' এবাং এই সুক্তের মন্ত্রসমূহের আলোচ্য বিষয় হল  গরীবদুঃখীদের দানে উত্সাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা।

 

• ঋগ্বেদ ১০ম মন্ডল ১৪৬ সুক্তের দেবতা হল 'দ্যুতনিন্দা' এবং তাই এর আলোচ্য বিষয়বস্তু হল জুয়াখেলার অপকারিতা ও নিষিদ্ধতা।

 

এখন আপনারাই ভাবুন দ্যুতনিন্দা, ধনদানপ্রশংসা এগুলো কি কোনো দেহধারী দেবতা?!

 

আজ ম্যাক্সমুলার সহ বিদেশী মিশনারীদের অপপ্রচারের কারনে একে সবাই নির্দিষ্ট আকৃতিযুক্ত আলাদা একটি দেবতা মনে করে যদিও তা সম্পূর্ন ভুল।

 

ঈশ্বরে বহু গুণাবলীর অধিকারী। শুধু মাত্র মুর্খ মানুষেরাই মনে করে ঈশ্বরের এই ভিন্ন ভিন্ন গুন এক একটি ঈশ্বর। বেদে যখন বিষ্ণুকে স্তুতি করা হয় সেটা আলাদা কোনো চতুর্ভূজ বিষ্ণু নয় বরং সর্বব্যাপক পরমাত্মাকে বলা হয়। যখন সরস্বতীকে স্তুতি করা হয়, সেটা ঈশ্বরের জ্ঞানদায়িনী ভাবকে স্তুতি করা হয়। আলাদা বীণাপানি কোনো দেবীকে নয়।

 

 

ঈশ্বরের পাশাপাশি এই বৈদিক দেবতাদেরও কি উপাসনা করা উচিৎ?

 

আমাদের মায়েরা একাধারে আমাদের পালক, শাসক, শিক্ষক সহ অনেক কিছু। তাই মাকে মা রূপেই শ্রদ্ধা করা যথেষ্ট। মায়ের পালক রূপ, মায়ের শাসক রূপ — এই রূপগুলোকে আমরা আলাদা আলাদা ভাবে প্রশংসা করতে পারি, কিন্তু আলাদা আলাদা করে শ্রদ্ধা বা সেবা করার চিন্তা করাটাই বোকামি। একই ভাবে বেদের এইসব দেবতারাও ঈশ্বর থেকে ভিন্ন নন। দেবতারা ঈশ্বরের গুনবাচক নামই। তাই সেই পরমব্রহ্মের উপাসনাই বিধেয়।

 

• অর্থববেদ,কান্ড ১৩,বর্গ৪ এর ১৬ থেকে ২১ : —. এই নামে উপাসনা করলেও বা সমস্যা কিসে?

 

নীতিগত সমস্যা নেই, সমস্যাটা বিভ্রান্তিতে। এই পৃথক উপাসনার ধারনা থেকেই পরবর্তীতে দেবতাদের নিয়ে পঞ্চমত গড়ে উঠেছে।

বিষ্ণু, রুদ্র, সরস্বতী, বিশ্বকর্মা, গণপতি, বাক — এই সকল দেবতারাও ঈশ্বরের গুণবাচক নাম। এইসব নামেও ঈশ্বরকে স্তুতি করা হয়।  কিন্ত উপাসনার জন্য ওঁঙ্কারই শাস্ত্রমতে বিধেয়। কারণ এটি ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ নাম আর স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচায়ক।

 

যাহা ওঁ-কার বলিয়া প্রসিদ্ধ তাহাই পর এবং অপর- এই উভয় ব্রহ্মস্বরূপ। সেই হেতু যিনি এইরূপ জ্ঞানসম্পন্ন, তিনি ওঁ-কার আশ্রয় অবলম্বনেই পরমব্রহ্ম প্রাপ্ত হন। (প্রশ্ন উপনিষদ: ৫/২) যে ব্যক্তি ওঁ- এই ত্রিমাত্রাত্মক অক্ষর দ্বারা পরমাত্মাকে ধ্যান করেন, তিনি ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত করে পরমাত্মার দর্শন করেন। (প্রশ্ন উপনিষদ: ৫/৫) ব্রহ্মকে লাভ করিবার যত উপায় আছে তার মধ্য ওঁ-কারই শ্রেষ্ঠ, এটিই ব্রহ্মের প্রকৃষ্ট জ্ঞাপক। ইহাই ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায়। (কঠ উপনিষদ: ১/২/১৭)

4

 

 

 

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কি সর্বশক্তিমান ?

 

উত্তরঃ হ্যাঁ ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি যাই চান তাই করবেন। কেউ যদি যা করতে মন চায় তাই করে তবে সেটা হবে উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতীক। কিন্তু উপরন্ত ঈশ্বর হলে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল। সর্বশক্তিমান অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের নিজের কাজ করার জন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না যেমন সৃষ্টি, পরিচালনা, ধ্বংস, নাশ করার জন্য তার কারো প্রয়োজন নেই তিনি নিজেই তা করতে সামর্থ রাখেন।

 

ঈশ্বর স্ত্রী নাকি পুরুষ?

 

উত্তর :-

 

• তিনি "অকায়েম্ " (যজুর্বেদঃ- ৪০/৮)

অর্থাৎ, তিনি শরীররহিত বা নিরাকার।

আর, যেই পরমাত্মার কোন শরীরই নেই তিনি নারী-পুরুষ কোনটাই হওয়ার কোন প্রশ্ন অাসে না।

তবুও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,

 

• কঠোপনিষদ—২/৩/৮ - ঈশ্বর অলিঙ্গ বা লিঙ্গহীন বা চিহ্নহীন।

 

• ঈশ্বর স্ত্রীও নহেন, পুরুষও নহেন এবং নপুংসকও নহেন ; কেবল জ্ঞানমাত্র ; অথচ তাঁহার উপবেই সমগ্র জগৎ বহিয়াছে।।

[মহাভারত. শান্তিপর্ব- ২১৮/৯০]

 

 

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কোথায় থাকেন?

 

উত্তরঃ- কোথায় নেই! ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। ঈশ্বর আকাশে কোন বিশেষ জায়গায় বা গ্রহে অথবা কোন বিশেষ সিংহাসনের মত কোন নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতেন তাহলে তিনি সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্ব শক্তিমান, সকল কিছুর পরিচালক, সৃষ্টিকারী ও ধ্বংসকারী হতে পারতেন না। তিনি যেখানে বর্তমান নেই সেখানে তিনি তার কোন ক্ষমতায় প্রয়োগ করতে পারবেন না।

 

• যজুর্বেদ ৩২ অধ্যায় ১১ নং মন্ত্র,  বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সকল স্থানেই তিনি বর্তমান। কোন স্থানই তাকে আড়াল করতে পারে না।   

 

সর্বব্যাপক হতে হলে কি ঈশ্বরকে নিরাকারই হতে হবে?

 

উত্তর :-

 

কেন উপনিষদ ১/৬ ——

য়চ্চক্ষুষা ন পশ্যতি য়েন চক্ষুংষি পশ্যতি।

তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং য়দিদমুপাসতে।।

 

অনুবাদ: চোখ দিয়ে যাঁকে দেখা যায় না, কিন্তু লোকে দৃশ্যমান বিষয়গুলো যাঁর দ্বারা দেখে থাকে, তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে যেন। লোকে যেসব দৃশ্যমান বস্তুর উপাসনা করে তা ব্রহ্ম নয়।

• শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ বলছে, “তাঁর কোনও প্রতিরূপ বা প্রতিমা নেই”(৪/১৯) এবং “সনাতনের কোন রূপ নেই যা চক্ষুর গোচর হয়, দৃষ্টির দ্বারাও তাঁকে কেও দেখে না”(৪/২০)।

 

• কঠ উপনিষদের ১/৩/১৫ তে আরও বলা হয়েছে, পরমাত্মা অরূপম বা রূপহীন, কেবল সেই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারলেই মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

 

• শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১০-এও একই কথা বলা হয়েছে। একই কথা বলছে তৈত্তিরীয় উপনিষদের ব্রহ্মানন্দবল্লীর সপ্তম অনুবাক।

মোটের উপর বেদ-উপনিষদের সকল ব্যাখ্যতারাই বলেছেন যে বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রে ঈশ্বর হিসেবে পরমব্রহ্মকে প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং পরমব্রহ্ম সর্বব্যাপী এক সত্তা, যিনি অরূপম, নিরাকার।

 

প্রশ্নঃ যদি ঈশ্বরের কোন দেহের অঙ্গ এবং ইন্দ্রিয় অঙ্গ না থাকে তাহলে কিভাবে তিনি তাহার সকল কর্ম সম্পাদন করেন?

 

উত্তরঃ তার কর্মের জন্য অসুক্ষ অঙ্গের কোন প্রয়োজন নেই কারন তার কর্ম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতম বা অতি আণবীক্ষনতম স্তরে হয়ে থাকে। তিনি এসব করে থাকেন তার প্রকৃতিজাত ক্ষমতা দিয়ে। তিনি চোখ ছাড়াই দেখতে পারেন, কান ছাড়া শুনতে পারেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ সকলের অজ্ঞাত। ঈশপোনিষদে তা আরও বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা আছে।

 

প্রশ্নঃ তাহলে এই আলোচনায় বেদ অনুসারে ঈশ্বরের প্রধান বৈশিষ্টগুলির সারমর্ম কি?

 

উত্তরঃ তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী অসীম এবং সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এখানে আজকের আলোচনার কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

 

• ঈশ্বর এক ও একমাত্র একজন সত্ত্বা।

• ঈশ্বরের গুনবাচক নাম -বেদের দেবতারা।

• ঈশ্বর সর্বব্যাপী।

• ঈশ্বর স্ত্রী পুরুষ বা দেহধারী নন।

• ঈশ্বর অবতার নেন না৷

• ঈশ্বরই একমাত্র উপাস্য।

• ঈশ্বরের উপাসনা — ওঁঙ্কারের মাধ্যমে করতে হয়।

 

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ  বৈদিক-পৌরাণিক শাস্ত্রমতে অবতারবাদের যৌক্তিকতা যাচাই" টপিকে প্রথম পর্ব

 

আলোচনাটি দুইভাগে বিভক্ত। আজকে আমরা মূলত শুধু পুরাণের আলোকেই আলোচনা করবো অবতারবাদের ভিত্তিক কতটুকু শক্ত।

 

অবতারবাদের মূল কন্সেপ্ট আছে পুরাণে। মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ ইত্যাদি প্রায় সকল বিখ্যাত অবতারের নামে এমনকি আলাদা একেকটা পুরাণই আছে।

 

কিন্তু স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর রচনা হবার কারণে তার পরতে পরতে আছে প্রচুর পরস্পরবিরোধিতা

 

আসুন, পৌরাণিক শাস্ত্রের অবতারতত্ত্ব থেকে কয়েক ঝলক দেখে নিই।

 

মৎস্য অবতার নিয়ে পরস্পরবিরোধিতা

 

• ভাগবত ১/৩/১৫ —  মতে  মৎস্য অবতার বিষ্ণুর

 

• আবার এদিকে মহাভারত বনপর্ব/ ১৫৮ তম অধ্যায়ে আছে মৎস্য হল প্রজাপতি ব্রহ্মার অবতার।

 

বরাহ অবতার পরস্পরবিরোধিতা

 

শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হচ্ছে যে বরাহ বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার।

 

দ্বিতীয় বায়াস্য রসাতলগতং মহীম্ ।

 

উদ্ধরিষ্যমুপদিত্ত যজ্ঞেশঃ শৌকরং বপুঃ ॥

 

(শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/৭)

 

অনুবাদ — এই বিশ্বের সৃষ্টি অথবা মঙ্গলের জন্য রসাতলপ্রাপ্ত পৃথিবীকে উদ্ধার করিতে ইচ্ছুক হইয়া সেই যজ্ঞাধিদেব যজ্ঞেশ্বর বিষ্ণু দ্বিতীয় অবতার বরাহ রূপ ধারণ করিয়াছিলেন । ৭ ।

 

অন্যদিকে গরুড়পুরাণে বলছে যে  বরাহ প্রজাপতির (ব্রহ্মার) অবতার।

 

ব্যাসের সময়কাল নিয়ে পরস্পরবিরোধিতা

 

আমরা সকলেই জানি যে আগে রাময়ণের সময় রাম অবতারগ্রহন করেন এবং তারপর ব্যাসদেব শক্ত্যাবেশ অবতার হন মহাভারতের সময়। কিন্তু ভাগবত পুরাণ এই কালবিন্যাসকে উল্টে ফেলেছে।

 

শ্রীমদ্ভাগবত প্রথম স্কন্ধ , তৃতীয় অধ্যায় ২১-২২ শ্লোকে বলা হচ্ছে,

 

ততঃ সপ্তদশো জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ।

 

চক্রে বেদতরোঃ শাখা দৃষ্ট্বা পুংসােঽল্পমেধসঃ ॥২১ নরদেবত্বমাপন্নঃ সুরকার্যচিকীর্ষয়া ।

 

সমূদ্রনিগ্রহাদীনি চক্রে বীর্যাণ্যতঃ পরম্ । ২২

 

 তিনি (শ্রীবিষ্ণু) সপ্তদশ অবতারে সত্যবতীর গর্ভে পরাশর মুনির ঔরসে ব্যাসরূপে অবতীর্ণ হন। সেই সময় মনুষগণকে অল্পবুদ্ধি দেখে বেদরূপ বৃক্ষের শাখাবিভাজন করেছিলেন । ২১।

 

অষ্টাদশ অবতারে দেবকার্য সম্পাদনের জন্য নরপতিরূপে রাম অবতার গ্রহণ করেন এবং সেতুবন্ধন , রাবণবধ প্রভৃতি নানাবিধ বীরােচিত লীলা করেছিলেন। ২২ ।

 

মানে রামের আগে ব্যাসদেব 🙄 ❗

নৃসিংহ বিষয়ে পরস্পরবিরোধীতা

 

এবার আসি ভাগবতের সেই প্রসিদ্ধ কাহিনীতে যেখানে  নৃসিংহের স্তম্ভ ভেঙ্গে বের হয়ে আসার গল্প রয়েছে। সেখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পরস্পরবিরোধীতা।

 

👉 তিনি অদূরে হিরন্যকশিপুর সভা সন্দর্শন করিলেন।  দেখিলেন - ঐ সভা শতযোজন বিস্তীর্ণ, দিব্য রম্য, মনোজ্ঞ, সর্ব্বকাম সমৃদ্ধ।

 

এরপরের শ্লোকগুলোতে হিরণ্যকশিপুর নির্দেশে  নৃসিংহের সাথে দানবদের ঘোর যুদ্ধ বাধে।  এবং অন্তিমে নৃসিংহের হাতে হিরণ্যকশিপুর মৃত্যু ঘটে।

 

অর্থাৎ মৎসপুরানের পুরো ঘটনা অনুযায়ী নৃসিংহ কোন স্তম্ভ ভেঙ্গে বের হন নি। 

 

এমন কি নৃসিংহকে নিয়ে রচিত নারসিংসপুরাণেও এরকম কোন ঘটনার উল্লেখ নেই।

👉
 নারসিংহ পুরাণের ৩৮ তম অধ্যায়ে এরকম বর্ণনা এসেছে - "দানবদিগের ভয়ঙ্কর অতি রৌদ্রতর, মহাকায় মহানেত্র, মহাবক্ত্র, মহাদ্রংষ্ট্র, মহানখ, মহাবক্ষ, মহাপাদ, কালাগ্নিসদৃশ দীপ্তানন নারসিংহ আকার স্বীকার করিলেন। অনন্তর ত্রিবিক্রম বিষ্ণু মুনিগনকর্তৃক স্তত হইয়া হিরণ্যকশিপুর পুরোভাগে গমন করিয়া ভীমনাদে দিঙ্মন্ডল নিনাদিত করিতে লাগিলেন। "

 

এই বর্ননা অনুযায়ী এখানেও নৃসিংহের স্তম্ভ ভেঙ্গে বের হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।  শুধুমাত্র ভাগবতেই স্তম্ভ ভাঙ্গার পরম মনোহর গল্পটি পাওয়া যায়।  অন্যান্য পুরাণ এ ঘটনার কোনরূপ সমর্থন করে নি।

 

নৃসিংহ-শরভেশ্বর বিষয়ে পরস্পরবিরোধীতা

 

নৃসিংহদেবের কাহিনী কিন্তু কেবল হিরণ্যকশিপু বধেই শেষ হয় না। যদিও ভাগবত পুরাণ এখানে নীরব, কিন্তু শিবপুরাণে একটি কাহিনী আছে যে,।

 

"নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপু কে বধ করলেও তার উগ্র ক্রোধ শান্ত হয়না। তখন দেবতা দের প্রার্থনায় পরমেশ্বর শিব প্রথমে ভৈরব গন সহ বীরভদ্র কে পাঠান। নরসিংহ দেবের উগ্র বিক্রমে বীরভদ্রের পরাজয় হলে শিবজী শরভের (ছবি নিচে দিচ্ছি) রূপ নিয়ে নরসিংহকে আক্রমন করে শান্ত করতে চান। এরপরে শৈব পুরাণগুলোর কাহিনীতে আছে যে শরভেশ্বর নৃসিংহকে বধ করেন।

 শিবাবতার শরভেশ্বরের  ছবিতে দেখা যায়,

 

থাবায় নৃসিংহদেবকে ধরে বধ করার ভঙ্গিমায়।

 

👉 লিঙ্গ পুরাণ পূর্বভাগের ৯৬ তম অধ্যায়ে  এরকম বর্ণনা এসেছে নৃসিংহদেবকে পরাজিত করার পর শরভেশ্বর তার চামড়াকে নিজের আসন বানান।

 

"শঙ্করের সেই (নৃসিংহদেবকে পরাজিত করার পর)  অবধিই নৃসিংহ চর্ম বসন হইলো, সেই নৃসিংহের ছিন্নমস্তকই মুন্ডমালার মধ্যস্থলে মধ্যমণিস্বরূপ ভাসমান হইতে লাগিলো।"

 

আবার অন্যদিকে পদ্মপুরাণ, গরুড় পুরাণের কিছু সূত্রমতে শরভকে দেখে নৃসিংদেব গান্ডাবেরুন্ডা  রূপ নিয়ে শরভেশ্বরকে পরাজিত করে ছিন্নভিন্ন করেন।

 

যদিওবা পূর্বোক্ত শৈবমতটিই বেশি প্রচলিত।

আপনাদের অনেকে হয়তো এই বিষয়টি জানতেন না। কারণ নৃসিংহদেবের প্রতি অপমানজনক বুঝে শ্রীমদ্ভাগবতেও এই বিষয়ে কিছু লেখেনি আর বৈষ্ণবরাও এই বিষয়ে আলোচনা করেন না৷

 

কিন্তু দক্ষিণভারতে এই অবতারের কাহিনীগুলিও জনপ্রিয়। এই শরভ, গান্ডাবেরুন্ডা রূপগুলি প্রধানত দক্ষিনভারতেই বেশি পূজিত হয়।

 

এগুলো তো তথ্য ও নেপোটিজমগত সমস্যা। এমনকি পুরাণগুলো অবতার পরমেশ্বর, তার কোনো কাজে দোষ নাই বিবেচনায় কত কিই না করিয়েছে!

 

শ্রীকৃষ্ণ-রুক্মিনীর বিয়েতে নাকি একলক্ষ গোবধ সহ বিভিন্ন প্রানী হত্যা করে পরিবেশন হয়েছিল!

 

— বাণীতে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ / শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড/ ১০৫/৬০-৬৩

 

আরও বহু বহু এমন সম্মানহানিকর, অশালীন উদাহরণ আছে, বলতে রুচি হয় না।

 

অবতার কেন হয়  —  এমনকি তা নিয়েও পুরাণ সম্পূর্ণ সনাতন ধর্মদর্শনবিরোধী ব্যাখ্যা করেছে।

 

গরুড়পুরাণ– পূর্ব খ. আচার কান্ড অধ্যায় ১১৩ এর ১৫   তম শ্লোকানুসারে,

 

""কর্মের বশীভূত হয়ে কর্মচক্রের অধীন হয়ে শ্রীবিষ্ণু অবতার হিসেবে আসেন! ""

 

সহজ কথায় পুরাণমতে কর্মফল ভোগ করার জন্য অবতারের সৃষ্টি হয়।

 

পৌরাণিকরা শ্রীবিষ্ণু / কৃষ্ণ / শিব ইত্যদিকে পরমেশ্বর মানেন। সেই পরমেশ্বররাও কর্মচক্রে আবদ্ধ হন!

 

অথচ যোগদর্শনে, গীতা সহ হাজারো জায়গায় স্পষ্টাক্ষরে বলা আছে যে ঈশ্বর স্বয়ং কর্মচক্রের প্রতিপালক হলেও তিনি কর্ম কর্মফলের অধীন নন।

"ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ।।"

 

[যোগদর্শন ১।২৪]

 

অর্থাৎ ক্লেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয়– এই চারের সঙ্গে যার কোনো সম্বন্ধ নেই, যিনি সকল পুরুষের মধ্যে উত্তম, তিনিই ঈশ্বর।

অর্থাৎ সংজ্ঞা থেকে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য গুলো হচ্ছে–

 

১. তিনি ক্লেশ অর্থাৎ অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অবিনিমেশ এই পাঁচটি মুক্ত।

 

২. তিনি কর্ম অর্থাৎ পাপপূর্ণ্যময় কর্ম হতে মুক্ত।

 

৩. তিনি বিপাক অর্থ কর্মফল হতে মুক্ত।

 

৪. তিনি আশয় অর্থাৎ ফলভোগের জন্য সৃষ্ট সংস্কার হতে মুক্ত।

 

মোটকথা একটা বিষয় আপনারা স্পষ্ট দেখলেন যে, পুরাণের ভিত্তিতে যে ঈশ্বরের অবতারবাদের বিশ্বাস আমরা করি, সেটার ভিত্তি কতটা দুর্বল।

 

শিক্ষামূলক কাহিনী বানাতে গিয়ে আরও কত শত চিত্র বিচিত্র সমস্যার সৃষ্টি করেছে এগুলো। সুতরাং পুরাণের এই কাহিনীগুলি দেখিয়ে কখনোই বৈদিকতত্ত্বের বিরোধিতা করা যাবে না।

 

অগ্নিবীরের মূলনীতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (agniveerbangla.org)


গ্রুপের সকলের পালনীয় আচরণ সমূহঃ

 

• প্রতি একদিন অন্তর অন্তর স্বাধ্যায় আলোচনা ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত আলোচনায় উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

 

• স্বাধ্যায় ক্লাসের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।

 

• আলোচনার সময় কোনোপ্রকার অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা, ইমুজি দেওয়া নিষেধ।

 

• নিয়মিত গ্রুপের মেসেজ চেক করা৷

 

• এডমিনদের কাছে নিজের সংশয় উপস্থাপন ও তাদের প্রদত্ত pdf, পোস্ট,  ব্লগ, আর্টিকেল পড়া৷

 

• এডমিন প্রদত্ত pdf/ আর্টিকেল না পড়ে অযথা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা। এডমিন প্রদত্ত স্বাধ্যায় তালিকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই পড়া শেষ করা।

 

• আমাদের গ্রুপে অগ্নিবীরের আদর্শ বিরোধী প্ল্যাটফর্মের লিংক দেয়া নিষেধ। কিছু জানার থাকলে স্ক্রিনশট দিতে হবে।

 

• গ্রুপে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আলোচ্য বিষয় হল :- বৈদিক-পৌরাণিক শাস্ত্রমতে অবতারবাদের যৌক্তিকতা যাচাই।


“নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়।

চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো,

জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।”

—॥ যজুর্বেদ ১৬/৩২ ॥—

-  নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে!

 

গত আলোচনা আমরা পৌরাণিক শাস্ত্রবর্ণিত অবতারবাদের বিবিধ সমস্যা দেখিয়েছি। আজকে আমরা বৈদিক শাস্ত্রের আলোকে অবতারবাদের আলোচনা করবো

বৈদিক শাস্ত্রের আলোকে অবতারবাদের যৌক্তিকতা যাচাই

 

আলোচনাটি এটা দুই বন্ধুর প্রশ্নোত্তর আকারে রাখা হল, আশা করি, এতে করে আলোচনাটি উপভোগ্য হবে। এখানে অবতারবাদের পক্ষে প্রশ্নকারী অগ্নি এবং বৈদিক ধারনার আলোকে উত্তরদাতা সূর্যা।

 

⬢ অগ্নি :- তোমরা যারা বৈদিক মান্যতায় বিশ্বাসী, তারা কি অবতারবাদে বিশ্বাস করো?

 

👉 সূর্যা :— তুমি যদি অবতার বলতে ঈশ্বরকে মানবদেহে পৃথিবীতে অবতরণকে বুঝিয়ে থাকো, তবে সেটা আমরা মানি না। কিন্তু হ্যাঁ, আমরা এটা মানি যে, যেসব আত্মা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁরা নিজ ইচ্ছায় পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু তাদের সেই জন্মগ্রহনের সাথে পৌরাণিক অবতারবাদের সম্পর্ক নেই।

 

⬢ অগ্নি :- আচ্ছা, তোমাদের মতে ঈশ্বরের অবতার হওয়া সম্ভব নয় কেন?

