বিদায় বটবৃক্ষ অগাধ শ্রদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান
(বীর মুক্তিযোদ্ধা)
কিংবদন্তী সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এর মৃত্যুতে
আমরা শোকাহত !!!!
কলেজ শিক্ষক থেকে মন্ত্রী !
বিদায়! স্বাধীন বাংলাদেশের পাঁচ দশকের দাপুটে এক রাজনীতিবিদ। বুক ভরা সাহস, মননে তেজ আর আত্মা ভরা ছিলো কমিটমেন্ট!
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ অঞ্চলের রাজনীতির এক প্রাণপুরুষ ছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকালিন কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া এবং অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নাম ছিলো মানুষের মুখে মুখে। ইতিহাসে তারা থাকবেন স্বর্ণাক্ষরে।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয়ের তুরার ঢালুতে ইয়ুথ ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন এই টগবগে ছাত্রনেতা। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে ঐতিহাসিক মিছিলে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তি এই নেতা। শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।
১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর মিন্টু। তার স্মরণে ওই বছর প্রতিষ্ঠা করা হয় আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজ। মতিউর রহমান জামালপুরের নান্দিনা কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছর তিনি কলেজ থেকে কোনো ধরণে পারিশ্রমিক নেননি। উদ্দেশ্য ছিলো শহীদ মিন্টুর নামে কলেজটিকে প্রতিষ্ঠিত করা।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ পৌরসভার তিন বারের নির্বাচিত মেয়র।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মতিউর রহমানকে নিয়ে একটি দৈনিকে লিখেছিলেন, তার গায়ের রং তেমন উজ্জ্বল না হলেও মুক্তিযুদ্ধে মতিউরের বুকের রং ছিলো সমুজ্জ্বল।
স্বাধীরতার পরই দায়িত্ব পান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের। এরপর দুই বার সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে টানা ১৮ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে জঙ্গিরা বোমা হামলা করে। সেই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে নিমর্ম নির্যাতন করা হয়।
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্যে গর্জে উঠেছিলেন এই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তিনি ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনকে ময়মনসিংহে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলেন।
শেখ হাসিনার মুক্তির ইস্যুতে ২০০৮ সালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি অনুষ্ঠানের প্রটোকল ভেঙে প্রথম দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মুক্তি ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন ছাড়া এই সভায় কোনো আলোচনা হবে না। আঙুল তুলেছিলেন তখনকার সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দিকে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বক্তব্যের পরই ঘুরে যায় সভার পরিবেশ। শেখ হাসিনার মুক্তির গতি দ্রুত ত্বরান্বিত হতে থাকে ওই সভা থেকেই।
মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বার বার গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন বহু বছর। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দুই বার ২৩ মাস জেল খাটেন৷
দীর্ঘ সময়ে বুকের উত্তাপে আগলে রেখেছেন ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ২০১৪ সালে দায়িত্ব পান ধর্ম মন্ত্রীর। তার মন্ত্রীত্ব লাভের মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহবাসী প্রথম পুর্ণ মন্ত্রীত্বের স্বাদ পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন।
৮১ বছর বয়সে নিভে গেলো লড়াকু ও পোড় খাওয়া বর্ণিল রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের জীবন প্রদীপ।
No comments:
Post a Comment