 

👉 সূর্যা :— আমরা ঈশ্বর তথা আমাদের ধর্ম সম্পর্কে সর্বোৎকৃষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবো আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, স্বতঃপ্রমাণ, ঐশ্বরিক জ্ঞান বেদ থেকে। এই বেদে বলা আছে ঈশ্বর সর্বব্যাপক, অকায়ম্ (শরীররহিত), জন্ম ও জনক রহিত। এখন ভেবে দেখো, ঈশ্বর সর্বব্যাপক হওয়ায় তিনি সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই বিরাজিত।

 

• যজুর্বেদ সংহিতা ৩২.১১, ‘ঈশ্বর যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত।’

• ঋগ্বেদ সংহিতা ১০.৪৮.১ ‘ঈশ্বর যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন।’

অর্থাৎ ঈশ্বর সর্বব্যাপী হবেন।

পৃথিবীতে তিনি পূর্ব হতে ব্যাপ্ত হওয়ার পরেও তাঁর আবার সেখানে জন্ম নিতে হবে কেন? পৌরাণিক মতানুসারে ঈশ্বর যদি অবতার রূপ ধারন করেন, তখন তিনি একটা স্থানে ঘনীভূত হয়ে যান। সেই অবস্থায় কি সেই অবতারের সর্বব্যাপীত্ব বজায় থাকবে? তাহলে ঈশ্বরত্বই বা কিভাবে থাকবে?

 

তাহলে সেই সাকার রূপের সর্বব্যাপকতা বজায় থাকে না। তাহলে সেই সূত্রে আমরা বলতে পারি সেই সাকার রূপ ঈশ্বর বলে বিবেচিত হতে পারে না। একইভাবে বলা যায় যে সর্বব্যাপক ঈশ্বরও কোনো সীমাবদ্ধ রূপে নিজেকে পরিপূর্ণ প্রকাশ করতে পারেন না।

 

•  ‘ন তস্য প্রতিমা আস্তি’  ( যজুর্বেদ ৩২/৩)  এর প্রচলিত অর্থ পৌরাণিকরা এমন করে - ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাথে কারও তুলনা হয় না।’

 

তাহলে যদি কিছুক্ষণের জন্য ধরেও নিই যে ঈশ্বর সাকার রূপ ধারন করেন, তাহলে সর্বব্যাপক ঈশ্বরের সাথে সেই সাকার রূপের তুলনা হয় না।

 

তাই সাকার রূপে ঈশ্বরের অবতার, তিনি কি ঈশৃবরপর সাথে তুলনীয় নন? - তাই এই ধারনা পৌরাণিক দৃষ্টিকোন থেকেও সঙ্গত না।

 

ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি ‘অবাঙ্মানসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা (বাক), মন বা চোখ দিয়ে ধারণ করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত।

 

আবার জন্ম নিলে তাঁর জনকও থাকবে, শরীরও থাকবে। ফলে বেদোক্ত ঈশ্বরের গুণাবলির সাথে তাঁর বৈসাদৃশ্য ঘটবে। ফলে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী বেদই মিথ্যা হয়ে যাবে।

 

তুমি কি মনে করো ঈশ্বর অবতার গ্রহণ করে নিজেকেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করবেন ?

 

⬢ অগ্নি :- শ্রীকৃষ্ণ তো অবতার হয়েও সর্বব্যাপী হতেই পারেন। তার অবতারদেহ আর সর্বব্যাপী পরমাত্মা একই সত্তা হতেও তো পারে।

👉 সূর্যা :— না, সেটা সম্ভব নয়, আর সম্ভব নয় শ্রীকৃষ্ণের নিজের কথা অনুসারেই,

 

মহাভারতে বনপর্ব-১৩ অধ্যায়ে যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন -

 

হে কৃষ্ণ! কিজন্য তুমি নিকটে ছিলেনা? তখন (দ্যুৎক্রীড়ার সময়ে) কোথায় ছিলে?

 

উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে - আমি শাল্ববাজার সৌভনগর গিয়েছিলাম। (তারমানে তিনি পূর্বে সেথায় ছিলেন না।)

 

তারপর বলেছেন যে-  যদি আমি দ্বারকায় থাকতাম তাহলে জুয়া খেলার সময় উপস্থিত হয়ে অনেক দোষ দেখিয়ে জুয়া খেলা বন্ধ করার প্রযত্ন করতাম।

 

যদি শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মাই হন, তাহলে তিনি সর্বত্রই থাকবেন। তাহলে এইসব কেন বললেন?

 

পরমাত্মা সর্বব্যাপক, তিনি সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছেন। পরমাত্মা কোথাও আসা যাওয়া করেন না কারন তিনি পূর্ব হতেই সেথায় বিদ্যমান। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না,

 

তাই //তার অবতারদেহ আর সর্বব্যাপী পরমাত্মা একই সত্তা// — এটা ভুল কথা।

⬢ অগ্নি :- তোমার যুক্তি গুলো ঠিক থাকলেও তুমি ঈশ্বরের যেসব গুণ উল্লেখ করেছো তার বাইরেও ঈশ্বরের একটি বড় গুণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে তিনি সর্বশক্তিমান৷ তিনি সর্বশক্তিমান হওয়ার ফলে অবতার গ্রহণ করতে পারেন। আর যদি তিনি অবতার গ্রহণ করতে না পারেন, তবে তিনি আর কিসের সর্বশক্তিমান?

 

👉 সূর্যা :— আচ্ছা তাহলে ঈশ্বর কি মিথ্যা বলতে পারেন বা মূর্খ হতে পারেন?

 

⬢ অগ্নি :- যেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান, অবশ্যই সেই ক্ষমতা তার আছে।

 

👉 সূর্যা :— তাহলে তোমার মতে ঈশ্বর মিথ্যা বলেন এবং মূর্খ।

 

⬢ অগ্নি :- আমি এমন কখন বললাম? তিনি সর্বশক্তিমান বলে এসব করতে পারলেও করবেন না, কারণ এটা ঈশ্বরের স্বভাব বিরুদ্ধ হয়ে যাবে।

 

👉 সূর্যা :— ঠিক সেটাই।

 

প্রথমত তোমাকে এটা বুঝতে হবে যে সর্বশক্তিমানের অর্থ স্বেচ্ছাচারিতা নয়। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হলেও তিনি অবতার গ্রহণ করবেন না। কারণ সেক্ষেত্রে সর্বব্যাপীত্বসহ বহু৷ ঈশ্বরীয় গুনাবলী নাকচ হয়ে যাবে।

 

ফলে এতে তাঁর অন্যসকল গুণের পাশাপাশি এই সর্বশক্তিমান গুণটির উপরেও প্রশ্ন উঠবে।

মনে করো, একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান সেই দেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। সেই সংবিধান রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা প্রণীত হলেও সেই রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু সেই সংবিধানের বিধান মানতে বাধ্য। যদি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান সেই সংবিধানের বিধান না মানেন, তবে তিনি কখনই যথার্থ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না।

 

তেমনি ঈশ্বরই সমগ্র বিশ্বের সংবিধানরূপ বেদের প্রণেতা হলেও তিনি সেই সংবিধানের বিধান ভাঙেন না। সংবিধান মেনে একজন রাষ্ট্রপতি যেমন রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশক্তিমান, তেমনি সর্বশক্তিমানের সংজ্ঞা ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়ত, যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হন, তবে এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি হয়ে, সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে কেন তিনি ধুলিকণা তুল্য একটি পৃথিবীতে জন্ম নিবেন? তিনি তো সর্বশক্তিমান। তাই পৃথিবী জন্ম না নিয়েই তিনি তাঁর অভিষ্ট সিদ্ধ করতে পারবেন। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে জন্ম নিলেই তো বরং তাঁর সর্বশক্তিমান গুণের উপর প্রশ্ন ওঠে।

 

⬢ অগ্নি :— তাহলে ঈশ্বর অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন না ? তা যদি না পারেন, তিনি ঈশ্বর হবেন কেমন করে ?

 

👉 সূর্যা :— অসম্ভবকে সম্ভব না করা, নিয়মের মধ্যে অনিয়মকে না আনতে পারাই তাে ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব। অতএব সর্বশক্তিমান শব্দের অর্থ এ নয় যে, ঈশ্বর সব কিছু করতে সক্ষম। ঈশ্বর তাই করতে সক্ষম, যা ঈশ্বরের করা উচিত।

 

⬢ অগ্নি :— বুঝলাম। তাহলে তো তোমরা গীতা মানো না।

 

👉 সূর্যা :— কে বললো আমরা গীতা মানি না।  অবশ্যই গীতা মানি।

 

⬢ অগ্নি :— তাহলে গীতায় যে অবতারবাদ সিদ্ধ হয়, তা তোমরা মানো না কেন?

 

👉 সূর্যা :— গীতার কোন শ্লোকে অবতারবাদ সিদ্ধ হয়?

⬢ অগ্নি :— কেন, গীতার ৪/৭-৮ শ্লোক পড়নি!

 

👉 সূর্যা :— সমগ্র গীতায় কোথাও অবতার শব্দটি নাই। অর্থাৎ তুমি যেটিকে অবতারবাদ বলে ভাবছ তা মূলত অবতারবাদ নয়, তা হল জগৎহিতার্থে মুক্তাত্মাদের দিব্যজন্মগ্রহন

আমি তোমাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি।

 

শুরুতেই আমি মুক্ত আত্মার কথা বলেছিলাম, মনে আছে? এই শ্লোকে মূলত মূক্তাত্মাদের জন্মগ্রহণের উদ্দেশ্য বলা হচ্ছে। তুমি সাংখ্যদর্শন ও বেদান্তদর্শন পড়লে এই মুক্তাত্মার বিষয়ে জানতে পারবে।

 

এই মুক্তাত্মা বিষয়ে একটু পরেই আরও বিস্তারিত বলছি। কিন্তু আর আগে তুমি এবার আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমার মতে অবতার কারা এবং ঈশ্বর অবতার গ্রহণ করেন কেন?

 

👉 সূর্যা :— তোমার কথা অনুসারে অবতারের জন্ম নেওয়ার পেছনে কারণ ৩টি।

 

১. সাধুদের রক্ষা,

২. দুষ্টদের বিনাশ,

৩. ধর্মের পুনরাস্থাপনা।

 

এখন একটি বিষয় লক্ষ করো। অবতারবাদের ভিত্তি যে পুরাণ, সেই পুরাণই কিন্তু রামচন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণের অবতার হিসেবে জন্মলাভের পেছনে অন্য কারণ বলছে ।

 

গরুড়পুরাণ– পূর্ব খ. আচার কান্ড অধ্যায় ১১৩ এর ১৫   তম শ্লোকানুসারে,

 

কর্মের বশীভূত হয়ে কর্মচক্রের অধীন হয়ে শ্রীবিষ্ণু অবতার হিসেবে আসেন!

 

অর্থাৎ পুরাণের যে মৎস্যাদি সব অবতার হওয়ার পেছনের কারণ তোমার উল্লেখিত কারণ ৩টির ১টিও নয়।

 

এবার তোমার ১ম কারণের (সাধুদের রক্ষার) বিষয়ে আসি।

 

তোমাকে একটা উদাহরণ দেই। মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল ধর্ম রক্ষার্থে। ফলে সেই যুদ্ধে সকল দুষ্টদের বিনাশ হওয়ার কথা। আর মহাভারত পড়লে এটা তো জানো নিশ্চয়ই যে শ্রীকৃষ্ণ দেহত্যাগ করার পর অর্জুনাদি ধর্মাত্মারা দস্যু কর্তৃক আক্রান্ত ও পরাজিত হয়ে সবকিছু হারান। কুন্তী ইত্যাদিরা দাবানলে মৃত্যুবরণ করেন।

তাহলে যারা ধর্ম যুদ্ধে ধর্মের পক্ষে থেকেছে যুদ্ধ করেছে, তারা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলো কেন?

 

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ অবতার কেন সেইসব দস্যুদের হত্যা করে  সাধু ব্যক্তি পঞ্চপাণ্ডবদের এবং কুন্তী প্রভৃতি কৃষ্ণভক্তদের রক্ষা করলেন না কেন?

এবার আসি ২য় কারণে (দুষ্টদের বিনাশ)। গৌতম বুদ্ধের জীবনী দেখলে দেখা যায়, তিনি অন্য অবতারদের মতো কোনো যুদ্ধে যাননি। তাহলে তিনি দুষ্টদের বিনাশ করলেন কিভাবে? অর্থাৎ এই ক্ষেত্রেও অবতারবাদের কারণরূপ তোমার দ্বিতীয় কারণও প্রতিষ্ঠা হলো না।

 

 

আর সর্বশেষ কারণ হচ্ছে ধর্মসংস্থাপনা। তোমার অবতার গৌতম বুদ্ধ কি এমন ধর্মসংস্থাপনা করলেন যে আজ বুদ্ধরা বেদ মানে না, যজ্ঞকে নিন্দা করে আলাদা ধর্ম তৈরি করল। বুদ্ধ হয়তো নিজে বেদবিরোধিতা করেননি, কিন্তু বেদের অল্টারনেটিভ পথ তৈরি করে একটা অঘোষিত চ্যালেঞ্জ ঠিকই দিয়েছিলেন।

তাহলে এখানে সনাতন ধর্মের পুনরাস্থাপনা হলোটা কোথায়?

 

যে ঈশ্বর নীরবে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করতে সক্ষম, তাকে শরীর ধারণ করে অথাৎ অবতার হয়ে দুষ্টকে সংহার করতে হয়েছিল, একথা বলা হাস্যকর এবং ঘােরতর অপমানকর নয় কি?

“যখন যখন ধর্মে গ্লানি উপস্থিত হয় তখন তখন ঈশ্বর অবতার হন”— যারা অবতারবাদে বিশ্বাসী তারা প্রায় এই কথাটিকে বারংবার বলে থাকে। কিন্তু একথা তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারেই টেকে না।

 

আরও দেখাে ! যারা ঈশ্বরের অবতার বিশ্বাস করে থাকে, তারা মুখ্যরূপে দশ অবতার এবং চার যুগ স্বীকার করে । সত্যযুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ আর কলিযুগ।

 

সত্যযুগে ধর্মের চার ভাগ,

 

ত্রেতা যুগে ধর্মের ৩ ভাগ আর অধর্মের ১ ভাগ স্বীকৃত।

 

দ্বাপর যুগে ধর্মের ২ ভাগ এবং অধর্মের ২ ভাগ।

 

কলিযুগে ধর্মের ১ ভাগ আর অধর্মের ৩ ভাগ ।

 

এবার একটু অবতার ক্রমে বিবেচনা করা যাক। লােকে জানে,

 

সত্যযুগে চার অবতার, - মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ।

 

ত্রেতা যুগে তিন অবতার, - বামন, পরশুরাম, রাম।

 

দ্বাপরে এক (নাকি দুই) অবতার - বলরাম / কৃষ্ণ,

 

কলিযুগে দুই অবতার -

 

বুদ্ধ (যিনি সনাতন ধর্ম সংস্থাপন করেছেন, নাকি বাঁশ দিয়েছেন, সবাই জানে)

 

আর কল্কি, (তাও তিনি নাকি আবার সব প্রয়োজন ফুরালে শেষে আসবেন।)

 

এখন, বিচার্য বিষয় এই, যদি সত্যযুগে ধর্মের চার ভাগ ছিল, অধর্ম মােটেই ছিল না, সে যুগে চার অবতারের প্রয়ােজন কীসের?

 

আবার কলিযুগে যখন ধর্মের ১ ভাগ রয়ে গেল, আর অধর্মের রয়ে গেল ৩ ভাগ, সে অবস্থায় এমন ভুগিজুগি মার্কা দুজন অবতার কেন?

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ হল। এই আলোচনা প্রস্তুতের জন্য সূত্র ও সহয়তা গ্রহন করেছি সিদ্ধগোপাল ব্রহ্মচারীর বৈদিক ধর্মধারা, অগ্নিবীরের ওয়েবসাইট ও বিশেষভাবে প্রিয়রত্ন ব্রহ্মচারীর কাছে।

এই আলোচনা আরো একদিন কন্টিনিউ করা হবে, পরের আলোচনায় আমরা অবতারবাদকে বৈদিক আরও কিছু দিক থেকে আলোচনা করবো, তার সাথে আরও আলোচনা করবো যে যদি ঈশ্বরের অবতার স্বীকার করাও হয়, তাতে ক্ষতি কী এবং অবতারবাদ ছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামচন্দ্র প্রভৃতির বৈদিক মান্যতা কেমন ইত্যাদি।

 

নমস্কার 🙏

ও৩ম্

নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়।

চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো,

জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।

[যজুর্বেদ ১৬।৩২]

 

নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।

আজকের আলোচ্য বিষয় :- জীব ও প্রকৃতি।

 

 জীবাত্মাঃ

 

ছান্দোগ্য উপনিষদে জীবাত্মাকে বোঝাতে বলা হয়েছে 'তত্ত্বমসি' অর্থাৎ তুমিই সেই। ছান্দোগ্য উপনিষদ্ ষষ্ঠ অধ্যায় একাদশ খণ্ডে বৃক্ষের জীবন মৃত্যুর দৃষ্টান্ত দিয়ে জীবাত্মার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে, "হে সৌম্য! এই বিশাল বৃক্ষের মূলে, মাঝখানে বা মাথার দিকে যদি কেউ আঘাত করে, তবে এই বৃক্ষ কেবল রস ক্ষরণ করে বেঁচে থাকে। এই বৃক্ষ জীবাত্মা কর্তৃক অনুব্যাপ্ত হয়ে অবিরাম রসপান করে সানন্দে অবস্থান করে। তবে যদি জীবাত্মা এই বৃক্ষের এক শাখা পরিত্যাগ করে, তবে সেই শাখা শুকিয়ে যায়, যদি দ্বিতীয় শাখা পরিত্যাগ করে, সেটিও শুকিয়ে যায়, এবং যদি সমস্তই পরিত্যাগ করে, তাহলে সমস্ত বৃক্ষই শুকিয়ে যায়। তুমি সেই জীব।"

জীবাত্মা শরীর থেকে ভিন্ন। কারণ আমরা নিজেকে বোঝাতে কখনো নিজের দেহকে নির্দেশ করি না৷ আমরা বলি 'আমার দেহ', 'আমার হাত', 'আমার পা'। ফলে এই দেহ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আমি নই।

 

আমি কে? এই আমিই হলো আত্মা [সাংখ্য ৬।৩]।

"ইচ্ছাদ্বেষপ্রযত্নসুখদুঃখজ্ঞানান্যাত্মনো লিঙ্গানি।" [ন্যায়০ ১।১।১০]

 

অর্থাৎ; ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন [কর্ম ও চেষ্টা], সুখ-দুঃখ, জ্ঞান এগুলি জীবাত্মার চিহ্ন।

 

জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার প্রথম পার্থক্য হল জীবাত্মা ভোক্তা, আর পরমাত্মা অভোক্তা।

 

আত্মার আমাদের দেহে অবস্থানঃ শাস্ত্রে বলা আছে এই আত্মা আমাদের হৃদয় গুহাতে থাকে। তবে আমরা হৃদয় বলতে হৃৎপিণ্ড বললেও বৈদিক শাস্ত্রে হৃদয় শব্দ দ্বারা মস্তিষ্ক ও হার্ট উভয়কেই নির্দেশ করে [প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে]। কিন্তু আত্মার বাসস্থান সেই হৃদয় গুহা এক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক [ছান্দোগ্য ৮।৩।৩, বৃহদারণ্যক ৪।৩।৭]। এই ক্ষুদ্র আত্মা প্রাণীর মস্তিষ্কে অবস্থান করে সমগ্র দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইন্দ্রিয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের, স্মৃতির, জ্ঞানের প্রভৃতির সংযোগ ঘটায়, সমন্বয় করে, নিয়ন্ত্রণ করে৷

 

অর্থাৎ আত্মা মস্তিষ্কেরও মস্তিষ্ক [ন্যায় ৩।১।১, ৭, ১২]।

 

২য় পার্থক্যঃ ব্রহ্ম সচ্চিদানন্দ। তৈত্তিরীয় উপনিষদে [২।১।১]‌ বলা হচ্ছে, "সত্যম্‌ জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম।"  এই বাক্যে ব্রহ্মের তিনটি বিশেষণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য, জ্ঞানস্বরূপ এবং অনন্ত।  যদি বলা হয় যে, "সত্যং ব্রহ্ম" অর্থাৎ সত্যই ব্রহ্ম, তাহলে এই অর্থের ব্যাপ্তি জীব এবং প্রকৃতি পর্যন্ত যায়, কেননা তারাও সত্য। যদি "জ্ঞানং ব্রহ্ম" অর্থাৎ ব্রহ্মকে জ্ঞানস্বরূপ বলা হয়, তাহলে এই অর্থ জীব পক্ষেও হতে পারে কারণ জীবও জ্ঞানবান। এজন্য এর নিবৃত্তির জন্য বলা হয়েছে "অনন্তম্ ব্রহ্ম" অর্থাৎ ব্রহ্ম জীবের ন্যায় পরিচ্ছিন্ন নন।

 

জীবাত্মা আনন্দময় নয়। জীবাত্মা আনন্দময় নয় বলেই সে মোক্ষ বা পরমাত্মাকে লাভ করতে চায়। আনন্দময় পরমাত্মাকে জেনে সে পরমানন্দ ভোগ করতে চায়, কারণ পরমাত্মাই হলেন একমাত্র আনন্দের উৎস। জাগতিক আনন্দ ক্ষীণ, কিন্তু পরমাত্মাকে প্রাপ্তির আনন্দ অসীম।

 

"রসো বৈ সঃ৷ রসং হ্যেবায়ং লব্ধ্বা-আনন্দী ভবতি।"

[তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২।৭]

অর্থাৎ; তিনি [পরমাত্মা] আনন্দময়। তাঁকে লাভ করে জীবাত্মা আনন্দবান হয় ।

 

প্রকৃতিঃ

 

প্রকৃতির স্বরূপঃ প্রকৃতি সত্ত্ব, রজঃ, তমো এই ত্রিগুণাত্মক। "সত্ত্বরজস্তমসাং সাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ" [সাংখ্যদর্শন ১।৬১]

 

পূর্বোল্লিখিত শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের উদাহরণেও [৪।৬]‌ প্রকৃতিকে বলা হয়েছে "লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং"। অনাদি প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক হওয়ার কারণে এই শ্লোকে প্রকৃতিকে লোহিত, শুক্ল এবং কৃষ্ণ এই ত্রিবর্ণযুক্তা বলা হয়েছেসত্ত্বগুণ শুক্লবর্ণ, রজোগুণ লোহিত বর্ণ এবং তমোগুণ কৃষ্ণবর্ণ।

 

Science এর দৃষ্টিতে আমরা শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি শুনেছি ও অনাদি অবিনশ্বর শক্তি সম্বন্ধে জানি। এই শক্তিই শাস্ত্রানুযায়ী প্রকৃতি।

 

প্রকৃতির উপাদান কারণত্বঃ

 

"প্রকৃতের্মহান্ মহতোহঙ্কারঃ অহঙ্কারাৎ পঞ্চতন্মাত্রণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ং তন্মাত্রেভ্যঃ স্থুলভূতানিপুরুষঃ ইতি পঞ্চবিংশতির্গণঃ।" [সাংখ্যদর্শন ১।৬১]

অর্থাৎ; সত্ত্ব, রজঃ, তমো সাম্যাবস্থা যাকে প্রকৃতি বলা যায়, সেই প্রকৃতি থেকে মহত্তত্ত্ব, মহত্তত্ত্ব থেকে অহংকার নামের প্রকৃতির দ্বিতীয় বিকার, অহংকার থেকে বাহ্য জগতের পাঁচ তন্মাত্র অর্থাৎ সূক্ষ্ম ভূত তথা দেহে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় উভয়ই উৎপন্ন হয় এবং তন্মাত্র অর্থাৎ সূক্ষ্মভূত থেকে পৃথিব্যাদি স্থূল ভূত ব্যক্ত হয়।

 

 

 

ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত বস্তুসমূহ-

 

[১]  কারণরূপ প্রকৃতি

[২-৬] সূক্ষ্ম ভূত

[২] মহত্তত্ত্ব

[৩] অহংকার

[৪] ৫ তন্মাত্রা [শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ]

[৫] মন

[৬] দশ ইন্দ্রিয়

[৭] পঞ্চ স্থূল ভূত [আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী]


শরীরের তাদের নাম-

 

[১] কারণ শরীর

[২-৭] সূক্ষ্ম শরীর

[২] বুদ্ধি

[৩] অহংকার

[৪] ইন্দ্রিয় বিষয় [শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ]

[৫] মন

[৬] দশ ইন্দ্রিয়

[৭] স্থূল শরীর


তিন কারণ তত্ত্বঃ এই জগতের প্রতিটি বস্তুর কারণ তিন প্রকার- নিমিত্ত কারণ, উপাদান কারণ ও সাধারণ কারণ।

 

উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সামনে একটি কলস আছে। কলসটির উপাদান কারণ হল মাটি, যার দ্বারা পাত্রটি তৈরি করা হয়েছে। নিমিত্ত কারণ হলো কুমার, যিনি কলসটি তৈরি করেছেন। সাধারণ কারণ হলো চাকা ইত্যাদি, যার সাহায্যে কুমার কলসটি তৈরি করেছেন। ইংরেজিতে উপাদান কারণকে Material cause, নিমিত্ত কারণকে Efficient cause এবং সাধারণ কারণকে Formal cause বলা হয়।

প্রশ্ন হলো, কলসের মতো সৃষ্টির এই তিনটি কারণ কী কী?

 

[ক] সৃষ্টির উপাদান কারণ  [Material cause] - সৃষ্টির উপাদান কারণ, আমাদের দর্শন অনুসারে, পাঁচটি মহাভূত - পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু, আকাশ। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি মূল কারণ নাকি এগুলোরও কোন কারণ আছে? পৃথিবীকে মূল কারণ বলা যায় না কারণ এতে অনেক জিনিস আছে - মাটি, সোনা, রূপা, তামা ইত্যাদি। এগুলিও মূল কারণ নয়, এগুলি পরমাণু দিয়ে তৈরি। এই ভৌত পদার্থগুলো বিশ্লেষণ করে বর্তমান বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, এরকম ১১৮ টি মৌলিক ভৌতিক তত্ত্ব আছে, যাদের সংযোগ-বিয়োগ থেকে সমস্ত ভৌতিক পদার্থ তৈরি হয়।

এই থেকে ১১৮ টি মৌলিক তত্ত্ব বিশ্লেষণ করার সময় বিজ্ঞান এই সিদ্ধান্তে এসেছিল যে তারাও নিজেরা মূলতত্ত্ব নয়  - এগুলি তিন ধরণের অতিপারমাণবিক কণার বিভিন্ন ধরণের সমন্বয় দ্বারা তৈরি, যাদের নাম তারা ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, বিজ্ঞান এই ফলাফলে পৌঁছেছে যে পদার্থ [Matter] এর কোন স্বাধীন সত্তা নেই, এটি কেবল পদার্থ, পদার্থ ও শক্তি [Energy] একে অপরের রূপান্তর। ফলাফলটি হলো যে পার্থিব, জলীয়, তেজীয়, বায়বীয় বস্তুর মূল কারণ অনুসন্ধান করতে করতে শেষমেশ আমরা তাদের মূল উপাদান কারণ হিসেবে শক্তিতে পৌঁছেছি।

 

এখন আবার একই প্রশ্ন থেকে যায় যে, তার মূল উপাদান কারণ কী? এর আদিতে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম শূন্যতার [False Vacuum] অনুকল্প প্রদান করছেন, যা প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়। কিন্তু সেই অনাদি ও অবিনশ্বর শক্তির কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চুপ। বিজ্ঞানীরা শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতিতে বলেন, শক্তির কোনো আদি বা ধ্বংস নেই। কেবল রূপান্তর রয়েছে।

এমন অবস্থায় আমরা কী বলব? আমরা অনাদি তত্ত্বকে যা বলব, তা হচ্ছে 'স্বয়ম্ভূ' - এর অন্য কোনো কারণ নেই। সেই আদি কারণ নিত্য, এটি কোনো উপাদান কারণের দ্বারা সৃষ্টি হয় না, এটি নিজে থেকেই আছে। বিজ্ঞান যে ভৌতিক বস্তুর জন্য কোয়ান্টাম শূন্যতা শব্দটি ব্যবহার করে - সাংখ্যবাদীগণ এর জন্য 'প্রকৃতি' শব্দটি ব্যবহার করেন। তারা বলে যে 'প্রকৃতি' চিরন্তন, 'স্বয়ম্ভূ', এটি স্বয়ং আছে, এটি কেউ সৃষ্টি করেনি। ভারতীয় দার্শনিক চিন্তা মতাদর্শ সাংখ্যের চেয়েও এগিয়ে যায়।

[খ] সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ [Efficient cause] - মূল উপাদান কারণের অনুসন্ধান করতে করতে যেমন 'স্বয়ম্ভূ' - এই উপাদান কারণের কাছে পৌঁছে যাত্রা থেমে যায়, একইভাবে নিমিত্ত কারণের অনুসন্ধান করতে করতেও 'স্বয়ম্ভূ' এই নিমিত্ত কারণে পৌঁছে অনুসন্ধান সমাপ্ত হয়ে যায়। কলসের নিমিত্ত কারণ হলো কুমার, কুমারের কারণ তার পিতা-মাতা, তার কারণের কারণ তার পিতা-মাতা, এই অনুসন্ধান চলতেই থাকবে।

সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ কে? শাস্ত্রে সৃষ্টির কারণ বলা হয় ঈশ্বরকে। প্রশ্ন জাগে যে ঈশ্বরের কারণ কে, কে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন? যদি আমরা এই অনুসন্ধানে আরও এবং আরও এগিয়ে যাই, তাহলে আমাদের কোথাও থামতে হবে, যেখানে আমাদের বলতে হবে যে তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তিনি নিজে থেকেই আছেন, তিনি 'স্বয়ম্ভূ'।

সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ কে? শাস্ত্রে সৃষ্টির কারণ বলা হয় ঈশ্বরকে। প্রশ্ন জাগে যে ঈশ্বরের কারণ কে, কে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন? যদি আমরা এই অনুসন্ধানে আরও এবং আরও এগিয়ে যাই, তাহলে আমাদের কোথাও থামতে হবে, যেখানে আমাদের বলতে হবে যে তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তিনি নিজে থেকেই আছেন, তিনি 'স্বয়ম্ভূ'।

সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত এই কারণগুলি অনুসন্ধান করার সময়, প্রশ্ন ওঠে যে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? কার উদ্দেশ্যে এই সৃষ্টি রচিত হয়েছে? স্পষ্ট উত্তর হলো যে, যিনি সৃষ্টিকে উপভোগ করবেন তার উদ্দেশ্যে।

 

আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ কেন আমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত এবং আধুনিক বিজ্ঞান কেনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?

🔘 কেন আমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত?

 

⏩আমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত ঠিক যে কারনে আমরা চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী, পরমানু, অনু, উত্তাপ, তড়িৎ শক্তি ইত্যাদি বিশ্বাস করি। আমাদের অস্তিত্বমান সকল কিছুকে বিশ্বাস করা উচিত এবং বাতিল করা উচিত যার অস্তিত্ব নেই তাকে।

জীবনের প্রাথমিক সত্য হলো "সত্য"= পরমসুখ বা মুক্তির সত্য। সত্যের অর্থ হলো যা অস্তিত্বমান তাকে অনুধাবন করা। তাই আমাদের উচিত ঈশ্বরে বিশ্বাস করা, কারন তিনি অস্তিত্বমান।

আমি তো ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারছি। এটা কি সত্য নয়?

হ্যা এটা সত্য।  একজন দিব্যি জীবন ধারন করতে পারে তড়িৎ শক্তিকে বিশ্বাস না করে। এমনকি অনেক আদিবাসী এভাবে জীবন ধারন করেও৷ কিন্তু সুখকে বর্ধিত করতে হলে আমাদের বিদ্যুৎশক্তিকে বিশ্বাস করাই ভালো যাতে আমরা এটাকে আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারি। অনেকে বলতে পারে তড়িৎ শক্তি সম্পর্কে না জেনেও তো অনেকে সুখে থাকতে পারে। তাহলে আমার পাল্টা প্রশ্ন থাকবে কোনো বিবেকবান ব্যাক্তি কি রাজি হবে বিদ্যুৎশক্তির আরামদায়ক জীবনকে বিদ্যুৎহীন জীবনের সাথে বিনিময় করে নিতে?  যেটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয় বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে যে আরামের ব্যবস্থা করা যায় সেটা বিদ্যুৎ  বিহীন অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি। জীবনের মূলনীতি হলো " জ্ঞান প্রাপ্ত করায় শক্তিকে এবং এভাবেই উচ্চতর সুখকে। " যেকোন বিবেকবান ব্যাক্তি এই নীতিতেই চালিত হন।

একটু ভেবে দেখুন, যদি বিদ্যুৎ শক্তির জ্ঞান এতটা সুখ স্বাচ্ছন্দ এনে দিতে পারে তাহলে বিশুদ্ধ সুখের উৎস পরমেশ্বরকে লাভের ক্ষমতা এবং জ্ঞান এবং তা হতে প্রাপ্ত আনন্দ কেমন হতে পারে!

কেউ কখনো ঈশ্বর দেখেনি।  তাহলে কিভাবে বলবো ঈশ্বর অস্তিত্বমান?

কেউ কখনো বিদ্যুৎ শক্তিকে দেখেনি, উত্তাপকে দেখেনি, এমনকি অতিপারমানবিক অংশগুলোকে দেখেনি। কেউ কখনো ফোটন বা কোয়ার্ককে দেখেনি।কেউ কখনো আলোক তরঙ্গ, উত্তাপের বিকিরন দেখেনি। তবুও আমরা কেন বলি তারা অস্তিত্বমান?

আমরা জানি ফোটন অস্তিত্বমান কারন আমরা এর প্রভাব দেখতে পাই যেটা ব্যাখ্যা করা যায় না। একইভাবে এটা বিদ্যুৎশক্তি, অতিপারমানবিক অংশ, উত্তাপ ও আলোক তরঙ্গের বিষয়টিও এরকমই সত্য।

আমরা নির্বস্তুক বিষয়গুলোকে বিশ্বাস করি কারন আমরা এর প্রভাবগুলোকে দেখতে পাই। চক্ষুগুলো হলো জগতকে অনুধাবন করার যথাযথপ্রায় (শতভাগ যথাযথ নয়) ইন্দ্ৰিয়। যা আমরা চোখ দিয়ে দেখতে পাইনা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে পারি। কিন্তু  সবচেয়ে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপও একটা নির্দিষ্ট সীমার নিচে ক্ষুদ্রাংশগুলো দেখতে পায় না। অন্যান্য অনুভুতির ব্যাপারেও যেমন শোনা, অনুভব ইত্যাদির ক্ষেত্রেও বিষয়টা সত্য। এইভাবে পুরো আধুনিক বিজ্ঞান আমরা যা দেখি বা শুনি তার উপর ভিত্তি ধরেনা বরং ভিত্তি ধরে এর প্রভাবের মাধ্যমে আমরা কি অনুধাবন করতে পারি। এবং এটি (আধুনিক বিজ্ঞান) যা করে তা হলো এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে একটা বিশেষ মডেল সৃষ্টি করে।

 

এভাবেই এই সকল ফোটন, ইলেকট্রন ও কোয়ার্ক এগুলো প্রকৃতপক্ষে মডেলের উপাদান যেটা বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করে। কিন্তু এই মডেলগুলোরও আরো গভীরে গেলে সেখানে কিছু বাস্তবতা আছে যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের এই মডেলগুলোও ব্যাখ্যা করতে পারে না। এই বাস্তবতাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে এমনকি এই সকল মডেলগুলোর পিছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতেই হবে। কেননা সেই বস্তুগুলোও দেখা যায় না, তবুও তার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়৷

 

 

 

 

এখন আমরা জানবো আধুনিক বিজ্ঞান কেনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?

 

আধুনিক বিজ্ঞান সেটাই বিশ্বাস করে, যা পরিমাপ করা যায়। আমরা ঈশ্বরকে  পরিমাপ করতে পারি না,  তাহলে আমরা কিভাবে তার অস্তিত্বকে স্বীকার করব?

এটা আরেকটা কল্প কথা। পরিমাপ হলো তৃতীয় ধাপ। প্রথম ধাপ হলো পরোক্ষভাবে নিরীক্ষন করা, দ্বিতীয় ধাপ হলো প্রত্যক্ষভাবে নিরীক্ষন করা এবং তারপর আসে পরিমাপের বিষয়টি। প্রত্যক্ষভাবে নিরীক্ষন ও পরিমাপ করার ক্ষমতাটি নির্ভর করে আমরা কত সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করতে পারছি তার উপর। নিউটনের টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহগুলোর কোন অস্তিত্ব ছিলো না, এমনটা আমরা দাবী করতে পারি না !

বর্তমানে আমরা বৃহস্পতি গ্রহের অনেক অনেক উপগ্রহ দেখতে পাই অধিকতর শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এখন, ঈশ্বর হলেন একটা ধারনা যেটা ক্ষুদ্র কনা বা তরঙ্গের ধারনার চাইতেও অনেক সুক্ষ্ম। যে যন্ত্রপাতিগুলো আমরা ব্যবহার করি এবং জ্ঞান অর্জন করি সেগুলো শুধুমাত্র নিরীক্ষন করতে পারে ও পরিমাপ করতে পারে বস্তুগত বিষয়গুলোকে, খুব বেশি হলে ক্ষুদ্রকনা ও তরঙ্গকে। ঠিক যেমন, টেলিফোন সংযোগের মাধ্যমে দিল্লীতে বসে নিউইয়র্কে থাকা একটি গোলাপের গন্ধ শুঁকার প্রচেষ্ঠা একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত, একইভাবে বস্তুগত যন্ত্রপাতি দ্বারা ঈশ্বরকে নিরীক্ষা করা ও পরিমাপ করার চেষ্টা করাটা এক কথায় অপচয়। যা হোক, যদি আপনি ঈশ্বরের প্রভাবকে অনুধাবন করতে চান, এটা হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়।

 

যদি এটাই হয়, তবে কেন আধুনিক বিজ্ঞান ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?

না, আধুনিক বিজ্ঞান ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না। কিন্তু এই বিষয়টি আধুনিক পদার্থ বিদ্যার আওতার বাইরে। নিউটন, আইনস্টাইন ইত্যাদি সকল মহান বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়ুন। কেউই ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন নি। বাস্তবে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী। আধুনিক বিজ্ঞান ঈশ্বরের সেই সকল বৈশিষ্ট্যগুলোকে অস্বীকার করে যেগুলো যুক্তি, প্রমানিত নিরীক্ষন ও গবেষনা বিরোধী।

ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের আবির্ভাব ঘটেছে বাইবেলীয় আস্তিকতার ধারনার প্রতিক্রিয়ায়। যা হোক, নতুন নতুন গবেষনা সংগঠিত হয়েছিলো বাইবেলের অনেক অনেক ধারনার আসল সত্য প্রকাশ হয়েছে। এভাবেই বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছিলো । আধুনিক বিজ্ঞান বাইবেলীয় ঈশ্বর দর্শনকে বাতিল করে দিয়েছে তার বস্তুনিষ্ট গবেষনার যাত্রাকে চলমান রাখতে। এবং তখনই ঈশ্বরকে বাতিল করার বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের অধিক আলোচনার বিষয় হয়।

 

আধুনিক বিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে ভক্ত সম্প্রদায়ভিত্তিক রক্ষনশীল খ্রিস্টান ও ই**ম থেকে এবং তাই (আব্রাহামিক মতবাদের) ঈশ্বরকে বাতিল করাটা হয়ে উঠেছে এর (আধুনিক বিজ্ঞানের) বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সাধারন কথায় আধুনিক বিজ্ঞান ঈশ্বরকে বাতিল করেছে যার কোন অস্তিত্ব নেই৷ কিন্তু এটা ( আধুনিক বিজ্ঞান)  বাতিল করেনি এবং করতে পারেনি ঈশ্বরকে যার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না।

 

অস্তিত্ব নেই এমন ঈশ্বর বলতে কি বুঝিয়েছেন?

 

ঈশ্বর যিনি বৈশিষ্ট্য ও আচরনে মানুষের মতো।

 

. ঈশ্বর যিনি সর্বভুতে বিরাজমান অবস্থিত নন।

 

ঈশ্বর যিনি লোকজনের প্রতিদিনকার বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করেন।

 

. ঈশ্বর যিনি সময়সুযোগে অলৌকিক ঘটনা ঘটান।

 

. ঈশ্বর যিনি তাঁর অনুসারীদের পাপকে ক্ষমা করেন।

 

. ঈশ্বর যিনি আমাদেরকে স্বর্গে ও নরকে পাঠান।

 

. ঈশ্বর যিনি তাঁর বার্তাবাহক, দেবদূত বা অবতার পাঠান।

 

. ঈশ্বর যিনি পরিবর্তন হন ।

 

. ঈশ্বর যিনি চতুর্থ আকাশে,  কল্পিত বৈকুণ্ঠে অবস্থান করেন।

 

. ঈশ্বর যিনি কোন নির্দিষ্ট বই বিশ্বাস না করার জন্য শাস্তি দেন।

 

. ঈশ্বর যিনি জগতের শেষ বা ধ্বংসের পরে বিচার দিবসের জন্য অপেক্ষা করেন।

 

. ঈশ্বর যিনি জগতকে সৃষ্টি করেছেন কয়েক ঘন্টা বা দিনে।

 

. ঈশ্বর যিনি দেবদূতদের সৃষ্টি করেছেন।

 

. ঈশ্বর যিনি কোন শয়তানের, রাক্ষস, দানবের সাথে যুদ্ধ করেন।

 

ঈশ্বর যার এই ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে এককথায় তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। বেদ অথবা আধুনিক বিজ্ঞান এটি বিশ্বাস করেনা কারন এটি যুক্তি বিরোধী৷

 

इमोन पण्डित

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ কিভাবে আমরা ঈশ্বরের লক্ষনগুলো বুঝবো এবং ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা কিভাবে লাভ করা যায়

কিভাবে আমরা ঈশ্বরের লক্ষনগুলো বুঝবো❓

 

চারটি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগত দিক বিশ্লেষন ও নিরীক্ষনের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের লক্ষনগুলো বুঝতে পারব।

প্রথম দিক কোনটি❓

 

✅মহাবিশ্বের নিয়মঃ শুধুমাত্র ভাবুন, একটি আইন বা নিয়মবিধি আসলে কি ❔ যেকোন ব্যাক্তি বা বস্তু যেটা যথাযথভাবে পুন পুনঃ একই ঘটনা ঘটানোর প্রদর্শন করে এটাই আইন বা নিয়ম। তাই এখানে প্রশ্নটা আসে, কে বা কি এই নিয়মগুলোকে কার্যকর করছে ❔ অন্যভাবে বললে, যদি মহাকর্ষ শক্তি, তড়িৎচুম্বক শক্তি, শক্তিশালী ও দূর্বল বল এই চারটি মৌলিক শক্তি যদি এই জগতকে নিয়ন্ত্রন করে, তবে এটার পিছনে মূল কারনটা কি ❔পদার্থবিদরা এগুলোকে একত্রিত করতে ব্যার্থ হয়েছেন। কিন্তু বলছেন ভবিষ্যতে সফল হবেন। আচ্ছা মনে করি আমরা এই শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ শক্তি বললাম। এখন আমার প্রশ্নটা হবে "এই ঐক্যবদ্ধ বলের উৎসটা কি ❓" এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি বা শক্তিগুলো আরোপিত হবে ঈশ্বরের প্রতি (অর্থাৎ এই শক্তিগুলো তাঁর) তাই ঈশ্বর এই শক্তিগুলো এতই যথাযথভাবে চালনা করছেন যে আমরা এটা পরিমাপ করতে পারছি, তারপর আমরা এটাকে "আইন" হিসেবে নিতে পারছি। তাই ঈশ্বর হলেন সেই সত্তা যিনি এই জগতকে পরিচালনা করছেন।

 

দ্বিতীয় দিক কোনটি ❓

 

✅চেতনাঃ দ্বিতীয় দিক আসে চেতনা থেকে। আধুনিক বিজ্ঞান চেতনার উৎস খুজে পেতে ব্যার্থ হয়েছে। এটা জানায় যে একটা মানব/প্রাণী দেহ ভালোভাবে কাজ করে, প্রায় অটোমেটিক বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায়। তাহলে প্রশ্ন আসে, এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিটা কিভাবে চালু থাকে❔ কিভাবে এটি প্রথম স্থানে আসে❓ তাদের সকলকে হতবুদ্ধি করে দেয়।

 

এছাড়াও ব্যাথা ও আনন্দের উৎস যেটা বিষ্ময়কর মনস্ত্বাত্তিক বিষয়ের উৎস এটা এমনকিছু যেটা আধুনিক বিজ্ঞান পরিমাপ করতে সক্ষম হয়নি কারন এর যন্ত্রপাতিগুলো ক্ষুদ্রাংশ এর তুলনায় অধিক সুক্ষ্মতর হতে পারে না। এবং এই চেতনা এর চেয়ে বেশি সুক্ষ্ম । রাসায়নিক বিক্রিয়া চেতনাকে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। এই বিষয়ের উপর যে কোন আধুনিক বই পড়ুন আপনি জানতে পারবেন এটি আধুনিক বিজ্ঞানকে এড়িয়ে যায়।

 

এখন তারা বলে যে চেতনা সমগ্র ব্যবস্থাটায় (অর্ন্তনিহীত) রয়েছে এবং এটি মস্তিষ্কের যেকোন একটি অংশে অবস্থিত নয়। কোন বিষয়টি প্রাণী বা মানুষের ব্যথার অনুভুতি  জাগায় এবং কোন নিউরনগুলো সিদ্ধান্ত নেয় উদ্দীপিত করতে এবং কখন, এটা এখন পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।কিভাবে মস্তিষ্ক কাজ করে, এবং কিভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত সক্রিয়তায় পরিবর্তন হয়, কোনটি আমাদেরকে বিভিন্ন আবেগ অনুভুত করায়, কে এই আবেগ অনুভব করে, এই প্রশ্নগুলো আছে যেগুলোর কোন উত্তর আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারে না। একজন বিখ্যাত নিউরোসার্জন দ্বারা পরিচালিত) Human Body Mind Power নামক বিবিসির একটি ডকুমেন্টারীতে তিনি স্বীকার করেন যে আমরা যাকে চেতনা বলি সেটি আত্মাকে ইঙ্গিত করে।

বেদ অনুসারে, এই সত্তা যা ব্যথা / আনন্দ অনুভব করে তা হলো আত্মা। যে সত্তা চেতনা এবং চেতনাহীনদের (প্রাণহীনদের) পরিচালনা করেন তিনি হলেন ঈশ্বর । কারণ ঈশ্বর চেতন সত্তাগুলোকে পরিচালনা করেন, ঈশ্বরও চেতন। যেহেতু ঈশ্বর এবং আত্মা বস্তুগত বা দৈহিক সত্তার চেয়ে সূক্ষ্ম, তাই তারা অবিনশ্বর, জন্মহীন এবং মৃত্যুহীন। কিন্তু এইটি অপরদিকে তাদেরকে তাদের অপরিমাপযোগ্য বা অনিরীক্ষনযোগ্য করে তোলে।

আচ্ছা ঠিক আছে, তৃতীয় দিকটি কি❓

 

কারণ-প্রভাব শৃঙ্খল: যদিও আধুনিক বিজ্ঞান অনেক তত্ত্ব ও আইন তৈরি ও বিকশিত করেছে, তবে তা সেগুলোকে (সেই তত্ত্ব ও আইনকে) কারণ-প্রভাব শৃঙ্খলে সুসামঞ্জস্যভাবে একত্রিত করতে সক্ষম নয়। উদাহরণস্বরূপ, চারটি মৌলিক বল রয়েছে এমনটা বলা হয়। কিন্তু কিভাবে এই বল পারষ্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় জটিলতার সাথে একটি জীবন্ত শরীর এবং মহাবিশ্বের গঠন তৈরি করে, এটি একটি রহস্য।

ক্ষুদ্রতম কণার এবং মহাবিশ্বের নিয়মসমূহ, কোয়ান্টাম ও আপেক্ষিকতা সূত্র একে অপরের বিপরীত। যখন মহাবিশ্বের বয়স লোহিত সরণ  (red-shift) এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়, তখন নির্দিষ্ট তারকাগুলোর বয়সের তুলনায় এর মান অনেক কম হয়, যখন পরিমাপ করা হয়েছিলো প্রতিক্রিয়া হারে পরিবর্তনের হারের মাধ্যমে। শেষের প্রক্রিয়াটিকে মনে করা হয়েছিলো অনেক যথাযথ, কিন্তু এটি প্রমান করে তারকাগুলো মহাবিশ্বের চেয়ে অনেকটা পুরোনো! যেন, সন্তানের বয়স মাতাপিতার তুলনায় বেশি! আধুনিক বিজ্ঞান তার নিরীক্ষার দ্বারা নির্দিষ্ট বলের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জেনেছেন, কিন্তু জানতে পারেননি এটি কিভাবে রূপান্তরিত হয়।

. মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে

 

. প্রতিটা প্রাণী / মানবের চেতনাশক্তিতে

 

. প্রাণী জগতের সামাজিক আচরনে।

 

নিজ প্রজাতির একটি শিশুর জন্য ঐ প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সুরক্ষার চেতনার উপস্থিতির মত একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া বিদ্যমান।. মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে

 

. প্রতিটা প্রাণী / মানবের চেতনাশক্তিতে

 

. প্রাণী জগতের সামাজিক আচরনে।

 

নিজ প্রজাতির একটি শিশুর জন্য ঐ প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সুরক্ষার চেতনার উপস্থিতির মত একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া বিদ্যমান।

আচ্ছা ঠিক আছে, চতুর্থ দিকটি কি❓

 

✅মাতৃগর্ভে থাকা বাচ্চাঃ মাতৃগর্ভে থাকা বাচ্চা এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না। এটা তার খাবার, বাতাস সকলকিছু পায় নাভিরজ্জুর মাধ্যমে। এবং এটি এমন একটা পদ্ধতিতে বিকশিত হয় যখন সে গর্ভের বাহিরে আসে ব্যবস্থাটা ইতোমধ্যেই তৈরী থাকে তার কার্যক্রমগুলোকে সহায়তা করতে যেমন নিঃশ্বাস নেওয়া, হৃদপিন্ড-ফুসফুস প্রক্রিয়া ইত্যাদি । কিভাবে এমন একটি 'ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত' স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বিকাশ লাভ করেছে ❔ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত সচেতন সত্তা সকল কিছুতে এটি পরিকল্পনা করেছেন, এটি মেনে নেয়া ছাড়া এটার কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়।

প্রাণের এবং জগতের যেকোনো দিকের বিশুদ্ধ বিশ্লেষণের ফলে (এই জ্ঞান) অর্জিত হবে যে এটা কেবল এলোমেলোভাবে ঘটছে এমন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া নয়। এই সকলকিছু অবশ্যই একটি পরম চেতন শক্তি পরিচালনা করছেন।

 ঈশ্বর আছেন এই আইডিয়াটা আমি পেয়েছি। কিন্তু আমি কিভাবে   ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করব❓

 

তুমি ঈশ্বরকে অনুধাবন করতে পার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইঙ্গিতে।

 

কিন্তু সরাসরি ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব নয়। তাহলে তুমি কিভাবে ঈশ্বরকে (ঈশ্বরের ধারনাকে) প্রতিষ্ঠিত করবে?ঈশ্বর আছেন এই আইডিয়াটা আমি পেয়েছি। কিন্তু আমি কিভাবে   ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করব?

 

তুমি ঈশ্বরকে অনুধাবন করতে পার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইঙ্গিতে।

 

কিন্তু সরাসরি ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব নয়। তাহলে তুমি কিভাবে ঈশ্বরকে (ঈশ্বরের ধারনাকে) প্রতিষ্ঠিত করবে

প্রমাণের অর্থ ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলি থেকে প্রাপ্ত উদ্দীপনার মাধ্যমে নির্ধারিত সুস্পষ্ট জ্ঞান। তবে লক্ষ্য করুন যে ইন্দ্রিয়গুলি বৈশিষ্ট্য, গুন, ধর্মগুলি ধরতে পারে, কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণকে ধরতে পারে না।

 

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন এই লেখাটি পড়েন, তখন আপনি অগ্নিবীরের অস্তিত্বকে ধরেন না, শুধুমাত্র কিছু ছবি আপনার স্ক্রীনে / পৃষ্ঠায় আসছে যা আপনি অর্থপূর্ণ জ্ঞানের মধ্যে  ব্যাখ্যা করেন। তারপর আপনি উপসংহারে আসেন যে এই লেখার কোনো না কোনো লেখক আছেই এবং আপনি দাবি করেন অগ্নিবীর এর অস্তিত্বের প্রমাণ আছে। তাই এটি হলো 'পরোক্ষ প্রমান'  যদিও এটিকে 'প্রত্যক্ষ' বলে মনে হয়।

একইভাবে এই পুরো সৃষ্টি যা আমরা দেখি এর বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো দ্বারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অনুভব করি।

 

যখন আপনি একটি ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত ইনপুট কোন একটি বিষয়ের সাথে সরাসরি সংযোগ করতে পারবেন, তখন "সরাসরি প্রমাণ আছে" আপনি এমন দাবি করবেন। উদাহরণস্বরূপ,

 

যখন আপনি একটি আম খান, তখন আপনি মিষ্টির বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করেন এবং এটিকে আমের সাথে জুড়ে দেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আপনি এমন "প্রত্যক্ষ প্রমানের" সহযোগী হন শুধুমাত্র ঐ বিশেষ ইন্দ্রিয় দ্বারা যেটি ঐ বৈশিষ্ট্যকে নিরীক্ষন করেছে। এভাবেই পূর্বের উদাহরণ থেকে বলা যায় আপনি শ্রবনেন্দ্রিয় বা কানের মাধ্যমে আমের প্রত্যক্ষ প্রমান পাবেন না, আমের প্রত্যক্ষ প্রমান পাবেন শুধুমাত্র জিহবা, নাক বা চোখ দিয়ে। বাস্তবতায় এটাও 'পরোক্ষ প্রমান' যদিও এটাকে আমরা 'প্রত্যক্ষ প্রমান' রূপে মেনে নিয়েছি সহজভাবে বোঝার স্বার্থে।

এখন, ঈশ্বর যেহেতু সবচেয়ে সূক্ষ্ম বিদ্যমান সত্তা, তাই চোখ, নাক, জিহ্বা, ত্বক বা কানের মত মোটা ইন্দ্রিয়ের অঙ্গগুলির মাধ্যমে ঈশ্বরের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেও অতিআনবিক কণা দেখতে পাচ্ছি না, আমরা অতিস্বনক শব্দ (ultrasonic sound) শুনতে পাই না এবং আমরা প্রতিটি অণুর স্পর্শ অনুভব করতে পারি না।

 

অন্য কথায়, এই অস্পষ্ট ও দুর্বল ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ঈশ্বরকে প্রমাণ করা অসম্ভব, ঠিক যেমন শ্রবনেন্দ্রিয় বা কানের মাধ্যমে আম কে অনুভূত হতে পারেনা বা সাবটোমিক কণা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় না আমাদের কোন ইন্দ্রিয় দ্বারা।

এমন কোন পথ আছে কি যাতে আমরা সরাসরি ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি❓

 

ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারে একমাত্র যে ইন্দ্রিয়, তা হলো মন। যখন মন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিক্ষোভমুক্ত থাকে (সব সময় হাজার হাজার ভাবনা আসছে) এবং ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত করা হয়। ঈশ্বর প্রত্যক্ষভাবে প্রমানিত হতে পারে বুদ্ধির মাধ্যমে, সেই একই ভাবে যেমনটা আমের স্বাদের প্রমান পেয়েছিলো।

ঈশ্বরকে অনুধাবন করা জীবনের লক্ষ্য, এবং একজন যোগী এটাই করার উদ্যোগ নেয় মনকে নিয়ন্ত্রন করার নানা কৌশলের মাধ্যমে, যেখানে কিছু বিষয় অনুশীলন করা অন্তর্ভুক্ত থাকে যেমন অহিংসা, সত্যান্বেষা, ধৈর্য্য, সকলের জন্য শান্তি অন্বেষন, উচ্চ মানবিক চরিত্র, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মনুষ্যগনের মধ্যে একতা ইত্যাদি।

 

একটি উপায়ে, প্রতিদিন আমরা আমাদের জীবনে ঈশ্বরের সরাসরি প্রমাণ ইঙ্গিত পাই । যখন আমরা চুরি, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতার মতো কোনও ভুল কাজ করতে চেষ্টা করি, তখন আমরা ভয়, লজ্জা, সন্দেহের আকারে সেই অস্পষ্ট 'ভেতরের নির্দেশ শুনতে পাই। এবং যখন আমরা অন্যকে সাহায্য করার মতো মহান কাজে নিয়োজিত থাকি, একটি শিশুকে আশীর্বাদ করি, তখন আমরা আবার সেই 'ভেতরের নির্দেশ শুনতে পাই ভয়হীন, সন্তুষ্টি, উৎসাহ এবং সুখের অনুভুতির আকারে। এই ভিতরের নির্দেশ ঈশ্বর থেকে আসে।

অতএব, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় প্রমাণের মাধ্যমে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্পষ্টরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যেমনভাবে অন্য সত্তাগুলো আমাদের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ হয়েছে।

 

ও৩ম্

নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়।

 চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো,

জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।

॥ যজুর্বেদ ১৬/৩২ ॥ 

 

-  নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।

আলোচ্য বিষয়ঃ ঈশ্বর কি দয়ালু না ন্যায় বিচারক? ঈশ্বর কি তার ভক্তদের পাপ ক্ষমা করেন?

 

 

ঈশ্বর কি দয়ালু না ন্যায় বিচারক?

ঈশ্বর দয়া ও ন্যায়বিচারের উপমা।

কিন্তু এইটা বিপরীত বৈশিষ্ট্য। উদারতা মানে একজন অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া এবং ন্যায়বিচার মানে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান। উভয় বৈশিষ্ট্য কিভাবে একই সাথে বিদ্যমান হতে পারে?

দয়া এবং ন্যায়বিচার এক এবং একই কারণে উভয়েই একই উদ্দেশ্য সাধন করে।

দয়া করা অর্থ অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া বোঝায় না। কারণ যদি অপরাধীকে ক্ষমা করা দেয়া হয়, অনেক নির্দোষ মানুষ তার শিকার হয়ে যাবে। সুতরাং, যদি কোন অপরাধীকে বিচার না করা হয়, তবে একজন বিচারক নির্দোষ ব্যক্তিদের পক্ষে দয়ালু হতে পারবেন না। এটা অপরাধীদের জন্য ন্যায়বিচারও হবে না কারণ তাতে সেই অপরাধী আরও অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে না।

উদাহরণস্বরূপ, যদি ডাকাতকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তবে সে আবারও বেশ কিছু নির্দোষ ব্যক্তিদের ক্ষতি করবে। যদি তাকে কারাবন্দী করা হয়, তবে এটি কেবল নির্দোষদের ক্ষতি করা রুখে দেয় না, বরং তার নিজেকে উন্নত করার সুযোগ দেয় ফলস্বরূপ সে আর অপরাধ করবে না। তাই ন্যায় বিচার মূলত দয়ার সমর্থক।

প্রকৃতপক্ষে, দয়াশীলতা ব্যাপারটি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করে এবং ন্যায়বিচার ব্যাপারটি প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। যখন ঈশ্বর একজন অপরাধীকে শাস্তি দেন, তিনি সেটা করেন অপরাধীকে আরো অপরাধ করা থেকে প্রতিরোধ করতে এবং তিনি নির্দোষ মানুষকে তাদের কোন অপরাধ ছাড়াই শাস্তি পাওয়া থেকে রক্ষাও করেন । এভাবে, ন্যায়বিচারের সকল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সকলের প্রতি দয়া।

বেদ অনুযায়ী, এবং গবেষনা অনুযায়ী, দুঃখের উৎস হল অজ্ঞতা যা একজন ব্যাক্তিকে "অপরাধ" নামক ভুল কাজ করায়। তাই যখন একজন ব্যাক্তি এইরকম অন্যায় কাজ করে, তখন ঈশ্বর তার স্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন এবং তার অজ্ঞতা দূর করার,  দুঃখ মুছে ফেলার সুযোগ করে দেন।

শুধুমাত্র "সরি" বলাটা ঈশ্বরের ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট না। পাপ বা অপরাধের উৎস অজ্ঞতা ।  যতক্ষন পর্যন্ত অজ্ঞতা দূর করা যাচ্ছে না, আত্মা তার কর্মের জন্য যথাযথ শাস্তি বা পুরষ্কার পেতে প্রতি মুহুর্তে বিভিন্ন জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে যাবে । এই ন্যায়বিচারের সকল উদ্দেশ্য হল আত্মাকে পরমানন্দের উপহার প্রদান করা এবং এটাই সেই আত্মার প্রতি তার দয়াশীলতা।

🔘 তার মানে কি ঈশ্বর পাপ ক্ষমা করবেন না? যদি তা হয়, ই*স*লাম বা খ্রি*স্টধর্ম আরও ভাল। সেখানে যদি আমি স্বীকার করি বা দুঃখিত বলি, আমার সমস্ত অতীতের রেকর্ড মুছে ফেলা হয়, এবং আমি নতুন সুযোগ পাই।

 

⏩    ঈশ্বর পাপ ক্ষমা করেন। তাঁর ক্ষমা নিহীত আছে আমাদের কর্মের সঠিক ফলাফলের উপর, যে কর্ম করার স্বাধীনতা তিনি দিয়েছেন। কিন্তু আপনার অতীতের রেকর্ডগুলি মুছে দেওয়ার মধ্যে (ক্ষমা নিহীত) নয়।

 

যদি তিনি আমাদের অতীতের রেকর্ডগুলি মুছে ফেলতেন, তবে তিনি আমাদের কাছে সবচেয়ে অবিচার ও নিষ্ঠুরতা করতেন। কারণ এই ক্ষেত্রে তিনি আমাদেরকে পরবর্তী শ্রেণীতে উন্নীত করার অনুমতি দিয়েছেন, যখন আমরা বর্তমান শ্রেণীর পাস করার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারিনি। এই প্রক্রিয়াতে, তিনি অন্যদের সাথে অবিচার করেন যারা আমাদের সাথে পারষ্পরিকভাবে সক্রিয়।

 

ক্ষমা করা মানে আপনার যোগ্যতা উন্নত করার সুযোগ প্রদান করা এবং আপনাকে ১০০% নম্বর দেওয়া নয় যখন আপনি শূন্য পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।  মনে রাখবেন, যোগ্যতার উন্নতি এক মুহূর্তে বা 'দুঃখিত' এই এক শব্দ দ্বারা ঘটতে পারে না। এটি একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে আত্মনিয়োজিত অনুশীলন এবং প্রচেষ্টার দাবি করে। শুধুমাত্র অলস লোক সংক্ষিপ্ত পথ খোঁজে, যেমন অনেকে পড়াশুনা ছাড়াই শতভাগ নাম্বার পেতে চায়।

 

দুর্ভাগ্যবশত, যারা তাদের ধর্মের দিকে মানুষকে এই বলে আকর্ষনের চেষ্টা করে যে - ঈশ্বর তাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তারা আসলে নিজেদের এবং জনগণকে বোকা বানাচ্ছেন। ধরুন কারো ডায়াবেটিস আছে। এটা কি শুধু 'দুঃখিত' বললেই দূর হয়ে যায়? যখন একটি শারীরিক রোগকে মুক্ত করতে 'দুঃখিত' বলার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করা লাগে, কিভাবে মানব মনের মত একটা জটিলতর বিষয়ের ক্ষেত্রে 'দুঃখিত' বললেই মুক্ত হয়ে যায়?

 

 

এই (আব্রাহামিক) মতাদর্শগুলোতে একটি বিরাট ত্রুটি আছে, তারা এক জীবনে বিশ্বাস করে এবং পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরে বিশ্বাস করেনা। তাই তারা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য কৃত্রিম সংক্ষিপ্ত তাড়াতাড়ি' সূত্র তৈরি করতে চায় এবং মানুষরা তাদের সাথে একমত না হলে তারা তাদেরকে নরকের ভয় দেখায়।

 

বৈদিক দর্শন অনেক বেশি স্বাভাবিক, যুক্তিসঙ্গত এবং ন্যায্য। সেখানে না আছে এমন কোন জা*হান্নাম যেখানে আপনি চিরকালের জন্য জ্বলতে, ঈশ্বর(যিনি মায়ের মতো প্রেমময়) কর্তৃক নিক্ষেপিত হবেন, আর না তিনি আপনাকে আপনার প্রাপ্য সেই সুযোগ থেকে বিরত করেন যেটাতে আপনি প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন। সবশেষে,নিজেই ভেবে দেখুন কোনটি অধিকতর সন্তোষজনক?

জাল মার্ক শীটের মাধ্যমে প্রথম স্থানটি অধিকার করা ? যেখানে আমরা জানি যে প্রকৃতপক্ষে আমরা শূন্য পেয়েছিলাম? না কি কঠোর পরিশ্রমে এবং অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে গর্বিত প্রথম স্থান অধিকার করা ? যেখানে আমরা জানি যে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সেই বিষয়টিতে প্রথম স্থান অর্জন করতে!

 

সুতরাং বলা যায় বেদে, সাফল্যের জন্য কোন সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘমেয়াদি পথ নেই। শুধুমাত্র সঠিক পথ আছে!  কোনও বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারনাপূর্ণ সংক্ষিপ্ত পথের চেয়ে এই সঠিক পথের সাফল্য অনেক বেশি সন্তুষ্টকর!q

 

এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে।

 

🔘 ঈশ্বর কি তাঁর ভক্তদের পাপ ক্ষমা করেন না?

 

⏩    ঈশ্বর শুধুমাত্র ভবিষ্যতের পাপ ক্ষমা করেন। ঈশ্বরের একনিষ্ট উপাসক হওয়ার দ্বারা, আমাদের মন শুদ্ধ হয়, সেইজন্য, ভবিষ্যতে আমাদের দ্বারা কৃত পাপ কাজ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়। ঈশ্বর এই শুদ্ধি প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করেন।

 

কিন্তু অতীতের পাপ কখনো ক্ষমা করা হয় না। আমাদের প্রতিটি কাজ সেটা ভাল বা খারাপ যাই হোক না কেন, অবশ্যই যথাযথ ফলাফল প্রদান করে। কোন রেকর্ডই মুছে ফেলা হয় না।

 

যাইহোক, ফলাফলগুলি হল এমন যে কেবলমাত্র আমাদের সর্বোত্তম সুফলের জন্য তাদের অভিপ্রায় অর্থাৎ আমাদেরকে পরম আনন্দের দিকে অগ্রসর করানো । এটা হয় তাঁর (ঈশ্বরের) নিঃশর্ত দয়াশীলতার কারণে।

 

এইভাবে, মানুষ, যারা বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করে, উপবাস করে, তীর্থযাত্রা করে, স্নান করে তাদের অতীতের রেকর্ড মুছে ফেলার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে এবং নিজেদের বোকা বানায় । এইভাবে আপনি দেখবেন যে প্রতারক রাজনীতিবিদ, অভিনেতা এরা ঈশ্বরের নিকট এককাঠি বেশি 'ঘনিষ্ঠ'। এইভাবে অশ্লীল সিনেমাগুলি দেবতাদের / পূজার স্থানের বা ধর্মীয় শ্লোকের মাধ্যমে শুরু হয়। এ ধরনের মানুষ ব্যাপক ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এবং তাদেরকে মন্দির, দরগা, মস*জি*দগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়। এটি শুধুমাত্র প্রচারের কৌশল হিসাবে কাজ করে না, অধিকন্তু এটি তারা সামঞ্জস্য আনয়নের জন্য করে থাকে যাতে নিয়মিত ভিত্তিতে তারা যে ঘৃন্য পাপ করেছে তা যেন মুছে যায়

 

কিন্তু ঠিক যেমন স্থূলতা কেবলমাত্র একটি পিল খেলে দূর হয় না বা 'দুঃখিত' শব্দটা বললেই পাপের প্রবণতা তাৎক্ষণিকভাবে মুছে যায় না। এটা নিয়মিত প্রচেষ্টার দাবি রাখে।

বাস্তবে, ঈশ্বর ন্যায় বিচার করার জন্য অপেক্ষা করেন না। যে মুহূর্তে আমরা কোন ভালো বা খারাপ কর্ম করি, তিনি আমাদেরকে ফলাফল দিতে শুরু করেন। যাইহোক, এই ফলাফলের বাস্তব প্রভাব অবিলম্বে বা কিছুসময় পর আমাদের কর্ম এবং আমাদের বুঝতে পারার ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের দ্বারা পরিলক্ষিত হয় । যখন ফলাফল অনুধাবন করতে বিলম্ব হয়, তখন আমরা এটিকে অতীতের কর্মফল হিসাবে অভিহিত করি। কিন্তু বাস্তবে, এই প্রক্রিয়াটি অবিরতভাবে ঘটে চলছিলো ঠিক যে মুহুর্ত থেকে আমরা কাজটি করেছিলাম তখন থেকেই । এটা অনেকটা ডায়াবেটিসের মত যেটা অবিরত ঘটতে থাকে, আমাদের গ্রহন করা প্রতিটি খাদ্যের মাধ্যমে বা আমরা ব্যায়াম করেছি বা করিনি (তার মাধ্যমে) বা আমরা কোন চাপ নিয়েছি বা নেইনি (তার মাধ্যমে)। তবে তার প্রভাব হয়তোবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরেই প্রকাশ হতে পারে।

 

এছাড়াও, ঈশ্বর যদি পাপের অতীতের রেকর্ডগুলিকে মুছে ফেলতেন, তবে তিনি আর ন্যায় বিচারক থাকতে পারবেন না কারণ সবারই প্রবণতা থাকবে এই মুহুর্তে অপরাধ করার এবং তারপর পরবর্তীতে 'দুঃখিত' বলবে পূর্বে উল্লেখিত প্রতারক লোকেদের মতন। যদি ঈশ্বর তাদের কথা শুনেন, তবে তাদের এই নির্বুদ্ধিতা ও পাপ কর্ম কেবল আরও আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা পাবে। এমনকী যারা পাপ করে না তারাও পাপ কাজের প্রেরণা পাবে। অতএব, ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু উভয়ই, যেটা নিশ্চিত করে যে আমাদের প্রত্যেকটি কর্ম কমও নয় বা বেশিও নয় একদম যথাযথ ফল প্রদান করে কারন শুধুমাত্র আমাদের উপকারের জন্য।

 

অতএব, সে সকল দলীয় বিশ্বাসী ব্যক্তিরা যারা তাদের দেবদূতকে বা ন*বি*কে স্বীকার করার মাধ্যমে পাপের ক্ষমা লাভের লোভ দেখিয়ে লোকেদেরকে আকৃষ্ট করে, তারা ঈশ্বরকে অপমান করে এবং নিজেদেরকেও বোকা বানায়। সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের অবিলম্বে তাদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত

 

নমস্কার। আজকের আলোচনা এখানেই সমাপ্ত।

 

★★ ★★★ পঞ্চমহাযজ্ঞ:

 

প্রথম ব্রহ্মযজ্ঞ, [ঋ০ ১।৬।১] ব্রহ্মযজ্ঞ হল ব্রহ্মকে জানার প্রচেষ্টা। পশুজন্মের সাথে মানবজন্মের পার্থক্য কী? একটি পশু আহার করে, ঘুমায়, মৈথুন করে। একজন মানুষের জীবনও‌ যদি আহার, নিদ্রা, মৈথুনেই কেটে যায়, তাহলে পশুর সাথে তার পার্থক্য কী! ঈশ্বর আমাদের‌ শ্রেষ্ঠ মনুষ্যযোনী দিয়েছেন, বর্তমান মনুষ্য জন্মকে সার্থক তখনই করতে পারি, যদি আমরা এই দুর্লভ জন্মকে ব্রহ্ম সাধনার কাজে লাগাই।‌ "তমেব বিদিত্বাতি মৃত্যুমেতি নান্য পন্থা বিদ্যতেঽয়নায়।" [যজু ৩১।১৮]। এই ব্রহ্মকে জানলেই মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায়, মুক্তিলাভের আর কোনো উপায় নেই। এভাবেই আমরা‌ ক্রমান্বয়ে জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তিরূপ মোক্ষের দিকে ধাবমান হতে পারব। ব্রহ্মকে জানার যেকোনো প্রচেষ্টাই ব্রহ্মযজ্ঞ। সাধারণত যোগ, প্রাণায়াম, স্বাধ্যায় [শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন], অধ্যাপনা, ঈশ্বরের স্তুতি, প্রার্থনা, উপাসনা এসকলই ব্রহ্মযজ্ঞের অন্তর্ভুক্ত।

 

✅   দ্বিতীয় দেবযজ্ঞ,[ ঋ০ ৮।৪৪।১ , যজু০ ৩।১, যজু০ ১২।৩০ ] নিত্য অগ্নিহোত্রসহ সকল যজ্ঞ, প্রাকৃতিক শক্তির উদ্দেশ্যে হবি অর্পণ, বিদ্বাষগণের সংসর্গ লাভ ও সেবা করাই দেবযজ্ঞ।

 

🔖 গীতায় আছে,  তাই প্রতিদিন কিংবা বিশেষ তিথিতে কাষ্ঠ, নানা আহার্য শস্যদ্রব্য, ঘৃত, সুগন্ধি মশলা, কেসর, জাফরান, পুষ্প প্রভৃতি দিয়ে যজ্ঞ করতে হবে। নানা সুগন্ধি দ্রব্য হবি দেয়ার ফলে বায়ু ও বিশুদ্ধ ও নিরোগ থাকে।

 

✅   তৃতীয় পিতৃযজ্ঞ, [যজু০ ২।৩৪] আমাদের প্রপিতামহ-প্রপিতামহী, পিতামহ-পিতামহী, মাতা-পিতা, স্বগোত্রীয় কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ, গুরু বা আচার্য তথা অন্য যেকোনো বিদ্বান্ বা শিক্ষিত ব্যক্তি যাঁরা অনুভবপ্রবীণ, জ্ঞানপ্রবীণ ও মান-সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে 'পিতর' বলা হয়। তাদের যথাযথভাবে সন্মান প্রদর্শন, তাঁদের সাথে ভালো আচরণ ও তাঁদের শ্রদ্ধা করাই পিতৃযজ্ঞ। ‘

 

'‘যে সমানাঃ সমনসঃ পিতরো যমরাজ্যে'’, [যজু০ ১৯।৪৫ ] '‘পিতৃভ্যঃ স্বধায়িভ্যঃ স্বধা নমঃ'', [যজু০ ১৯।৩৬] পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহাদির তথা ‘'নমো বঃ পিতরো রসায়' ইত্যাদি মন্ত্র [যজু০ ২।৩২] পিতরদের সেবা ও সৎকার করার পক্ষে প্রমাণস্বরূপ । '‘অহতৌ পিতরৌ ময়া' যজুর্বেদ [১৯।১১] = আমার মাধ্যমে যেন আমার মা-বাবা কষ্ট না পায়।

 

👉  এ বিষয়ে মহর্ষি মনু বলেছেন "কুর্য়াদহরহঃ শ্রাদ্ধমন্নাদ্যেনোদকেন বা। পয়োমূলফলৈর্বাঽপি পিতৃভ্যঃ প্ৰীতিমাবহন্।। [মনু০ ৩।৮২]" অর্থাৎ গৃহস্থ ব্যক্তি অন্নাদি ভোজ্য পদার্থ এবং জল, দুধ, কন্দমূল, ফল ইত্যাদি দ্বারা পিতরদের প্রসন্নতার জন্য প্রতিদিন শ্রাদ্ধ করবে অর্থাৎ শ্রদ্ধা সহকারে পিতামাতার সেবা-সৎকার করবে। এখানে ভগবান্ মনু স্পষ্টভাবে জীবিত পিতরদের সেবা করার জন্য বিধান দিয়েছেন এবং সেটি প্রতিদিন করতে বলেছেন।

 

⭐ প্রসঙ্গত অন্ত্যেষ্টি কর্ম ব্যতীত পৃথক কোনো কর্ম মৃতের জন্য দ্বিতীয়বার কর্তব্য নয়। মূলত 'শ্রাদ্ধ' শব্দের মূল অর্থ শ্রদ্ধা, “শ্রৎ সত্যং দধাতি য়য়া ক্রিয়য়া সা শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধয়া য়ৎ ক্রিয়তে তচ্ছ্রাদ্ধম্। অর্থাৎ যে ক্রিয়া দ্বারা সত্যকে গ্রহণ করা যায় তার নাম শ্রদ্ধা এবং যা শ্রদ্ধা সহকারে করা যায়, তার নাম শ্রাদ্ধ।

 

মৃত্যুর পরে তো জীব কর্মানুসারে বিভিন্ন যোনিতে গমন করে, অতএব মৃত্যুর ১৫ দিন বা ১ মাস পরে কোনো অনুষ্ঠান করে তাদের তৃপ্তি বা সেবা কখনো সম্ভব নয়৷ আর মাতা, পিতা, পুত্রাদি সম্বন্ধ শারীরিক। শরীর নষ্ট হওয়ার পর কে কার পিতা আর কে কার পুত্র? অতএব জীবিতকালে শ্রাদ্ধ করাই বৈদিক নিত্যকর্ম।

 

✅   চতুর্থ ভূতযজ্ঞ হল জগতের সকল মানুষ ও পশুপাখির কল্যাণ কামনা ও তাদের সর্বদাই যথাসাধ্য সাহায্য করা [ ঋ০ ২।১৩।৪] ।  "দ্বিপাদব চতুষ্পাৎ পাহি" [যজু০ ১৪।৮] দ্বিপাদ ও চতুষ্পাদ প্রাণীদের সংরক্ষণ করো। "ঊর্জম্ নো ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে" [যজু০ ১১।৮৩] সকল দ্বিপদী ও চতুষ্পদী বৃদ্ধি ও পুষ্টিপ্রাপ্ত হোক- এভাবেই পবিত্র বেদে সকল প্রাণীর  সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

 

মানব ও পশুর প্রতি আমাদের সর্বদাই উত্তম আচরণ করা উচিত। আমরা অসুস্থ মানবের সেবা করতে পারি, দুঃস্থদের সাহায্য করতে পারি, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিতে পারি, অবলা প্রাণীর জন্যও আহার, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারি। এসবই ভূতযজ্ঞ।

 

🔖"শুনাং চ পতিতানাং চ শ্বপচাং পাপরোগিণাম্ ।বায়সানাং কৃমীণাং চ শনকৈর্নির্বপেদ্ ভুবি।।" [মনু ৩।৯২] অর্থাৎ,   কুকুরাদি পশু, পতিত ব্যক্তি, অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তি, কুষ্ঠাদি ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী, কাক আদি পক্ষী ও পিঁপড়া আদি কীটের জন্যে খাদ্যদ্রব্যের ছয় ভাগ আলাদাভাবে ভাগ করে দেওয়া ও তাদেরকে সদা প্রসন্ন রাখা উচিত।

 

✅ পঞ্চম 'অতিথিযজ্ঞ' অতিথিদের যথাযথ সেবা। যিনি পূর্ণ বিদ্বান, পরোপকারী, জিতেন্দ্রিয়, ধার্মিক, সত্যবাদী, ছল-কপট-রহিত, নিত্য ভ্রমণকারী মানুষ, তিনিই ‘অতিথি ।  [ অথর্ব০ ৯।৬।[৩]১-৮]

 

কারো ঘরে যখন‌ এসব গুণযুক্ত, সেবা করার যোগ্য অতিথি আসেন; তখন তাঁকে গৃহস্থ দাঁড়িয়ে নমস্কার করে, উত্তম আসনে বসাবেন। পরে গৃহস্থ তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, "আপনার জল, খাদ্য বা অন্য কোনো বস্তুর ইচ্ছা হয় সেটা বলুন । হে অতিথি! যেভাবে আপনার কামনা পূর্ণ হয়, আমরা সেভাবেই আপনার সেবা করবো।"

 

এভাবেই আমরা মানব পরস্পর সেবা ও সৎসঙ্গপূর্বক বিদ্যাবৃদ্ধি দ্বারা সর্বদা আনন্দে থাকতে পারি।‌

 

✅   আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ উপাসনার বৈদিক পদ্ধতি কোনটি এবং ঈশ্বর স্তুতি কি?


🔰 উপাসনার বৈদিক পদ্ধতি কোনটি?

 

বেদ ঈশ্বরকে মানুষের মত বিবেচনা করে না। এটি ঈশ্বরের প্রথাগত উপাসনায়ও বিশ্বাস করে না। বিপরীতে, এটি যোগ পদ্ধতিতে ঈশ্বরের পূজা করার শিক্ষা দেয় যেটা আত্মা, মন এবং দেহের জন্য একটি টনিক/ঔষধি  হিসাবে কাজ করে। যোগ পদ্ধতিকে বর্তমানে সময়ে জনপ্রিয় 'আসন' এবং 'প্রানায়ামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে বিভ্রান্তিতে পড়া যাবে না।

অপরদিকে, যোগ পদ্ধতি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যাহা ব্যাক্তিকে ঐশী বিধানের সাথে একাত্মতা আনে যে বিধান এই সৃষ্টিকে চালিত করছে এবং এভাবে ব্যাক্তির আনন্দ ও মনের শক্তিকে বহুগুনে বৃদ্ধি করে।

⭕ঠিক আছে। কিন্তু আগে আপনি বলেছেন যে ঈশ্বর অলঙ্ঘ্যনীয় বিধান অনুযায়ী কাজ করেন। তাহলে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করলে কিভাবে সহায়তা করবে যদি ঈশ্বর শুধুমাত্র তাঁর অলঙ্ঘ্যনীয় বিধান অনুসারেই কাজ করেন?

 

ঈশ্বর বিশেষ ডিসকাউন্টের প্রস্তাব দেন না। তার করুণা তাঁর বিধান ও কার্যপদ্ধতির মধ্যেই নিহীত থাকে । কাজেই, কর্মের তত্ত্ব অনুযায়ী যা ঘটবে প্রার্থনাগুলো তা অগ্রাহ্য করবে না । প্রার্থনাগুলো যা করে তা হলো সে আপনার নিজের ইচ্ছাগুলোকে শক্তিশালী করবে যাতে কাল আপনি আপনার ইচ্ছাকে সঠিক পথে চালনা করেন এবং এভাবেই, সামনের ভুলগুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করেন।

 

⭕ কিন্তু এখনও, কেন আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত? সর্বোপরি, তিনি কখনও ক্ষমা করেন না! ঈশ্বরের উপাসনায় কি উপকার হয়?

ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত, এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা উচিত।

 

এটা সত্য যে, ঈশ্বরের পূজা দ্বারা আপনি হলে শর্টকাট পাসের শংসাপত্র (certificate) পাবেন না। একমাত্র অলস এবং প্রতারকগন সফলতার জন্য এই ধরনের অযাচিত উপায় কামনা করে।

ঈশ্বরের উপাসনার উপকারগুলি ভিন্নঃ

 

ইশ্বরের উপাসনা দ্বারা, একজন ব্যাক্তি ঈশ্বর এবং তাঁর সৃষ্টিকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন।

উপাসনা দ্বারা, একজন ভালভাবে তাঁর বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারে এবং এগুলোকে তার নিজের জীবনে গ্রহণ করতে পারেন । এটি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে, ভবিষ্যতের পাপের উৎসকে ধ্বংস করে, সত্য ও সমবেদনার গুণাবলীকে উৎসাহ দেয় এবং সত্য ও পরমসুখের কাছাকাছি আসে।

উপাসনা দ্বারা, যে কেউ 'ভেতরের কন্ঠস্বর ভালভাবে শুনতে পারেন এবং তাঁর কাছ থেকে নিয়মিত পরিষ্কার নির্দেশিকা পেতে পারেন।

উপাসনা দ্বারা, একজন ব্যাক্তি অজ্ঞতা দূর করেন, শক্তি লাভ করেন এবং আত্মবিশ্বাস এবং আত্মরক্ষার সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সহ্য করতে পারেন।

পরিশেষে, একজন ব্যাক্তি অজ্ঞতা সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারেন এবং পরম সুখের সাথে মোক্ষ বা পরিত্রাণ অর্জন করতে পারেন।

আমি উপাসনার জন্য আরো একটি কারণ যোগ করতে চাই।

 

ঈশ্বর আমাদের জন্য এত কিছু করেছেন এবং অবিরামভাবে তা অন্তহীন চালিয়ে যাবেন।  তাই, আমাদের তাঁকে ধন্যবাদ জানানোটা স্বাভাবিক, ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের মরনশীল মা বাবাকে ধন্যবাদ জানাই তাদের আশীর্বাদের জন্য। শুধুমাত্র একজন দুর্ভাগা স্বার্থপর ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করবে না এবং তার হৃদয়কে শুদ্ধ করার সুযোগ হারাবে।

 

দয়া করে মনে রাখবেন যে, উপাসনা যন্ত্রের মতন মন্ত্র উচ্চারনের কিছু নয় বা মনের শূণ্যতা নয় । কৰ্ম, জ্ঞান এবং গভীর চিন্তার মাধ্যমে জ্ঞান আত্মভুত করার এটি একটি প্ররোচনাদায়ক দৃষ্টিভঙ্গি।

 

আমাদের কিভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত?

 

ঈশ্বরের উপাসনা নিহীত আছে আমাদের জীবনের প্রতিটি কর্মে। সত্য উপাসনা বলতে ক্রমাগত ভিত্তিতে 'ভিতরের কন্ঠস্বরকে অনুসরণ করা বোঝায়। এটাকে বলা হয় যজ্ঞীয় জীবনযাপন করা অর্থাৎ মহৎ উদ্দেশ্যে স্বার্থহীন কর্মে নিয়োজিত হওয়া।

 

এটিকে কর্মের মাধ্যমে উপাসনা করা বলা হয়। যাইহোক, কোন ব্যাক্তি তার জীবনকে বিপথে না নিয়ে পবিত্রভাবে উত্তম পদ্ধতিতে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, তাকে আরো দুটি দিক নিয়ে অনুশীলন করতে হবেঃ

জ্ঞান অন্বেষন করা

 

আমাদের সংস্কারের অংশ হিসাবে জ্ঞানকে আত্মভুত করতে জ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হওয়া

 

জ্ঞান-গভীর মনোযোগ-কর্ম এই তিনটি একত্রে চলে এবং বিচ্ছিন্নতাতে ফলহীন হয়।

 

ঈশ্বর উপাসনার মূল উপাদান কি কি?

 

ঈশ্বরের উপাসনার তিনটি প্রধান উপাদান আছে:

 

স্তুতি

প্রার্থনা

উপাসনা বা যোগীয় অনুশীল

 

ঈশ্বর "স্তুতি" কি? এর ধরন কি?

 

স্তুতি বা প্রশংসার অর্থ হল যে কোনো সত্তার সঠিক গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্যগুলোকে সর্বাধিক সত্যনিষ্ঠ পদ্ধতিতে প্রকাশ করা । অতএব, কোনকিছুকে 'মিষ্টি কথায় ভোলানো মিথ্যা', সেইসাথে 'অযৌক্তিক নিন্দা, উভয়ের কোনটাই স্তুতি নয় ।

ঈশ্বরের স্তুতির উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যগুলোকে বুঝা এবং তাঁর সাথে সংগতি রেখে আমাদের নিজেদের প্রকৃতি এবং কর্মকে সে অনুযায়ী রূপ দিতে চেষ্টা করা। উদাহরণস্বরূপ, ঠিক যেমন ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ এবং দয়ালু, আমাদেরও উচিত ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হওয়া। ঈশ্বর কখনোই হতাশ হন না তাই আমাদেরও হতাশ হওয়া উচিত নয়।

একজন ব্যক্তি যিনি কেবল একজন নাট্যশিল্পীর মতো ঈশ্বরের গুনগান করেন কিন্তু তার নিজের চরিত্র পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেন না, তিনি আসলে স্রেফ সময় নষ্ট করছেন কারন ঈশ্বর আত্মমুগ্ধ বা স্বৈরশাসক নন, যে তিনি প্রশংসায় আনন্দ পাবেন। যাই হোক আমরা যে স্তুতি করি তা আমাদের নিজস্ব উন্নতির দ্বারা শুধুমাত্র আমাদের কল্যানের জন্য।

 

স্তুতি কয় ধরনের?

 

দুটি ধরনের স্তুতি আছে:-

 

সগুন স্তুতিঃ যেসব বৈশিষ্ট্যগুলো ঈশ্বরে বিদ্যমান, সেগুলোকে স্মরণ করা ও বুঝার মাধ্যমে প্রশংসা করা । উদাহরণস্বরূপ, তিনি শ্বাশত এবং বিশুদ্ধ।

 

নিৰ্গুন স্তুতিঃ যেসব বৈশিষ্ট্যগুলি ঈশ্বরের মধ্যে উপস্থিত নয় সেগুলোকে স্মরণ করা ও বোঝার মাধ্যমে প্রশংসা করা । উদাহরণস্বরূপ, তাঁর কোন আকার নেই, এবং তিনি জন্মগ্রহণ করেন না।

ঈশ্বরের "স্তুতি" আছে এমন কিছু বৈদিক মন্ত্ৰ কি আপনি প্রদান করতে পারেন?

 

বেদের প্রধান বিষয় ঈশ্বর । অতএব, ঈশ্বরের স্তুতিমূলক বহু সংখ্যক মন্ত্র রয়েছে যা বেদের অংশ। উদাহরণ স্বরূপঃ

 

যজুর্বেদ ৪০/৮

তিনি সকল কিছুতেই বর্তমান, গতিমান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী, বিশুদ্ধ, সর্বজ্ঞ, সকল কিছুর জ্ঞাতা, সকলের প্রভু, শ্বাশত, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বেদের জ্ঞানের দ্বারা আমাদের সকলকে পথ প্রদর্শন করেন। (এটি সগুন স্তুতি।)

 

তিনি শরীরবিহীন, তিনি কখনই জন্ম নেন না, তাঁর কোন স্নায়ু বা খুঁত নেই, তিনি পাপ আচরণ করে না এবং ব্যথা ও দুঃখ থেকে আলাদা। (এটি নির্গুন স্তুতি।) অথর্ববেদ ১০/৮/১ এবং ১০/৭/৩২-৩৪

 

তিনি সবকিছু জানেন অর্থাৎ সর্বজ্ঞ।  তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সমগ্র জগতকে পরিচালনা করেন এবং আমাদের সকলের প্রভু। তিনি নিজেই স্বয়ং আনন্দময় এবং দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ দূরে! তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমস্কার করি!

 

তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যেখানে আমরা বাস করি এবং (সৃষ্টি করেছেন) মহাবিশ্বকে একই সাথে সেই সব কাঠামোকে যা আমাদেরকে আলোক দান করে। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমস্কার করি!

সৃষ্টির প্রতিটি চক্রের মধ্যে তিনি সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেন। তিনি আমাদের কল্যানের জন্য আগুন তৈরি করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমস্কার করি!

 

তিনি বায়ু সৃষ্টি করেন যাহাতে আমরা নিঃশ্বাস গ্রহন করি ও প্রশ্বাস ত্যাগ করি। তিনি আলো সৃষ্টি করেন যার মাধ্যমে আমরা দেখি। তিনি সকল দশটি দিকের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং অনিন্দ্যসুন্দর ও সমন্বয়ের সহিত পরিচালনা করছেন, যাতে আমরা সর্বাধিক উপকৃত হই। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমস্কার করি!

যজুর্বেদ ২৫/১৩

তিনি আমাদের আত্মায় জ্ঞানের শক্তি প্রদান করেন। তিনি আমাদের সকলকে সত্য জ্ঞান ও আনন্দ প্রদান করেন। সমস্ত পন্ডিত তাঁর এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করে । বুদ্ধিমান মানুষেরা অব্যাহত আনন্দ লাভের জন্য এবং পরিত্রাণ লাভের জন্য বেদে প্রণীত তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেন । শুধুমাত্র তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণেই আছে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি এবং দুর্বৃত্রতায় লিপ্ত থাকার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকাই কেবল বারবার জন্মমৃত্যু চক্রের ফাঁদে পড়ার কারণ। তাই, আমাদের উচিত তাকেই এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা যিনি আনন্দ ও সুখের একমাত্র সংজ্ঞা।

 

প্রার্থনা বা ঈশ্বরের প্রার্থনা কি?

 

মহৎ উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের সেরা প্রচেষ্টা করার পর ঈশ্বরের নিকট হতে সহায়তা পাবার জন্য অনুরোধ করাই হলো প্রার্থনা । এটা প্রার্থনা হয় না, যখন আমরা খারাপ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনুরোধ করি বা আমরা যখন নিজের সেরা প্রচেষ্টা করা ছাড়া কোন অনুরোধ করি। প্রার্থনা দুষ্টের জন্য নয় আবার অলসের জন্যও নয়।

এইভাবে, আমরা ঈশ্বরের নিকট যা কিছুই প্রার্থনা করি না কেন, আমাদেরকে একই সাথে ঐ বিষয়টিকে জীবনে গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করি, তাহলে আমাদের উচিত জ্ঞান অন্বেষনের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করা । বিনামূল্যে মধ্যাহ্নভোজের প্রত্যাশা ভিক্ষুকের চিহ্ন, ঈশ্বরের উপসকের নয়। অতএব, যথাযথ পরিশোধ করুন এবং তারপর আপনার খাবারের জন্য অনুরোধ করুন।

অসৎ প্রার্থনাগুলো বিপরীত ফল আনে কারণ এগুলো ব্যাক্তির মনকে দূষিত করে এবং ব্যাক্তির জন্য আরও দুঃখকে ডেকে আনে।

উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর এই ধরনের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন যেমন

"হে ঈশ্বর, আমার শত্রুকে ধ্বংস করে দাও এবং আমাকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও মহিমান্বিত করো।" কারণ উভয় শত্রুই যদি একইরকম প্রার্থনা করে, তবে কি ঈশ্বর তাদের দুজনকেই ধ্বংস করবেন ?

কেউ যদি যুক্তি দেন যে ঈশ্বর দুজনের মধ্যে যিনি অধিকতর আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন তার (প্রার্থনা) শুনবেন, তাহলে এই যুক্তি দ্বারা, যে ব্যক্তি কিছুটা কম আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে অন্ততপক্ষে তার কিছুটা ক্ষতি হওয়া উচিত, যদিও এর পরিমান তার শত্রুর চেয়ে কম!

এটি সম্পূর্ণ মূর্খ যুক্তি!

অনুরূপভাবে, যদি কেউ প্রার্থনা করেন, যেমনঃ হে ঈশ্বর আমাদের জন্য মিষ্টি তৈরি করুন, দয়া করে আমার ঘর পরিষ্কার করুন, আমার পোষাক ধুয়ে ফেলুন, আমার ফসল কাটুন ইত্যাদি"।

সোজাকথায় সে একটা বোকা।

 

যজুর্বেদ ৪০/২

 

ঈশ্বর আমাদের আদেশ দিয়েছেনঃ "ভালভাবে চেষ্টা করে ১০০ বছর বা তার বেশি সময় বাঁচ এবং কখনো অলস হয়ো না।"

যারা ঈশ্বরকে এই আদেশ উপেক্ষা করে,  তারা কখনোই সুখ অর্জন করতে পারে না, যদিও তারা হয়তো অন্যান্য গুণাবলিতে উন্নতচরিত্র হতে পারে তাও (সুখ অর্জন করতে পারে না)।

কঠোর পরিশ্রম বা পুরুষার্থ হল জীবনে আত্মভুত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাকি সব উত্তম গুণগুলি ধরে নেয় যে পুরুষার্থ গুনাবলিটি ইতিমধ্যেই সেখানে রয়েছে।

অন্য কথায়, ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে।

আমরা কেবল তাদেরই চাকুরীতে নিয়োগ দেব যারা কাজ করে, কিন্তু অলসদের নিয়োগ দেব না। কেবলমাত্র যাদের চোখ আছে এবং দেখার ইচ্ছা আছে তারাই কিছু দেখতে পারে। চিনিকে উপার্জন করে ও এটিকে খাওয়ার দ্বারাই কেবল চিনির স্বাদ গ্রহণ করা যাবে, "চিনি মিষ্টি" শুধুমাত্র এটি বলে চিনির স্বাদ গ্রহন করা যাবে না। একইভাবে, শুধুমাত্র সেই ব্যাক্তি, যে উত্তম কার্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে অবশেষে চিনি (মিষ্টতা) অর্জন করবে, শীঘ্রই বা দেরিতে।

আপনি কি ঈশ্বর এর প্রার্থনা সংক্রান্ত কিছু মন্ত্র বেদ থেকে প্রদান করতে পারেন?

 

আসলে অনেক মন্ত্র দিতে পারি! আসুন ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা সংক্রান্ত জীবনের সবচেয়ে সুখী কাৰ্য্যক্রম উপভোগ করুন। কিন্তু এর আগে, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সর্বোত্তম, অবিরাম, কঠোর এবং উদ্যমী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের কর্ম করছি

যজুর্বেদ ৩২/১৪

হে অগ্নি (আলোকিত ঈশ্বর), সেই বুদ্ধির সাথে আমাদের আশীর্বাদ করুন, যার মাধ্যমে যোগীগন এবং পণ্ডিতগন আপনার পূজা করে। এবং এখনই আমাদের সেই মেধা প্রদান কর! আমরা কোন আত্মম্ভরিতা ছাড়াই আপনার নিকট আমাদের সবকিছু আত্মসমর্পণ করার অঙ্গীকার করা। সর্বোপরি, আপনিই সকল কিছুর উৎস যা আমরা অধিকার করি!

 

যর্জুবেদ ১৯/৯

আপনি প্রতিভাময়, আমাদের প্রতিভা প্রদান করুন। আপনি অসীম সাহসী এবং পরাক্রমী, আমাদেরকে একই সাহস ও পরাক্রম প্রদান করুন। আপনি সর্ব শক্তিমান, আমাদেরকেও মানসিক ও শারিরীকভাবে শক্তিশালী এবং বলবান কর। আপনি সম্পূর্ণ সক্ষম, আমাদেরকেও সক্ষম কর।

আপনি অপরাধ এবং অপরাধীদের উপর ক্রোধ প্রদর্শন করেন। আমাদের প্রস্তুত করুন আমরাও যেন অপরাধ এবং অপরাধীদের উপরও একইভাবে রাগ দেখানোর অভ্যাস গড়ে তুলি।

আপনি সকল প্রশংসা বা সমালোচনা সহ্য করেন। তেমনি প্রশংসা বা সমালোচনা উপেক্ষা করা এবং শুধুমাত্র লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত শক্তি দিন।

অন্য কথায়, মন্দ থেকে দূরে ধার্মিকতার প্রতি আমাদেরকে চালিত কর।

 

আপনি অপরাধ এবং অপরাধীদের উপর ক্রোধ প্রদর্শন করেন। আমাদের প্রস্তুত করুন আমরাও যেন অপরাধ এবং অপরাধীদের উপরও একইভাবে রাগ দেখানোর অভ্যাস গড়ে তুলি।

আপনি সকল প্রশংসা বা সমালোচনা সহ্য করেন। তেমনি প্রশংসা বা সমালোচনা উপেক্ষা করা এবং শুধুমাত্র লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত শক্তি দিন।

অন্য কথায়, মন্দ থেকে দূরে ধার্মিকতার প্রতি আমাদেরকে চালিত কর।

 

যজুর্বেদ ৩৪/ ১-৬ (শিব সংকল্প মন্ত্র)

 

হে প্রিয় ঈশ্বর! আপনার আশীর্বাদের সাথে, আমার মন সকল ধরনের জ্ঞানের বহু দূর অব্দি যায়, যখন জাগ্রত থাকি। এমনকি ঘুমের সময়, এটি একইভাবে কাজ করে। আপনার দান আমার এই শক্তিশালী মন যেন সদা সকল পাপ থেকে দূরে থাকে এবং সবসময় যেন শুধুমাত্র বিশুদ্ধ চিন্তায় থাকে । আমি যেন সর্বদাই সকলের কল্যানের চিন্তা করি এবং কখনও যেন কারো ক্ষতি কামনা না করি।

 

হে সর্বজ্ঞ, এই মন ধৈর্যশীল পণ্ডিতদেরকে এবং উন্নত চরিত্রের মানুষদেরকে চালিত করে উত্তম কাজ করতে এবং ক্রমাগত মন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। এই মন বিপুল সম্ভাবনাময় এবং সকল জীবের কল্যাণে নিমজ্জিত থাকতে পারে। এমন উন্নত মন যেন মন্দ থেকে দূরে চালিত করে এবং শুধুমাত্র পবিত্র চিন্তা কামনা করে।

 

এই মন মহান জ্ঞান প্রদান করে । এইটি এক ও সকলকে আলোকিত করে এবং আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তার সমর্থন ছাড়া এমনকি একটি কাজও সম্পন্ন করা যায় না । এই মহান মন সদা উন্নত চিন্তায় মগ্ন থাকুক এবং অসৎ কামনা থেকে দূরে থাকুক।

 

যোগীগন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই মনের মাধ্যমে জানেন। এই মন আমাদেরকে ঈশ্বরের সহিত একত্রিত হতে সহায়তা করে এবং পরম জ্ঞান সন্ধান করতে সাহায্য করে। এই মন পাঁচ ইন্দ্ৰিয়, আত্মা এবং বুদ্ধির সাথে একত্রে কাজ করে সৎকাজ পরিচালনা করতে। এই মহান মন সদা বিশুদ্ধ থাকুক এবং সকলের কল্যান করুক।এই মন মহান জ্ঞান প্রদান করে । এইটি এক ও সকলকে আলোকিত করে এবং আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তার সমর্থন ছাড়া এমনকি একটি কাজও সম্পন্ন করা যায় না । এই মহান মন সদা উন্নত চিন্তায় মগ্ন থাকুক এবং অসৎ কামনা থেকে দূরে থাকুক।

 

যোগীগন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই মনের মাধ্যমে জানেন। এই মন আমাদেরকে ঈশ্বরের সহিত একত্রিত হতে সহায়তা করে এবং পরম জ্ঞান সন্ধান করতে সাহায্য করে। এই মন পাঁচ ইন্দ্ৰিয়, আত্মা এবং বুদ্ধির সাথে একত্রে কাজ করে সৎকাজ পরিচালনা করতে। এই মহান মন সদা বিশুদ্ধ থাকুক এবং সকলের কল্যান করুক।

চারটি বেদ - ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদের জ্ঞান মনের মধ্যেই গেঁথে থাকে, যেভাবে একটি চাকার কেন্দ্রে অর (spoke) সংযুক্ত করা হয়। এই মন ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটি সাক্ষ্য, যিনি সবসময় এটির মধ্যে এবং এর চারপাশে অর্ন্তভুক্ত আছেন। এমন মন যেন সদা উন্নত কর্মের প্রতি নিবেদিত থাকে যাতে করে আমি সকল অজ্ঞতা দূর করে আমার ভেতর নিহীত থাকা বৈদিক জ্ঞানকে আবিষ্কার করতে পারি।

 

মন মানুষের কর্মকে নিয়ন্ত্রন করে যেমনভাবে রথচালক রজ্জু দ্বারা ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রন করে। এটা অত্যন্ত গতিসম্পন্ন এবং সদা আমার সাথে থাকে। এমন মন যেন সর্বদা সকলের জন্য কল্যাণ এবং উন্নত চিন্তা অন্বেষন করে এবং কখনও যেন পাপের মধ্যে বসবাস না করে।

 

যর্জুবেদ ৪০/১৬

হে সুখ প্রদানকারী, আত্মপ্রকাশকারী, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর, আপনি আমাদের সঠিক বুদ্ধি প্রদান করুন । আপনি আমাদেরকে পাপ কর্ম থেকে দূরে চালিত করুন। আমাদের চিন্তা, শব্দ, এবং কর্মকে শুদ্ধ করার জন্য আমরা বারংবার আপনার নিকট প্রার্থনা করি।

যজুর্বেদ ১৬/১৫

হে রুদ্র (দুঃখী মানুষকে কাঁদতে ও কষ্ট ভোগ করতে পারে এমন ব্যক্তি)! দয়া করে আমাদের সকলকে পথ প্রদর্শন করুন যাতে আমাদের কেউ, আমাদের কনিষ্টদের, আমাদের জ্যেষ্ঠ্যদের, আমাদের পিতামাতাদের, গর্ভের প্রাণীদের, আমাদের প্রিয়জনদের এবং সকল নির্দোষ নিরীহ জীবিত প্রাণীর ক্ষতি না করে । আমাদেরকে সেই পথ থেকে দূরে চালিত করুন যে পথ আমাদেরকে আপনার শাস্তির সম্মুখীন করতে পারে।

 

Write to স্বাধ্যায় - অগ্নিবীর ,‌ মেঘনা বিভাগ

 

শাতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৩/১/৩০

আমরা যেন মিথ্যার পথ পরিহার করি এবং সত্যের প্রতি অগ্রসর হই। আমরা যেন অন্ধকারের পথ পরিত্যাগ করি এবং আলোর দিকে প্রতি অগ্রসর হই। আমরা যেন মৃত্যুর পথ প্রত্যাখ্যান করি এবং মোক্ষের মাধ্যমে শাশ্বত অমরত্ব অন্বেষন করি। হে ঈশ্বর! অনুগ্রহ করে আমাদের পথ প্রদর্শক হও!

 

 

 

যজুর্বেদ ২/১০

হে ধনবান ঈশ্বর! দয়া করে একটি সুস্থ শরীর, সুস্থ ইন্দ্রিয় এবং ভালো অভ্যাসের সাথে অত্যন্ত উন্নতচরিত্র মানসিকতার সাথে আমাকে স্থিতিশীল কর। অনুরোধ করি আমাদের সহায়তা করুন যাতে আমরা আমাদের দেশকে শক্তিশালী ও উন্নত করতে পারি। আমাদের মহান ইচ্ছাগুলো সদা জয়ী হোক এবং আমরা যেন শুধুমাত্র মহান কর্মের আচরণ অন্বেষন করি। আমরা যেন একটি শক্তিশালী চক্রবর্ত্তী স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করতে পারি এবং ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি । আমরা যেন দুর্নীতি, জালিয়াতি, বিশ্বাসঘাতকতার সমস্ত শক্তিকে যা আমার দেশকে পীড়িত করে, তাকে লড়াই করে দূর করে দিতে পারি।

 

ঋগ্বেদ ১/৩৯/২

আমরা যেন সদা শক্তিশালী হই। আমাদের অস্ত্র, বন্দুক, কামান, গোলাবারুদ, ইত্যাদি যেন সবসময় প্রস্তুত এবং সঠিক স্থানে থাকে । আমাদের অস্ত্র এবং শক্তি যেন অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় যারা নির্দোষ মানুষকে ক্ষতি করতে চায়। আমাদের অস্ত্র ও শক্তি যেন তাদের সৈন্যশক্তিকে থামাতে পারে। আমাদের অবিসংবাদিত শক্তি, বিক্রম ও সাহস আমাদের সহায়তা করুক একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, কল্যাণকর ও এবং ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যাতে দূর্নীতি, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারনা ও অপরাধের শক্তিসমূহ আমাদের দ্বারা পরাজিত হতে থাকে । কিন্তু আমাদের এই প্রার্থনা আমাদের জন্য, শুধুমাত্র আমরা যখন সত্য, করুণা, ন্যায় এবং মহত্বের পথে থাকব। যারা এমনটা (অর্থাৎ শক্তিমান হতে) আকাঙ্খা করে কিন্তু জালিয়াতি, বিশ্বাসঘাতক, অন্যায়কারী এবং অপরাধী, তারা সদা ঈশ্বরীয় অনুগ্রহের দ্বারা পরাজয়ের গ্লানী ভোগ করে। তাই, আমাদের উচিত শুধুমাত্র মহৎ কাজে নিয়োজিত হওয়া।

 

যজুর্বেদ ৩৮/১৪

আমরা যেন শুধু ধর্মীয় কাজ করতে ইচ্ছুক হই। ভাল স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীর যেন সদা শক্তিশালী ও বলশালী হয়। আমরা যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যেতে পারি। আমরা যেন বেদ বুঝতে এবং আমাদের কল্যানের জন্য সেই বেদ জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে পারি। আমাদের যেন ব্রাহ্মণগন (পণ্ডিতগন) থাকেন যারা আমাদের ভাল জ্ঞান প্রদান করতে পারে। আমাদের যেন সাহসী ক্ষত্রিয় (যোদ্ধাগন) থাকে যাতে আমরা একটি শক্তিশালী জাতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং আমাদের দেশের ভেতরে এবং বাইরে থাকা জালিয়াতি শক্তিকে ধ্বংস করতে পারি। আমাদের যেন বিশেষজ্ঞরা থাকেন যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং প্লেন, যানবাহন, উপযোগী গ্যাজেট, মেশিন ইত্যাদির বিকাশে সহায়তা করেন। আমরা যেন সদা শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের পথে থাকি । আমরা যেন কোন জীবিত সত্তার সঙ্গে কোনরূপ শত্রুতা পোষন না করি । আমাদের যেন একটি শক্তিশালী দেশ, অসাধারন সম্পদ ও উন্নত চরিত্র থাকে।

 

আমরা যেন আমাদের সবকিছু ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করি, যিনি আমাদের মা, বাবা, বন্ধু এবং গুরু । আমাদের সমগ্র জীবন, আমাদের জীবনী শক্তি, আমাদের ইন্দ্রিয়াদি, আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের সুখ, আমাদের আত্মা, আমাদের আলোকায়ন এবং জ্ঞান, আমাদের কর্মের ফলাফল, আমাদের বলিদান, আমাদের প্রশংসা স্তুতিসমূহ আমাদের আবেগ, আমাদের মহান অর্জন, সবকিছুই (ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করি)। যেহেতু, আমরা যা অধিকার করি ঈশ্বর তার সকলকিছুরই উৎস। অন্য কথায় বলা যায়, যা কিছুই আমরা জীবনে ভাবি বা করি তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরকে অর্জন করা। এই পরম সমর্পণই আমাদের জীবনের মন্ত্র হওয়া উচিত!

 

যজুর্বেদ ১৮/২৯

আমরা যেন আমাদের শাসক হিসাবে একমাত্র তাঁকেই (ঈশ্বরকে) বিবেচনা করি এবং অন্য কোন বংশ, ব্যক্তি বা দলকে আমাদের শাসক হিসাবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করি। আমরা যেন শুধুমাত্র তাঁর (ঈশ্বরের) সৃষ্ট বিধান অনুসরণ করি এবং মনুষ্য সৃষ্ট বিধানের অনুসরণ না করি যদি তা ঈশ্বরের বিধানের বিরুদ্ধে যায়। আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ একত্রিত হয়ে ঐসব শক্তিকে ব্যার্থ করে দেই যারা ঈশ্বরের পরিবর্তে তাদেরকে শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে আমাদেরকে বাধ্য করে। অন্য কথায়, আমরা যেন সকলে একত্রিত হই, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই না করি এবং চিন্তা, শব্দ ও কর্মের মধ্যে কেবল সত্যের অনুসরণ করি।

 

আসুন আমরা পরম ঈশ্বর কর্তৃক পরিচালিত হই এবং কোন এক ব্যক্তির বা অযোগ্য গোষ্ঠীর খেয়ালখুশি দ্বারা পরিচালিত না হই।

 

আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ ঈশ্বর উপাসনা কী? আমি কে?

 

 ঈশ্বর উপাসনা কি?

 

উপাসনার অর্থ ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া । অন্য কথায়, উপাসনা বলতে ঈশ্বরকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করাকে বোঝায় যাতে আমরা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী চিন্তা করতে, কাজ করতে এবং কথা বলতে পারি। এভাবেই ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য এবং সরাসরি প্রমাণের দ্বারা তাঁকে উপলব্ধি করতে আমাদের যে সমস্ত কার্যক্রমগুলি প্রয়োজন এগুলোই 'উপাসনা'এর অধীনে।

 

যিনি অজ্ঞতার সব বীজ ধ্বংস করেছেন এবং উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছেন, সেই ব্যাক্তি সুখ ও আনন্দের এমন একটি স্তরকে অনুধাবন করেন যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না শুধুমাত্র নিজের মধ্যে অনুভূত হতে পারে।

 

 আমরা কিভাবে উপাসনা করতে পারি?

 

উপাসনা একটি দীর্ঘ বিষয় এবং যোগ দর্শনের ভিত্তিতে গঠিত। আমি এখানে খুব সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করছি।

 

উপাসনার প্রথম ধাপে নিম্নলিখিতগুলি করা প্রয়োজন । মনে রাখবেন যে এটা অবশ্যক এবং উপাসনা পদ্ধতির পরবর্তী ধাপটি অর্থবহ হবে কেবলমাত্র তখনই, যখন শিক্ষার্থী তার সেরা প্রচেষ্টাটা প্রথম ধাপে দেবে।

 

 এর দুটি উপাদান রয়েছেঃ

 

 

 

✅   যম:

 

 অহিংসা- কারো প্রতি ঘৃণা বা শত্রুতা না করা। শুধুমাত্র সমবেদনার অনুভূতি

 

 সত্য- জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সত্যকে গ্রহণ এবং মিথ্যাকে বর্জন।

 

 অস্তেয়- (চুরি না করা) যা বৈধভাবে নিজের নয় তাকে বর্জন করা।

 

 🔷 ব্ৰহ্মচাৰ্য (নৈতিকতা) - স্ব-নিয়ন্ত্রণ চর্চা করা, লম্পট না হওয়া, জ্ঞান এবং কাজ করার অঙ্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ।

 

 অপরিগ্রহ (নম্রতা) - নম্র হওয়া এবং কোন মিথ্যা অহংবোধ না থাকা

 

✅   নিয়ম:

 

 শৌচ (বিশুদ্ধতা) - মনের বিশুদ্ধতা এবং ভাল স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলন।

 

 সন্তোষ (সন্তুষ্টি) - ব্যার্থতা, সাফল্য, সন্মান বা অপমান ইত্যাদি বিবেচনা না করে অলসতা পরিহার করে আনন্দ ও উৎসাহের সহিত উত্তম কর্মের জন্য সেরা প্রচেষ্টা করা।

 

 তপ (প্রচেষ্টা) - ঈশ্বরের পথে আনন্দ এবং ব্যথাকে উপেক্ষা করা এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

 

 স্বাধ্যায় (গভীর চিন্তা) - জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা, ভাল সঙ্গীর খোঁজ করা এবং ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা এবং ওম শব্দের মানে, ইত্যাদি।

 

 ঈশ্বর প্রনিধান (ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ) - ঈশ্বরের পথে ইচ্ছাকে সমর্পণ করা।

 

এই মূল বিষয়গুলি বোঝার পর, আমরা প্রকৃতপক্ষে যোগের বিশাল আঙ্গিনায় প্রবেশ করার যোগ্য হব।

 

এখানে উল্লেখ্য, এর মানে এই নয় যে আপনি এইগুলোর উপর দক্ষতা অর্জনের পরেই শুধুমাত্র পরবর্তী ধাপ শুরু করতে পারেন । যেহেতু এই পদক্ষেপগুলি সমগ্র উপাসনা প্রক্রিয়ার সারাংশ ধারণ করে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে, আপনাকে অন্ততপক্ষে, এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে এবং সত্যিকারভাবে এই বিষয়গুলোর উপর কাজ করে যেতে হবে। আপনি ব্যর্থ হতে পারেন কিন্তু সবসময় আবার দৃঢ়সংকল্পের সাথে উঠে দাঁড়াতে হবে এই যম ও নিয়মে দক্ষ হওয়ার জন্য।

 

 

আমরা কিভাবে একটা উপাসনা পর্ব পরিচালনা করব❓

 

যখনই কেউ উপাসনা করতে চায়, তার উচিত একটি অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গা খোঁজা, একটি শান্ত অবস্থানে বসা।

 

কিছু প্রাণায়াম অনুশীলন করা (মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি)।

(লক্ষ্য রাখুন, অনুলোম, বিলোম এবং কপালভাতি বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়। তারা শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম যা যোগব্যায়ামের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।)

 

মানুষের মনকে জগতের চারপাশ থেকে একক কেন্দ্রে আনতে নাভীকুন্ড, গলা, চোখের কেন্দ্ৰ, পিঠ, মাথা, পাঁজরের কেন্দ্র ইত্যাদির মত শরীরের কেন্দ্রীয় অংশের কোন দিকে (মনোযোগ) কেন্দ্রীভুত করুন।

 

ঈশ্বর এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে চিন্তা শুরু করুন। ধীরে ধীরে ঈশ্বরের সঙ্গে একটি মানসিক সংযোগের দিকে চালিত হোন এবং তার প্রশান্তির মধ্যে মগ্ন হোন । বাকি বিশ্বকে যেতে দিন। এমনকি যদি বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা আসে, আপনি স্রেফ উপেক্ষা করুন ঠিক যেভাবে সুন্দর সঙ্গীত উপভোগ করার সময় আপনি মশাকে উপেক্ষা করেন।

 

দুর্বলতা এবং পাপ চিন্তাধারা অপসারণ করতে সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজেকে বিশুদ্ধ করতে এখনই সিদ্ধান্ত নিন।

 

✅   উপাসনার সুবিধা কি❓

 

আমরা আলোচনার শুরুতে কিছু বেনিফিট তালিকাভুক্ত করেছি। এখানে আরও কিছু আছেঃ

 

যে ব্যাক্তি উপাসনা অনুশীলন করে সে দ্রুত তার মনকে বিশুদ্ধ করে তোলে এবং সত্য ভিত্তিক করে তোলে । যেহেতু সত্যই হলো শান্তি, এইটি তাকে প্রস্তুত করে, তার জীবনকে উপভোগ করতে এবং অন্যান্য সমকক্ষ ব্যাক্তিদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি উপভোগ করতে।

 

ধীরে ধীরে এই সত্য = সুখ এই তত্ব তাকে মোক্ষের পরম সুখের দিকে নিয়ে যায় যেখানে আর কোন দুঃখ নেই। এর চেয়ে অর্জনযোগ্য ভালো কোন অবস্থা নেই। (অর্থাৎ এটিই সর্বোচ্চ আনন্দময় অবস্থা)

 

যে ব্যক্তি ২৪××৩৬৫ (অর্থাৎ প্রতি মুহুর্তে) ঈশ্বরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে, সে সর্বদা জীবনে আরো সুখ ও আনন্দের দিকে অগ্রসর হয়। সে, তার সমকক্ষ ব্যাক্তিদের মধ্যে যারা উপাসনা করে না তাদের তুলনায় হয়ে উঠে আরো সক্ষম, তৎপর, উদ্যমী এবং সফল।

 

সংক্ষেপে, উপাসনা একজন ব্যাক্তিকে পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল করে তোলে। সর্বোপরি, একমাত্র ঈশ্বরই সকল পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সুখের উৎস!

 

ঠিক যেমন ঠাণ্ডা শীতকালে একজন কম্পনরত ব্যক্তি আরাম বোধ করে, যখন তিনি আগুনের কাছাকাছি চলে আসেন।অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়ে আত্মার সমস্ত পাপ নষ্ট হয়ে যায়, তাঁর প্রকৃতি, কর্ম এবং প্রবৃত্তিগুলি ঈশ্বরের সাথে সমন্বয় সাধন করে, তাঈশ্বর এর উপাসনা ব্যাক্তির ইচ্ছাশক্তিকে এত দৃঢ় করবে যে সে ব্যাক্তিটি জীবনের এমন বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে যেটা অন্যদের জন্য অসম্ভব মনে হতে পারে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, ঐ ব্যক্তি তার শান্তভাব বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং সফলভাবে এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় আশ্চর্য অর্জন আর কি হতে পারে!

 

এ ছাড়াও, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে না, তারা বোকা একইসাথে নির্লজ্জ অকৃতজ্ঞ। কারন কেউই সেই এককে (ঈশ্বরকে) উপেক্ষা করতে পারেনি, যিনি সমগ্র জগত সৃষ্টি করে আমাদের অত্যন্ত সুখ দিয়েছেন এবং আমাদের ধারন করে যাচ্ছেন। শুধু ভাবুন, যারা তাদের নিজেদের অভিভাবকদেরকে প্রত্যাখ্যান করে এমন অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর এবং মূঢ় ব্যাক্তিকে কি শাস্তি আমাদের দেয়া উচিত।

 

 

আমি কে?

 

আপনি আত্মা বা জীব। আপনি আপনার মন এবং শরীর থেকে ভিন্ন। যখন শরীর ধ্বংস হয়ে যায়, তখন আপনি ধ্বংস হয়ে যান না কারণ মহাবিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই যা আপনাকে ধ্বংস করতে পারে। ঈশ্বরের মতো আপনি অমর।

 

কিন্তু কিভাবে আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে ঈশ্বর এবং আত্মা অমর?

 

সংক্ষেপে বললে, যা কিছু অস্তিত্বমান সেটাই বর্তমান । অতীত এবং ভবিষ্যত বাস্তবে অস্তিত্বমান নেই । যখন আমরা পরিবর্তন ঘটতে দেখি, আমরা সময়ের একটি ধারনা পাই । অতীত এই পরিবর্তনের স্মৃতি ছাড়া কিছুই নয় । ভবিষ্যত এই পরিবর্তনগুলির একটি অজ্ঞাত অনুমান । এটি একটি মানসিক খেলা। বর্তমান হলো সেটাই যা বাস্তবে অস্তিত্বমান। তাই যদি একটি সত্তা বর্তমানে বিদ্যমান থাকে, এর অর্থ এটি অবশ্যই অতীতে অস্তিত্বমান ছিলো এবং সর্বদা ভবিষ্যতে বিদ্যমান থাকবে। অন্য উপায়ে বললে, কোন কিছুই সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না।

 

এখন, পদার্থ-শক্তির পরিবর্তন হয় কারণ তারা বস্তুগত সত্ত্বা এবং অন্য বস্তুগত সত্ত্বা দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু ঈশ্বর এবং আত্মা বস্তুগত নয় তাই, তারা কোনো বস্তুগত সত্তা দ্বারা প্রভাবিত হয় না । শুধু বিবেচনা করুন, কেন কোন সত্তার মৃত্যুর, ধ্বংস বা ক্ষয় হয়? এটি ঘটে কারন ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশে অন্য সত্তার সাথে এর পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সংগঠিত হয় বা ক্ষয়ে যায়। কিন্তু যদি একটি সত্তা অন্য বস্তুগত সত্ত্বার সহিত বা বলের সহিত পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া না করে, ঐ সত্তাটির ধ্বংসের কারণ বিদ্যমান থাকে না অতএব, ঈশ্বর এবং আত্মা কখনই মরবে না বা ধ্বংস হবে না।

 

সময়ের বাঁধাহীনতার রাজ্যে (অর্থাৎ যেটি সময়ের গন্ডিতে আবদ্ধ নয়, যেমন আত্মা) বর্তমানে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকাটা যথেষ্টভাবে প্রমাণ করে যে এটি সর্বদা বিদ্যমান ছিল, কারণ সময় মাপকাঠির সকল বৈশিষ্ট্য, সময়হীন অবস্থায় যথাযথভাবে সমতুল্য। অতএব, এটি হয় একই অবস্থায় থাকবে নয়তবা চক্রাকার কার্যক্রমে সঞ্চালিত হতে পারবে। সুতরাং, শুধুমাত্র গঠন পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু মৌলিক সত্তা পরিবর্তন হয় না।

 

 

আমাদেরকে (আত্মাকে) কে তৈরি করেছেন❓

 

যেমনটা আমি আগে বলেছি, মহাবিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই যা আপনাকে ধ্বংস করতে পারে। আপনি ঈশ্বরের মত অমর। কারণ আপনি কখনই মরবেন না বা ধ্বংস হবেন না, কেউ আপনাকে সৃষ্টি করেনি।

 

অনেক ধর্মীয় পন্ডিত দাবি করেন যে ঈশ্বর আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে আমরা তাঁর উপাসনা করতে পারি। এটা কি সত্য না ❓

 

যদি এইটি সত্য হয়, তাহলে ঈশ্বর একটি প্রশংসা-আকাঙ্খী স্বৈরশাসক ছাড়া কিছুই নন যিনি শ্রেষ্ঠম্মন্যতায় (superiority complex) ভুগছেন।

 

এটি প্রমাণ করে যে ঈশ্বর সামঞ্জস্যহীন। তিনি তার অভ্যাস পরিবর্তন করেন। এ কারণেই শুরুহীন অবস্থা থেকে ঈশ্বর একা ছিলেন, কিন্তু তারপর তিনি হঠাৎ আমাদের তৈরি করার চিন্তা করলেন।

 

কিন্তু ঈশ্বর নিখুঁত । সুতরাং কিভাবে তিনি সামঞ্জস্যহীন হতে পারেন?

 

হ্যাঁ আমি একমত, ঈশ্বর নিখুঁত। এর মানে হল যে সময়ের সকল ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই সমানভাবে নির্ভুল এবং অবশ্যই একই বিধান অনুসারে পরিচালনা করেন । পরিপূর্ণতা বলতে বোঝায় যে ঈশ্বরের আচরনে সামান্যতম অসঙ্গতিও হতে পারে না।

 

যদি গড / আ*ল্লাহ / ঈশ্বর T1 সময়ে আমাদেরকে তৈরি করেন, তাঁকে অবশ্যই অন্য সময় বিভাগেও আমাদেরকে তৈরি করতে থাকতে হবে, কারণ তিনি নিখুঁত । কিন্তু তিনি আমাদেরকে দুইবার তৈরি করতে পারবেন না! তাই তাঁকে আমাদেরকে ধ্বংস করতে হবে যাতে তিনি আবার আমাদের তৈরি করতে পারেন।

 

কিন্তু যদি তিনি আমাদের বারংবার সৃষ্টি ও ধ্বংস করতে থাকেন, তবে তিনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে আমরা তাঁর উপাসনা করব, যখন আমরা ধ্বংস হব। এর অর্থ হলো, হয় আ*ল্লাহ/গডে এর মেজাজ মর্জি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় অথবা তিনি আমাদেরকে উপাসনা করার জন্য সৃষ্টি করেননি।

 

দারুন যুক্তি️ আমি বুঝতে পেরেছি ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেননি। কিন্তু আমি কিভাবে জানব যে আমিই আত্মা এবং শরীর ও মন থেকে ভিন্ন❓ আমি কি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া না ❓

 

খুব সহজ️আপনার জন্মের পরে আপনার শরীর ও চিন্তাভাবনা পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আপনি একই রয়েছেন। এমনকি নিয়মিত ভিত্তিতে, আপনি শরীর এবং চিন্তার পরিবর্তন বুঝতে পারেন । সুতরাং, আপনি শরীর এবং মন থেকে ভিন্ন। এই সচেতন অনুভূতি বা 'আমি' বাস্তবে আপনি। এই 'আমি' এখন প্রশ্ন করছে এবং এই লেখাটি পড়ছে এবং জানতে পারে যে 'আমি' বিদ্যমান। এই 'আমি' হলেন তিনি, যিনি বর্তমানে এই "আমি' টা কে", এইটি অন্বেষনে আগ্রহী। এমনকি যখন আপনি স্বপ্ন দেখা ছাড়া ঘুমান, আপনি জেগে ওঠেন এবং বলেন যে আমার একটি ভাল ঘুম হয়েছে। এই 'আমি' টি ঘুমের শান্তি উপভোগ করেছে।

 

কিন্তু কিছু মানুষ বলে যে চেতনা মস্তিস্কের রাসায়নিক ছাড়া আর কিছুই নয়, এবং কোন আত্মা নেই। তারা বলে যে সব আবেগ এবং ব্যথা এবং আনন্দের অনুভূতি কেবল একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ।

 

এটিকে সত্য হিসাবে দাবী করার চেয়ে বোকামী কোন কিছু হতে পারে না। সাধারনত এই ধরনের মতামত বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত লোকেরা প্রদান করে যারা একটি থ্রেশহোল্ডের নীচে তাদের বুদ্ধি ফেলে দিয়েছে। তারা তাদের অপরাধবোধের অনুভূতি এবং 'ভিতরের কণ্ঠ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে এবং এভাবে এ ধরনের অন্তঃসারশূণ্য কথায় নিমজ্জিত থাকে।

 

কিন্তু শুধু বিবেচনা করুন, যখন কেউ আপনাকে চপেটাঘাত করে, শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং তখন ব্যথা অনুভব করতে নিউরনগুলো উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। কিন্তু 'কে' ব্যথা অনুভব করে❓ যখন আপনার প্রশংসা করা হয়, আবার নিউরন ভিন্ন ভাবে উদ্দীপনা দেয় এবং আপনি খুশি অনুভব করেন। কিন্তু পুনরায় প্রশ্ন, 'কে' খুশি অনুভব করে? প্রকৃত সত্যটা হলো, কোনো কিছু অনুভূত হচ্ছে এর মানে কেউ না কেউ অনুভব করছে। স্পষ্টতই, একটি ইলেক্ট্রন, প্রোটন বা নিউট্রন বা একটি হাইড্রোজেন পরমাণু বা একটি জলের অণু বা যাই হোক না কেন, তারা সেই অনুভবকারী 'আমি' টি হতে পারে না । এই 'আমি' যেটি অনুভব করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সেটি আমাদের শরীরের মধ্যকার আত্মা,  আমাদের সত্যিকারের আমি।  যেহেতু এটি একটি বস্তুগত সত্তা নয়, এটি আগুন, জল ইত্যাদি ইত্যাদির মত বিষয়গুলি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না। সুতরাং, এটি অবিনশ্বর। সর্বোপরি, ধ্বংসের অর্থ বিভিন্ন উপাদানের ভাঙ্গন । সুতরাং কোনো কিছু যার কোন উপাদান নেই, তা কিভাবে ভাঙ্গতে পারে❓ এছাড়াও, একটি স্থুল বিষয় একটি সুক্ষ্ম বিষয়কে ভাঙতে পারে না, যেমন একটি তলোয়ার একটি অনুকে ভাঙতে পারে না। এভাবেই আত্মা অবিনশ্বর হয় যেমনটা প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থ ব্যাখ্যা দেয়।

 

দারুন কিন্তু এই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের কিভাবে থামাব যারা বলে আমরা শুধু রাসায়নিক বিক্রিয়া❓

 

এই বালকসুলভ 'রাসায়নিক বুদ্ধিজীবীদের জিজ্ঞাসা করুন যে যদি এই সবকিছু রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে কেন তাদের সমস্যা হয় যখন আমরা তাদের যুক্তি খন্ডন করি ❓ এমনকি (তাদের ভাষায়) এটি একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়, তারপরও  ! কেন তারা ভালোবাসে, কেন তারা লাঞ্ছিত বোধ করে, কেন তারা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং কেন তাদের মধ্যে তাদের জ্ঞানকে প্রচার করার আকাঙ্খা আছে ও বিরোধী যুক্তিকে কুসংস্কার বলার আকাঙ্খা আছে ❓এছাড়াও, কেন তারা অপরাধের বিরুদ্ধে আইনকে বিরোধিতা করে না? কেননা যদি সব কিছুই রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তাহলে কেন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে শাস্তি দেওয়া? যখন কেউ কারো মুখের ক্ষতি করতে এসিড ছুড়ে মারে, তখন তুমি কি এসিডকে শাস্তি দিবে? এভাবেই, যদি তারা রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তাহলে কেন তাদেরকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে ? তারা যা বলছে, লিখছে বা বিতর্ক করছে সেগুলো হতে পারে স্রেফ একটা অর্থহীন এলোমেলো রাসায়নিক বিক্রিয়া যা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, ঠিক যেমন দুটি অ্যাসিড রাসায়নিক ল্যাবে মেশানো হচ্ছে

 

সারাংশে, যদি এটি রাসায়নিক বিক্রিয়া বা অ-শাশ্বত সত্তা হয় তাহলে, আইন, আদেশ, প্রেম, আবেগ, শিক্ষা, চরিত্র, অপরাধ, শাস্তি, পুরস্কার, ক্রীড়া, বিনোদন, সমবেদনা ইত্যাদিগুলো অর্থহীন হয়ে পড়বে। সমগ্র জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। তাই এই তত্ত্বটি কেবল অর্থহীন বুদ্ধির অর্থহীন মানুষদের জন্য যারা মারা যেতেও কিছু মনে করবে না কারণ তাদের জীবনও অর্থহীন এবং খুনও একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া!

 

ঠিক আছে, আসুন আমরা অর্থহীন বিতর্ক সরিয়ে রাখি। আপনি কি আমাকে বলতে পারেন, আত্মা কি স্বাধীনভাবে কর্ম করতে পারে না কি ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল❓

 

এটা নির্ভর করে যখন মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যায় (প্রলয় হয়), আত্মা বিশেষ করে যারা মুক্তি বা মোক্ষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি, তারা মুক্ত ইচ্ছা ছাড়া চেতনাহীন হয়ে পড়ে । মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সময়, আত্মাকে যখন তার কর্ম অনুযায়ী জন্ম দেওয়া হয়, তখন তাকে কাজ করার জন্য সীমিত স্বাধীনতা প্রদান করা হয় । যাইহোক, আত্মা নিজের জন্য কতটা স্বাধীনতা আকাঙ্খা করে এটাও বিশুদ্ধভাবে নির্ভর করে আত্মার উপর, তার কর্মের মাধ্যমে।

 

আপনি কি একটি উদাহরণের সাথে এইটি ব্যাখ্যা করতে পারেন❓

 

উদাহরণস্বরূপ, সাধারণত ভারতীয়রা বিদেশীদের দাস হয়ে থাকতে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের উৎসাহপূর্ণ দাস মানসিকতার কারণে। তাই তাদের স্বাধীনতা সীমিত, এমনকি তাদের স্বদেশেও তাদের অপমানের মুখোমুখি হতে হয়। এই সীমাবদ্ধ স্বাধীনতা ঈশ্বর প্রদত্ত নয় বরং এটা তাদের নিজস্ব সমাজের সম্পূর্ণ বেছে নেয়া সিদ্ধান্ত। স্বতন্ত্র আত্মার স্তরে ঠিক একরমটাই ঘটে।

 

অন্য কথায়, আত্মার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে, ইশ্বর আত্মাকে কাজ করার স্বাধীনতার একটা সীমা প্রদান করেন।  তিনি একটি চলমান ভিত্তিতে এই সীমা পরিবর্তন করতে থাকেন।

আমাদের সন্তানদের আমরা যে স্বাধীনতা প্রদান করি এটি তার সমতুল্য। যখন সে একটি শিশু, আমরা তাকে একটি ছোট খাটে সীমাবদ্ধ করি। যখন সে চার হাত পায়ে হাঁটা শুরু করে, আমরা তার চলাচলকে সীমাবদ্ধ করি, আমরা নিশ্চিত হই যে যাতে সে উচু বিছানা থেকে পড়ে না যায় । ধীরে ধীরে আমরা তাকে অধিক থেকে অধিকতর স্বাধীনতা প্রদান করি যতক্ষন সে পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই, যদি আমরা দেখতে পাই যে সে বাচ্চাটি মেঝের উপর নোংরা জিনিস খাওয়ার খারাপ অভ্যাস গড়ে তুলছে, তাহলে মা তাকে এটি থেকে বিরত করার জন্য কিছু উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করে। বাচ্চাটির স্বাধীনতা এইভাবে সীমিত। বিপরীতভাবে, যদি সন্তানটি একটি ভাল ছেলের মতো আচরণ করে এবং পিতামাতার আনুগত্য করে, নোংরা জিনিস না করে, তবে সেই বাচ্চাটি দ্রুত বর্ধিত স্বাধীনতা লাভ করেন।

 

ঈশ্বর আমাদের বাবা মায়ের মত তিনি চলমান ভিত্তিতে এইটি করছেন একটি শুভ আশাবাদের গানিতিক পদ্ধতির (optimization algorithm) ক্রমাগত অনুকরনে।  তিনি আমাদের পিতামাতার মতই এইটি করেন, শুধুমাত্র আমাদের উপকারের জন্য।

 

সংক্ষেপে বলতে গেলে, আত্মা তার নিজের জন্য কতটা স্বাধীনতা চায় তা নির্ধারণে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন । অন্য কথায় এটি বলতে গেলে, আত্মা তার কর্ম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্বাধীন, কিন্তু তার কর্মের ফল পেতে এটি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল।

 

আজকের আলোচনা এখানেই সমাপ্ত করা হলো।

ও৩ম্

নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায়।

চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ নমো,

জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।

[যজুর্বেদ ১৬।৩২]

 

নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।

 

আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ জগৎ কে সৃষ্টি করেছেন, ঈশ্বর নাকি অন্য কেউ? প্রকৃতি বা মূল প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য কি?

 

ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন ঠিক যেভাবে একজন প্রকৌশলী যন্ত্র তৈরি করেন। এইভাবে তিনি বিশ্বের 'ইঞ্জিনিয়ার'। কিন্তু একজন প্রকৌশলীর মতো, তিনি বিদ্যমান থাকা 'কাঁচামাল' বা প্রকৃতি (প্রায় বস্তু/শক্তি) ব্যবহার করেন জগত সৃষ্টির জন্য।

 

মহাবিস্ফোরন বা বিগ-ব্যাং (তত্ত্ব) এর কি হবে? এটি বলছে সবকিছু একটি মহাবিস্ফোরন দিয়ে শুরু হয়, তারপর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হচ্ছে।

 

বেদে প্রচুর সংখ্যক মন্ত্র রয়েছে যা এই ত্রৈতবাদ এর কথা আলোচনা করে। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় সকল মন্ত্রগুলোই ত্রৈতবাদকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করে।

 

এখানে দুটি মন্ত্র আছে যা এই বিষয়ের উপর আরো বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়ঃ

 

🔷 ঋগ্বেদ ১।১৬৪।২০

 

দুই চেতন সত্ত্বা ঈশ্বর এবং আত্মা একসঙ্গে বন্ধুর মতো সবসময় রয়েছেন। একইভাবে, অন্য সত্ত্বাটি (মূল প্রকৃতি) শাখাযুক্ত একটি বৃক্ষ হিসাবে বিদ্যমান। জীবন্ত সত্ত্বাগুলির মধ্যে আত্মাটি শাখার ফলগুলোর স্বাদ গ্রহন করে। অন্য সত্ত্বা ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে এসব থেকে দূরে থাকেন এবং তাই কখনও পার্থিব বিষয়ে আবিষ্ট হন না।

 

এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে এই তিনটি হলো শাশ্বত সত্ত্বা। এটি আরো দেখায় যে ঈশ্বর কখনো মানুষ বা অবতার হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন না কারণ এটি তাকে প্রকৃতির ফাঁদে ফেলবে।

 

🔷 যজুর্বেদ ৪০/৮

 

ঈশ্বর তার শাশ্বত প্রজা আত্মাকে তাঁর জ্ঞান প্রদান করেছেন যাতে তারা (আত্মাগণ) সর্বোত্তম সম্ভাব্য পদ্ধতিতে জগতকে (মূল প্রকৃতিকে) ব্যবহার করতে পারে।

 

🔷 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৫

 

প্রকৃতি, আত্মা এবং ঈশ্বর চিরন্তন। জগতের পরম উৎস বা কারণ হলেন তারা, এবং এই তিনটি কারণের (প্রকৃতি, আত্মা এবং ঈশ্বরের) কোন কারণ নেই। প্রকৃতিতে জড়িত হয়ে আত্মা ফাঁদে পতিত হয়। কিন্তু ঈশ্বর কখনও ফাঁদে পড়েন না এবং কখনও জড়িত হন না।

 

🔴 মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং ধ্বংস প্রক্রিয়া উল্লেখ আছে এমন কিছু বৈদিক মন্ত্র আপনি কি প্ৰদান করতে পারেন ?

 

🔷 ঋগ্বেদ ১০/১২৯/৭

 

হে মানব! ঈশ্বর বারংবার মহাবিশ্ব সৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ধ্বংস করেন। তিনি মহাবিশ্বের মালিক; তিনি সর্বত্র উপস্থিত এবং তিনি বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ করেন। শুধুমাত্র তাঁকেই উপাসনা করা যায় এবং অন্য কাউকে নয়।

 

🔷 ঋগবেদ ১০/১২৯/৩

 

এই সৃষ্টির আগে, সবকিছুই রাতের মত অন্ধকারে ছিল, এবং কিছুই বোধগম্য ছিল না। বস্তু / শক্তি বা মূল প্রকৃতি তার আদি বা প্রাথমিক রূপে ছিল এবং ঈশ্বরের অসীম বিস্তারের তুলনায় একটি বিন্দুতে সীমিত ছিলো। তারপর ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন আকস্মিক বেগ যা প্রকৃতিকে বিসৃত জগতে রূপান্তরিত করে যা আমরা তাঁর অসীম শক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করি।

 

🔷 ঋগ্বেদ ১০।১২১।১

 

সমস্ত মহাজাগতিক গঠনের ভিত্তি যেগুলো আলোকিত হয় এবং সমস্ত আকাশমণ্ডলীয় গঠন যেগুলি আমরা দেখি সকলের এক এবং একমাত্র প্রভু হলো প্রিয় ঈশ্বর । এমনকি জগত অস্তিত্বশীল হওয়ার আগে তিনি অস্তিত্বমান ছিলেন এবং তারপর তিনি সূর্য, পৃথিবী এবং অন্য সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন কেবলমাত্র সেই দয়াশীল ঈশ্বরেই আত্মসমর্পণ করি ও তাঁর উপাসনা করি এবং অন্য কারো প্রতি না করি।

 

🔷 যজুর্বেদ ৩১।২

 

একমাত্র তিনি নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ পুরুষ (জীবন্ত সত্ত্বা), তিনি অমর এবং সব আত্মার এবং প্রকৃতির অভিভাবক। তিনি জড় (জীবনহীন) প্রকৃতি থেকে ভিন্ন একই সাথে জীবাত্মাসমূহ থেকে ভিন্ন । একমাত্র তিনিই জগত সৃষ্টি করেছেন এবং জগত সৃষ্টি করবেন অতীতে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে।

 

 

 

 

🔴 প্রকৃতি বা মূল প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য কি?

 

⏩    বিস্তৃতভাবে বললে, মৌলিক প্রকৃতি এক এবং সমান। সৃষ্টির শুরু হওয়ার আগেই এটা এমন ছিলো। তারপর ঈশ্বর তাকে আলাদা করেন নিম্নলিখিত ভাবেঃ

 

🔸 সত্ত্ব - পবিত্রতা বা জ্ঞানের পরিচায়ক।

 

🔸 রজঃ- কর্মের পরিচায়ক।

 

🔸 তমঃ- অকর্মন্যতার পরিচায়ক।

 

সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ এগুলো আত্মার উপর প্রভাবকে নির্দেশ করে। এই তিনটি এইভাবে অস্তিত্বমান জগতের সুক্ষ্ম উপাদান গঠন করে। সমস্ত বস্তু, আবেগ, তথ্য, ইত্যাদি পরিবর্তিত হয় এই তিনটির বিভিন্ন মিশ্রন দ্বারা। যখন আমরা ঘুমে থাকি, তমঃ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করে । যখন আমরা কর্ম অন্বেষন করি, রাগ ইত্যাদি করি, রজঃ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করে । যখন আমরা শান্ত থাকি, আধ্যাত্মিক জ্ঞান অন্বেষনের প্রক্রিয়ায় থাকি, তখন আমরা সত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত থাকি ।

 

এই উপাদানগুলি বুদ্ধি, অহংবোধ, মন, ইন্দ্রিয়গ্রন্থি, কর্ম অঙ্গ, পাঁচটি উপাদান যথা আগুন, পৃথিবী, জল, বায়ু, আকাশ তৈরি করে। এই সকলগুলো তারপর যথাযথভাবে আত্মার সাথে একীভূত হয় জগতকে সৃষ্টি করার জন্য; যে জগতে আমরা দেখি, শুনি, অনুভূতি প্রাপ্ত হই, চিন্তা করি, মূল্যায়ন করি, ধারনা করি এবং সে অনুসারে কাজ করি।

 

একজন কল্যাণকামী এবং বিচ্ছিন্ন প্রকৌশলীর ন্যায় ঈশ্বর এই সকল থেকে আলাদা থাকেন।

 

🔴 সৃষ্টি করার জন্য কি কি জিনিস দরকার পরে?

 

⏩    সৃষ্টির জন্য তিনটি জিনিস দরকার রয়েছে।

 

ক্রিয়াশীল কারণ বা নিমিত্ত কারণ যার কার্যকলাপ কিছু তৈরী করে এবং যার নিষ্ক্রিয়তা কিছু তৈরী করে না।

 

বস্তুগত কারণ বা সাধারণ কারণ সেই 'কাঁচামাল' যেটা ছাড়া কোনো কিছুই তৈরি করা যায় না- মূল প্রকৃতি ।

 

উপাদান কারণ বা সৃষ্টিতে সাহায্যকারী উপকরনসমূহ।

 

 নিমিত্ত কারনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

 

প্রধান কার্যকরী কারণ বা প্রকৌশলী বা প্রধান স্থপতি, যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং ধ্বংস করেন। যেমনঃ ঈশ্বর।

 

ক্ষুদ্র কার্যকারী কারণ বা সৃষ্টির ব্যবহারকারী। যেমনঃ আত্মা । এটি ছাড়া, সৃষ্টিটি উদ্দেশ্যবিহীন।

 

বস্তুগত কারণ বা প্রকৃতি জড় এবং তাই এটি স্বয়ং পরিকল্পিত ভাবে সংগঠিত বা অসংগঠিত হতে অক্ষম। এ জন্য এর একজন সংগঠক বা কার্যকর কারণ প্রয়োজন।

 

উপাদান কারণে সময় এবং স্থান (time and space) অন্তর্ভুক্ত।

 

এটা যেকোন সৃষ্টির জন্য সত্য যেটা ঈশ্বর দ্বারা বা আমাদের দ্বারা পৃথিবীতে ঘটে থাকে।

 

🔴 যে উপায়ে একটি মাকড়সা নিজের ভিতরে থাকা বস্তু দিয়ে জাল তৈরি করে; ঈশ্বর কি নিজের থেকে এই বিশ্বকে তৈরী করতে পারেন না?

 

⏩ প্রদত্ত উদাহরণটিতে ঈশ্বর কি করেন তা যথাযথভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু উপসংহারটি ভুল।

 

মাকড়সা জাল তৈরির জন্য তার শরীরটি ব্যবহার করে। জাল তৈরির উপাদান ইতিমধ্যে তার শরীরের মধ্যে উপস্থিত আছে । যদি তার শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে জাল তৈরি করতে সক্ষম হবে না। অনুরূপভাবে, ঈশ্বর মূল প্রকৃতি থেকে বিশ্ব সৃষ্টি করেন যা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের মধ্যে বিদ্যমান।

 

🔴 যেহেতু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তিনি কি নিজে থেকে বিশ্বকে তৈরী করতে পারেন না? এই জগত স্বয়ং ঈশ্বরের একটি মায়াময় রূপ হতে পারে।

 

⏩ সর্বশক্তিমান বলতে এটা বোঝায় না যে, ঈশ্বর যে কোন কিছু করবেন। তিনি শুধুমাত্র সেটিই করেন যা তাঁর করা উচিত, এবং তিনি তা করতে পারেন কারো সহায়তা ছাড়া। আপনিও যে কোনো কিছু করতে পারেন, কিন্তু নিজে শক্তির প্রমান করতে আপনি কি আপনার কাপড় ছিঁড়বেন বা কাঁদা খাবেন? এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে পাগল বলা হয় এবং পাগলা গারদে আশ্রয় দেওয়া হয়।

 

অনুরূপভাবে, ঈশ্বর সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং তাই তিনি শুধুমাত্র উত্তম কাজটি করেন।

ঈশ্বর বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করেন। তাই ঈশ্বর বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেন না। এটি তার বৈশিষ্ট্য বিরুদ্ধ।

 

যদি জগৎ ঈশ্বর থেকে সৃষ্টি হতো, তবে এটি অবশ্যই ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমি কাদামাটির একটি মূর্তি নির্মাণ করি, তবে মূর্তিটি কাদামাটির বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করবে। কিন্তু বিশ্বজগত জড় এবং ঈশ্বর চেতন। বিশ্বজগত মূক এবং ঈশ্বর পরম বুদ্ধিমান । ঈশ্বর সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, বিশ্বের বস্তুসমূহ মহাশূণ্যে সীমিত । ঈশ্বর অপরিবর্তনীয়; পার্থিব বস্তুগুলি পরিবর্তিত হচ্ছে।

 

এভাবে, ঈশ্বর আত্মার কল্যাণের জন্য জগতকে সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এর জন্য শাশ্বত মূল প্রকৃতি ব্যবহার করেন।

এই বিষয়টিকে মূল্যায়ণের মাধ্যমে ধারণা করা যেতে পারে। আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের এই চমৎকার শরীর আছে, এক কথায় বিস্ময়কর বাস্তুতন্ত্র (eco-system), এবং আমাদের জীবনকে ধারণের জন্য এত ভালো একটা পরিবেশ। সুতরাং, এই সকল সৃষ্টি আমাদের জন্য করা হয়েছে এবং কোন বিষয়ের মত আমাদের ধারণ করছে। আপনি যতই শারীরিক, পরিবেশগত, জৈবিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন করবেন ততই আপনি এই বিষয়টিকে প্রশংসা করবেন।

 

এইটি একটি সূত্র দেয় যে, সমগ্র সৃষ্টি আমাদের সাহায্য করছে কিছু উপায়ে বা নানা উপায়ে আরো অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে আমরা উপসংহারে আসতে পারি যে, আমাদের (আত্মার) কিছু করার ক্ষমতা সীমিত। আমাদের অধিকতর সুখ লাভ করতে হলে, আমাদের সেগুলো অর্জন করার জন্য পদ্ধতির প্রয়োজন । মন এবং শরীরের মত শারীরিক সত্ত্বা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। তাই ঈশ্বর এই সৃষ্টিকে তৈরী করেছেন আমাদেরকে অধিক হতে অধিকতর সুখ প্রাপ্তিতে সহায়তা করার জন্য, আমাদের প্রতি পথসমূহ প্রদান করেছেন যাতে আমরা সেই পথে প্রচেষ্টা চালাতে পারি। সৃষ্টি ছাড়া, আমরা স্রেফ অচল হয়ে পড়ে থাকতাম।

 

ঈশ্বর কি প্রকৃতিও তৈরি করেননি?

 

️ না, মূল প্রকৃতি বা 'প্রকৃতি সৃষ্টির কাঁচামাল' ঈশ্বরের ন্যায় শাশ্বত (অর্থাৎ যার শুরুও নেই এবং শেষও নেই)। শাশ্বত হওয়ায়, ঈশ্বর বা প্রকৃতির সূচনা বিন্দু হওয়ার বা ধ্বংস হওয়ার কোন কারণ নেই।

 

ঈশ্বর এবং প্রকৃতি ছাড়া শাশ্বত আর কি ?

 

️ নিজে ধারনা করুন! আপনি এটা খুব ভালভাবে জানেন, কারণ এটি ঠিক সেটিই, যেটা সব সময় আপনার সাথে থাকে।

 

এটা আপনি নিজে! তৃতীয় শ্বাশত সত্ত্বাটি হলো আত্মা বা জীব।

 

এটা সবচেয়ে অর্ন্তজ্ঞানলব্ধ বিষয় এবং যুক্তিপূর্ণ। আপনি নিজেকে জানেন যে, আপনি (আত্মা) অস্তিত্বমান। আপনি এও জানেন, আপনার চারপাশে বিদ্যমান এই অস্তিত্বমান অচেতন বিশ্ব আপনি না। এর মধ্যে রয়েছে পদার্থ এবং শক্তি, এই দুটোই সংরক্ষিত থাকে এবং শুধুমাত্র পরিবর্তনশীল গঠনে (মূল প্রকৃতি)।  আপনি জানেন যে, আপনার থেকে পৃথক একটি সত্ত্বা (ঈশ্বর) দ্বারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই তিনটি শাশ্বত সত্ত্বার এই ধারণা সবচেয়ে মৌলিক এবং আমাদের সকলের দ্বারা অন্তর্নিহীতভাবে পরিচিত। অন্যান্য তত্ত্বগুলি আমাদের প্রতি দাবী করে সতর্ক অনুমান করতে এবং জ্ঞাত তথ্যাদির বিচারের মাধ্যমে অজ্ঞাত বিষয়ের মূল্যায়নের করতে।

 

বিশ্বনমো॑ ম॒হদ্ভ্যো॒ নমো॑ অর্ভ॒কেভ্যো॒ ।

নমো॒ যুব॑ভ্যো॒ নম॑ আশি॒নেভ্যঃ॑ ॥

 

(ঋগ্বেদ ১.২৭.১৩)

 

ভাবার্থ :- প্রসিদ্ধ বিদ্বানগণকে নমস্কার, শিক্ষানবিসদের নমস্কার, যুবগণকে নমস্কার, সর্ববিদ্যাবিশারদ বৃদ্ধগণকে নমস্কার করি।

আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?ঈশ্বর কি প্রকৃতি ও আত্মা সৃষ্টি করতে পারেন?

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল ?

 

আমি ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা করেছি যে ঈশ্বর এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন তাই আমরা (আত্মা) প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করতে পারি, এবং সুখ অর্জন করতে চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন করা যায়: জগত সৃষ্টি না করলে সেক্ষেত্রে তাঁর উদ্দেশ্য কি হতে পারত ?

 

তিনি যদি বিশ্ব সৃষ্টি না করতেন, তিনি আনন্দে থাকতে পারতেন। এমনকি আত্মা বেদনার ঝামেলা জটিলতা থেকে এবং আনন্দ থেকে দূরে থাকতে পারত।

 

এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল তারাই ধারন করে যারা অলস অথবা যারা তাদের কর্মের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চায় না। যারা প্রচেষ্টা করে এবং অধিকার করার সাহস রাখে এ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের নয়। বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি সর্বোত্তম প্রচেষ্টার মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করেন।

 

ঈশ্বর অলস নয় বরং সবচেয়ে সক্রিয়। এ ছাড়া তার করুনা, যত্ন, জ্ঞান, সর্বব্যাপীত্ব প্রভৃতির মত গুণাবলিগুলো অর্থহীন হয়ে পড়তো যদি পৃথিবী তৈরি না হতো। এভাবেই ঈশ্বর তাঁর অস্তিত্বকে তুলে ধরেছেন বিশ্বজগত বা মহাবিশ্বের সৃষ্টি, ব্যবস্থাপনা এবং ধ্বংসের মাধ্যমে । আমাদেরও উচিত ঐ সকল কর্মের মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্বকে প্রতিপাদন (justify) করা যে কর্ম পরিত্রাণ বা পরম সুখ অর্জন করার মাধ্যমে (ঈশ্বরের) সৃষ্টিকার্যে আমাদের ভুমিকাকে প্রতিপাদন করে।

 

ঠিক যেভাবে চোখ দেখার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করে কিন্তু জগত মধ্যে কোনকিছু না দেখলে তা অদরকারী হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে, ঈশ্বর কর্তৃক চক্রাকারে পরিচালিত জগতের সৃষ্টি, রক্ষনাবেক্ষন ও ধ্বংস ছাড়া ঈশ্বর, আত্মা ও মূল প্রকৃতির সকল বৈশিষ্ট্যগুলিও অদরকারী হয়ে পড়বে। সুতরাং, সৃষ্টিকার্য হলো ঈশ্বরের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এবং আমাদের উচিত আমাদের নিজস্ব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা!

 

তা হলে ঈশ্বর তার অস্তিত্ব প্রতিপাদনের জন্য সৃষ্টি করেন, এর অর্থ হলো ঈশ্বরের নিজস্ব এজেন্ডা আছে!

 

ঈশ্বর তাঁর বৈশিষ্ট্য নয় এমন কিছু করেন না । স্বার্থপরতা ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য নয় তাই তিনি স্বার্থপর হতে পারেন না। আত্মার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে। আত্মা সচেতন এবং অস্তিত্বমান কিন্তু সুখরহিত । শুধুমাত্র কর্ম দ্বারা আত্মা সুখ অর্জন করতে পারে ।

 

ঈশ্বর যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি না করেন, তবে আত্মা কর্ম সম্পাদন করতে পারে না, যাতে করে তার সুখ বৃদ্ধি হয়। এইভাবে ঈশ্বর মহাবিশ্বের সাথে আত্মাকে এমন একটি পদ্ধতিতে সংবদ্ধ করে যে, কর্মফল সকল সময়ের জন্য যথাযথভাবে ধারন করে । এখন আত্মা, তার কর্ম অনুসারে, তার সুখ বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারেন।

 

এটি একটি মাইক্রোপ্রসেসরের মত যেটা কাজ করতে পারে শুধুমাত্র যখন এটিকে একটি শক্তি উৎস এবং মাদারবোর্ডের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়। একইভাবে ঈশ্বর এই কম্পিউটার সিস্টেম তথা মহাবিশ্ব তৈরি করেন যাতে মাইক্রোপ্রসেসর তথা আত্মা সুখ অর্জনের জন্য তার কার্য সম্পাদন করতে পারে ও এর শক্তি প্রকাশ করতে পারে।

 

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল সমস্ত আত্মার জন্য সুখ প্রদান করা।

 

যদি এইটি ঘটনা হয়, তাহলে কেন ঈশ্বর আরও সৃষ্টি বন্ধ করেন না এবং চিরকালের জন্য সকল আত্মাকে পরম সুখ (মোক্ষ)দান করেন না?

 

এই প্রশ্নটির উত্তর ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তবুও আরও একবার আলোচনা করছি।

 

যদি ঈশ্বর এখন সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করেন, তাহলে তিনি কিভাবে আত্মার কর্মের যথাযথ ফল প্রদান করতে সক্ষম হবেন, যে কর্মফল তারা আগের সৃষ্টি হতে এখন পর্যন্ত বহন করে আসছে ?

 

সুতরাং যদি ঈশ্বর, সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেন, এটা তাঁকে ন্যায়বিরুদ্ধ করবে। কিছু আত্মা অন্য আত্মাদের তুলনায় যথাযথ প্রচেষ্টা ছাড়া পরিত্রাণ অর্জন করবে। যেহেতু বৈদিক ব্যবস্থায় এককালীন সৃষ্টির পর কোন স্থায়ী জাহান্নাম বা স্বর্গ নেই, এটা (সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি বন্ধ করাটা) ঈশ্বরের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য 'ন্যায়বিচারের অপরিবর্তনীয়তা বৈশিষ্ট্যের জন্য উপহাস তৈরী করবে। ঈশ্বর এর শাসন সম্পূর্ণ যোগ্যতাভিত্তিক এবং এখানে কোন ভর্তুকি বা ছাড় বা শর্টকাট নেই। এই সকল দলগুলো যারা এই ধরনের বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে, তারা আসলে ভুল পথে চালনা করে এবং জ্ঞানীদের দ্বারা অবিলম্বে তাদের প্রত্যাখ্যাত হওয়া উচিত।ঈশ্বর যেহেতু সর্বশক্তিমান, কেন তিনি তবে অন্য মূল কারণ (আত্মা এবং প্রকৃতি) তৈরি করতে পারেন না ?

 

আমরা ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি, সর্বশক্তিমান অর্থ এটা বোঝায় না যে ঈশ্বর একজন পাগলের মত কাজ করবেন। এছাড়াও, এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বর নিজেকে হত্যা করতে পারেন, আরেকটি ঈশ্বর তৈরি করতে পারেন, নিজে জড় বস্তুতে পরিণত হতে পারেন, অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠেন, চিৎকার করে বা ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করেন, যুদ্ধ করেন বা অপরাধী হন ইত্যাদি । সবচেয়ে বুদ্ধিমান হওয়ায় ঈশ্বর শুধুমাত্র তাঁর স্বাভাবিক ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজ করেন এবং তিনি তা সর্বোচ্চ সম্ভাব্য পদ্ধতিতে করেন কারণ 'পরিপূর্ণতা' গুনটিও আরেকটি ধর্ম বা ঈশ্বরীয় বৈশিষ্ট্য। তিনি তাঁর কর্ম অন্য কারো সাহায্য ছাড়া সম্পাদন করতে পারেন। এই তার সর্বশক্তিপরায়ণতা।

তাই ঈশ্বর, আত্মা ও প্রকৃতি তৈরি করেন না। তারা ইতিমধ্যে বিদ্যমান। তিনি একসঙ্গে তাদের পরিচালনা করেন যাতে, আত্মার সর্বোত্তম স্বার্থ পরিবেশন করা যায়। এছাড়াও, যেহেতু ঈশ্বর ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ নিখুঁত তিনি কখনই নতুন কিছু তৈরি করার জন্য একটি নতুন চিন্তা বা নতুন ধারণা আনেন না কারণ সার্বিকভাবে বুদ্ধিমান ঈশ্বরের জন্য নতুন বলে কিছু নেই। অন্য কথায়, ঈশ্বর বিকশিত হন না কিন্তু সব সময় নিখুঁত থাকেন ।

 

কিছু দলগোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, হঠাৎ করেই স্রষ্টার /গডের একটি নতুন সৃষ্টির অনুপ্রেরণা ও ধারণা আসে, এই তত্বটি পরোক্ষভাবে বোঝায় যে তিনি হঠাৎ শূণ্য থেকে আবির্ভুত হয়েছেন। এই ধারণাগুলো ইশ্বরের জন্য বিরাট অপমান, যিনি সর্বদা নিখুঁত । অন্য কথায়, যদি ঈশ্বর কিছু করেন, তার মানে তিনি সর্বদা তা করবেন এবং সর্বদা এটি করেছেন।

 

এছাড়াও, যারা মনে করে যে ঈশ্বর আত্মার সৃষ্টি করেন, তারা আসলে ঈশ্বরকে একটি মানসিক বিকারগ্রস্থ নাটকীয় প্রেমিকের মধ্যে রূপান্তরিত করেন, যে নিজেকে খুশি করতে এমন অনর্থক কাজগুলি করেন। অধিকন্তু, যদি এটি ঘটেও থাকে তবে সমগ্র সৃষ্টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যহীনতায় পরিণত হয় কারণ তিনি হয়তো আগামীকাল একই ভাবে আত্মাকেও ধ্বংস করার ইচ্ছা করতে পারেন।

 

সৃষ্টি এবং ঈশ্বরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো শুধুমাত্র এটি বোঝায় যখন আত্মা এবং প্রকৃতি তার সাথে থাকে, সবসময় এবং তখনই তিনি আত্মাকে সাহায্য করেন।

 

শুধু এটা ভাবুন । দয়ালু হওয়া একটি ভাল গুন । কিন্তু যদি বিশ্বে কোন মানুষ না থাকে, তাহলে আপনি কার প্রতি দয়া করবেন ? এখন ধরুন একদিনের জন্য আপনাকে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতে বাধ্য করা হলো । আপনার উদারতা দেখানোর জন্য, আপনি কি একটি পুতুল তৈরি করবেন এবং তারপর এটির প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন? প্রকৃতপক্ষে, শিশুরা তাই করে। কিন্তু যদি আপনি একজন পরিনত ব্যক্তি হিসাবে এটি করেন, মানুষ আপনার জন্য মানসিক চিকিৎসার সুপারিশ করবে। তাই বিবেচনা করুন সবচেয়ে বুদ্ধিমান সত্তা ঈশ্বরের কি এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হতে পারে?

 

এইটি খ্রিস্টধর্ম ও অন্য আব্রাহামিকদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন দলগোষ্ঠীর জন্য একটি বিরাট (তাত্বিক) ফাঁক।

 

শারিরীক আকৃতিসম্পন্ন মানুষের সন্তানদেরও একটি শারিরীক আকার আছে। যদি তারা নিরাকার হত, তাহলে তাদের সন্তানদেরও নিরাকার হতে হবে। যেহেতু আমাদের আকার আছে, তাহলে নিশ্চয়ই ঈশ্বরেরও একটি আকার আছে।

 

তিনি বিশ্বের 'ইঞ্জিনিয়ার' কিন্তু বিশ্বের 'কাঁচা মাল' না।

 

আলফ্রেড নোবেল ডায়নামাইট তৈরী করেছেন, তার মানে এই নয় যে তিনি ডায়নামাইটের মত দেখতে!

 

বিশ্বের জন্য 'কাঁচামাল' হলো মূল প্রকৃতি, এবং এই মূল প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য হল, এটি আকৃতি সম্পন্ন। তাই, বিশ্বের আকৃতি আছে (কারন এই বিশ্ব মূল প্রকৃতি হতে সৃষ্ট)।

 

ঈশ্বর কি কারণ ছাড়া কাজ করতে পারেন না?

 

না, কারণ যিনি অস্তিত্বমান নেই তিনি হঠাৎ অস্তিত্বমান হতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলে যে আমি একজন বন্ধ্যা মহিলার এক সন্তানের বিয়ে দেখেছি, আপনি বলবেন যে আমি পাগল। কারণ যদি তার একটি শিশু থাকে তবে সে বন্ধ্যা হতে পারে না এবং যদি সে বন্ধ্যা হয়, তবে তার কোন সন্তান থাকতে পারে না। একইভাবে, কারণ ছাড়া, কোনও কর্ম বা প্রভাব ঘটতে পারে না। প্রতিটি প্রভাবের একটি কারণ থাকতে হবে।

যদি কেউ বলেন যে, আমি অস্তিত্বমান নই, কিন্তু আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি! বাগানে কোন ফুল ছিল না, কিন্তু ফুলের মালা ছিল সুন্দর! আমি কথা বলতে পারি না, কিন্তু আমি মন্ত্রমুগ্ধ বক্তৃতা দিতে পারি! এই ধরনের কথাবার্তা অর্থহীন!

 

যদি সবকিছুর একটি কারণ থাকে, তাহলে কারণের কারণটি কি (what is the cause of the cause)?

 

সংখ্যার দর্শন ১/৬৭ বলে: "মূল কারণটির আর কোন কারণ হতে পারে না।" এ কারণে এটিকে শ্বাশত কারণ বলা হয়।

 

সুতরাং, তিনটি সত্ত্বা সৃষ্টিকর্তা, কাঁচামাল, আনুষাঙ্গিক উপকরন এবং উদ্দেশ্য কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। একই ভাবে জগত সৃষ্টির ব্যাপারেও এটা সত্য এবং তাই ঈশ্বর, আত্মা ও মূল প্রকৃতি এই তিনটি সৃষ্টির শাশ্বত মূল কারণ।

 

এই সকলকিছু শূন্য থেকে শুরু হয় এবং শেষ পরিণামে শূন্যে শেষ হয় । যাকিছুই অস্তিত্বমান হোক না কেন শুরু হয় শূন্য থেকে এবং সবশেষে শূন্যে পরিনত হয়।

 

 শূন্য বলতে একটি বিন্দুকেও বোঝানো হয়। যদি এই অর্থটি নেওয়া হয় তবে এটি সঠিক। কারণ যখন সমগ্র বিচ্ছিন্ন বিশ্ব এবং সে অবস্থা থেকে প্রাথমিক গঠনের দিকে ফিরে আসে, এটি একটি বিন্দুই হয় ।

 

কিন্তু যদি শূন্য মানে কিছুই নেই অবস্থা বোঝায় তাহলে, এই অর্থটি ভুল । কারণ শূন্য হলো জড় এবং জীবনহীন । শূন্য বা জিরো হতে চেতনা কীভাবে আসতে পারে?

 

তাছাড়াও, যিনি শূন্যকে জানেন এমন কিছু শূন্য বা 'কিছুই নেই' এমনটা হতে পারে না ।

 

সুতরাং, যারা এই ধরনের অকার্যকর যুক্তি প্রদান করে মূলত তারা বর্তমান বাস্তবতা থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন, এই কথাটি অস্বীকার করা যাবে না। এমনকি এক্সট্রাপোলেশন (জ্ঞাত তথ্যাদির বিচারের মাধ্যমে অজ্ঞাত কিছুর মূল্য বিচার করা) হতে পারে এমন ঘটনাগুলির জন্য যেটি অস্তিত্বমান আছে। কিন্তু এ ধরনের বাতিল-প্রেমীরা যেটা স্পষ্টভাবে বিদ্যমান তা অস্বীকার করে, তারপরই কেবল তাদের কল্পনা থেকে এক্সট্রাপোলেট করে যদি আমরা ইতিহাসের দিকে নজর দিই তাহলে দেখি নজর দিই তাহলে দেখি যে, বাস্তবতা থেকে মুখ লুকিয়ে থাকার এই অস্ট্রিচ পাখির মত আচরন আমাদের সমাজ ও বিশ্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এইটি সমাজের প্রতি দায়িত্বহীনতার দিকে আমাদের ধাবিত করেছে।

 

যখন আক্রমণকারীরা ভারত আক্রমণ করছিল, তখন এই ধরনের মতাদর্শের বিশ্বাসীরা জাতিকে প্রতিরক্ষা করতে অস্বীকার করেছিলো, এই চিন্তার মাধ্যমে নিজেদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলো যে, 'এই সকলই শূন্য, এবং তাই তাদের কোন কর্তব্য নেই।' 'শূণ্যবাদ' পলায়নপর এবং অলস ব্যক্তিদের জন্য একটি নিশ্চিত রেসিপি বা ব্যবস্থাপত্র । নিয়োজিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিগন যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, তারা সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করে।

 

কোনকিছু অনস্তিত্বমান অবস্থা থেকেও আসতে পারে। যেমন, বীজে কোনো গাছ থাকে না । কিন্তু জল দিলে পরে, বীজ থেকে গাছ আসে।

 

যা কিছু বীজ থেকে বেরিয়ে আসে সেটা আগে থেকেই বীজের মধ্যে ছিল। জল, আলো ইত্যাদির সাথে ক্রিয়া করার পরই এটি শুধুমাত্র পরিবর্তিত হয়ে যায় । এটি অনস্তিত্বমান কোনো কিছু থেকে বেরিয়ে আসে না। যারা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছে তারা জানবে যে বস্তু শক্তি সংরক্ষিত এবং অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে না। সুতরাং এই যুক্তিটি ভুল এবং অবৈজ্ঞানিক।

 

কিছুই স্থায়ী নয়। সবকিছু অস্থায়ী। যা কিছু অস্তিত্বমান তা ধ্বংস হবে। অতএব, আত্মা, ঈশ্বর, মূল প্রকৃতিও শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হবে।

 

সবকিছুই যদি অস্থায়ী হয়, তাহলেতো ধ্বংসও অস্থায়ী হতে হবে। যদি যা কিছুই বিদ্যমান তা ধ্বংস হয়, তাহলে এমনকি এই ধ্বংসেরও উচিত ধ্বংস হওয়া।

 

বাস্তবে, শারীরিক সত্ত্বার শুধুমাত্র গঠনটাই পরিবর্তিত হয়। কোনো কিছুই, না তৈরি হয়, না ধ্বংস হয়। যারা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন তারা এইটি ভালভাবে বুঝতে পারেন।

 

সৃষ্টির কোন স্রষ্টা নেই। বস্তুর যথেচ্ছ বা এলোমেলো সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটা ঘটেছে।

 

যদি সৃষ্টিকার্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে থাকে, তাহলে ধ্বংস কিভাবে ঘটে ? এবং যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে সৃষ্টি কিভাবে ঘটে ? যদি উভয়ই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটতে থাকে, তবে সৃষ্টি ও ধ্বংসের চক্র এবং সুসমন্বিত পরিকল্পনা কীভাবে পরিচালিত হয়?

 

যদি আপনি বলেন যে, যখন সুনির্দিষ্ট শর্ত বিদ্যমান, তখন সৃষ্টি হয় এবং যখন অন্যান্য নির্দিষ্ট শর্ত বিদ্যমান, তখন ধ্বংস হয়, তারপর আপনি স্বীকার করেন যে বাহ্যিক বেশ কিছু শর্ত আছে যেটা সৃষ্টি বা ধ্বংস ঘটায়। এইভাবে, আপনি ভিন্ন ভাষায় স্বীকার করেন যে, যখন সৃষ্টি বা ধ্বংস ঘটে তখন কোনোকিছু শর্তগুলোকে পরিচালিত করে। অন্য কথায়, আপনি সম্মত হন যে কেউ না কেউ এই বিধানসমূহের বা সৃষ্টি ও ধ্বংসের শর্তসমূহের পরিচালনা নিশ্চিত করে। এইটিকেই আমরা 'ঈশ্বর' বলি। তাই আপনি ভিন্ন ভাষায় একই জিনিস বলছেন কারণ যেকোন কারনে ঈশ্বর শব্দের ব্যবহারে আপনার 'অ্যালার্জি আছে।

একটি সাধারন সাইকেল তৈরি করতে, আপনাকে শত শত উপাদান তৈরির পরিকল্পনা করতে হয়, আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন, তারপর সাইকেলের পরিকল্পনা এবং ডিজাইন করেন। সুতরাং যখন আমরা বলি, এমন একটি জটিল এবং অত্যন্ত নিখুঁত বিশ্ব যা আমরা দেখি তার পিছনে একটি মহান পরিকল্পনা আছে, তাতে আপত্তিটা কোথায়?

 

আপনি কি এমন এক উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারেন যেখানে কারো দ্বারা সৃষ্ট না হয়েই কোন কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরী হয়েছে?

 

ঈশ্বরের পথপ্রদর্শন ছাড়া জড় পরমানুগুলোর জানার উপায় নেই যে তাদেরকে এমনভাবে এই সকল জায়গাতে একত্রিত হতে হবে, রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি প্রবর্তন করতে হবে, সমন্বিত হতে হবে এবং তারপরই শরীরের একটি সাধারন অঙ্গ 'হাত' এর মত জটিল কিছু তৈরি হবে । মানুষের মস্তিষ্কের মত মেশিনগুলির কথা ভুলে যান যার কাজ এখনো সব বোঝা যায় নি ! তারপরও আমরা দাবি করি এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটেছে ! এইটি শিশুসুলভ কথাবার্তা ছাড়া অন্য কিছুই না।

 

আলোচনা সমাপ্তম্


 

 

আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ

আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ  Our greater Mymensingh  শ্রী ইমন চন্দ্র পন্ডিত